আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভাল আছেন? আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহ্ তাআলার মেহেরবানীতে আমিও ভালো আছি।
আজকে আমি যে গল্পটি শেয়ার করব সেটা একটি বাস্তব গল্প। গল্পটা শোনার পর হয়তো অনেকের চোখে পানি চলে আসতে পারে।
আমাদের চারপাশে কিছু কিছু সময় এমন ঘটনা ঘটে যা সিনেমার গল্প কে হার মানিয়ে দেয়।আবার কিছু কিছু সময় বিশ্বাস করতে সমস্যা হয় ঘটনাটি আদৌ সত্য কিনা। হ্যাঁ বন্ধুরা আজকের গল্পটা এ রকমই কিছু একটা নিয়ে।
আজকের গল্পতে আমরা চলে যাচ্ছি কুমিল্লা। কুমিল্লায় হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান, বাবা-মা কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করায়। কিন্তু ভাগ্য সবসময় সহায় থাকে না। বাবা-মার স্বপ্ন ছিল, ছেলে মানুষের মত মানুষ হলে তাদের কষ্ট দূর হয়ে যাবে। কিন্তু ভাগ্য এক উল্টো খেলা খেলতে থাকে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর বাবা মাকে ভুলে যায়। এক বড়লোক মেয়েকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে থাকে।
Image source
আর বাবা-মা তাদের ভাঙ্গা ঘরে থাকতেন। একদিন তার মা অসুস্থ হয় তাই বাবা শহরে ছেলের খোজে রওনা হন। ছেলের অফিসের গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
যেহেতু সিসি ক্যামেরার যুগ, ছেলে সিসি ক্যামেরা তে তার বাবাকে দেখতে পারে। কিন্তু বাবা ভিতরে ঢুকলে তার মান সম্মান নষ্ট হবে এটা ভেবে দারোয়ানকে ফোন করে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিতে নিষেধ করে।
দারোয়ান বৃদ্ধ লোকটিকে জিজ্ঞেস করেন, উনি আপনার কি হন? যখন বৃদ্ধ লোকটি বলে, উনি আমার ছেলে।
Image source
দারোয়ান বৃদ্ধ লোকটিকে বলে, উনি আপনার ছেলে? উনি তো মানুষ নয়, উনি অমানুষ। আপনাকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। বৃদ্ধ বাবা বুকভরা কষ্ট নিয়ে ফিরে আসেন।
সেই ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা একদিন জুমার নামাজে যায়। ইমাম সাহেব বাবা মাকে নিয়ে একটা খুতবা বলছিলেন। তখন ছেলেটির বাবা-মার কথা মনে পড়ে যায়।নামাজ শেষে বাড়িতে আসে এবং তার স্ত্রীকে বলে আমি আমার বাবা মাকে দেখতে যাব।
স্ত্রী বলে তোমার বাবা মাকে দেখতে যাবে সেটা ভালো কথা, তুমি তো মানুষ নও তুমি অমানুষ নিজের বাবা-মাকে কষ্টে রেখেছো। ছেলেটি কাঁদতে থাকে এবং সেদিনই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ট্রেন থেকে নামতে নামতে রাত হয়ে যায় অনেক। ছেলেটি সেখানকার একজন ট্রাফিক পুলিশকে বলেন একটা রিক্সার ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু তাকে পুলিশ বলে এতো রাতে রিক্সা পাওয়া যাবে না। হেঁটে হেঁটে যেতে হবে তাকে। ছেলেটা বারবার বলার ফলে,ট্রাফিক পুলিশকে বলে ঠিক আছে একজন বৃদ্ধ লোক রাত্রে রিক্সা নিয়ে আসে, আজকে যদি আসে তাহলে তার রিক্সায় তুমি যেতে পারবে।
ঠিক তখনই সে বৃদ্ধ লোকটি রিক্সা নিয়ে আসেন, কিন্তু সেই বৃদ্ধা এর মুখ ছিল ঢাকা। অর্থাৎ গামছা মোড়ানো যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে।
ছেলেটা তখন রিক্সায় ওঠে,রিক্সাওয়ালা ছেলেটাকে চিনতে পারে। কিছুদুর যাওয়ার পর লোকটি আর রিকশা চালাতে পারছে না। এবার পিছন থেকে ওই ছেলেটা বারবার ধমক দিচ্ছে, রিকশা চালাতে পারো না কেন রিক্সা নিয়ে বের হয়েছো?
কিন্তু কোন কথাতে কাজ হচ্ছে না,একপর্যায়ে ছেলেটা রিক্সা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে একটা থাপ্পর মারে। এখন রিক্সাওয়ালা নিজের মুখটা বের করে। ছেলেটা তখন কাঁদতে শুরু করে এবং সেই রিকশাওয়ালা কে জড়িয়ে ধরে।
কারণ রিক্সাওয়ালা ছিল ছেলেটার সেই বৃদ্ধ বাবা। এবার ছেলেটা তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে তুমি রাত্রিবেলা কেন রিক্সা চালাও।
সেই রিকশাওয়ালা তখন বলে সবাই জানে আমার ছেলে শহরে মস্ত বড় চাকরি করে, যদি দিনের বেলায় সবার সামনে আমি রিক্সা চালাই তাহলে তোমার মান সম্মান নষ্ট হবে, তাই আমি রাত্রিবেলা রিক্সা চালাই। রাতের বেলায় যদি কেউ মুখ দেখে নেয় তাই মুখ ঢেকে রিক্সা চালাই।
এবার ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে তার বাবার সাথে বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পারে তার মা অসুস্থ। তার মা তার বাবাকে বলছে ওষুধ এনেছো?ছেলেটির বাবা তার মাকে বলছে দেখো তোমার জন্য কি ওষুধ এনেছি, এই ঔষধ দেখার পর তোমার রোগ একদম ভালো হয়ে যাবে।
সত্যি কথা বলতে কি, ছেলে মেয়ে যতই বাবা-মা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুক না কেন, যতই অবহেলা করুক না কেন বাবা-মার ভালোবাসা কখনোই কমে যায় না বা শেষ হয়ে যায় না। এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য। আশা করি আমার গল্পটি আপনাদের ভাল লেগেছে।ধন্যবাদ আমার লেখাটা এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।
Congratulations! This post has been upvoted by the @blurtcurator communal account,
You can request a vote every 12 hours from the #getupvote channel in the official Blurt Discord.Don't wait to join ,lots of good stuff happening there.
Thank you for using my upvote tool 🙂
Your post has been upvoted (1.14 %)
Delegate more BP for better support and daily BLURT reward 😉
@tomoyan
https://blurtblock.herokuapp.com/blurt/upvote