অবহেলা - Love Story | Part 4

in instablurt •  2 years ago 

অবহেলা-নিয়ে-উক্তি.jpg

পর্ব ০৪

যাওয়ার পর দেখি সুমাইয়ার বাবা আমার ছোট ভাইকে বসিয়ে রেখেছে। যতক্ষণ আমি যাবো না ওকে ছেড়ে দিবে না। আমি উনার সামনে গেলাম।

সাথে সাথেই উনি আমার কলার চেপে ধরলেন। সানি আর আয়মান এক রকম ধাক্কা দিয়েই উনারে ফেলে দিলো।
আমি পুরো বিষয় টা উনাদের বুঝিয়ে বললাম কিন্তু উনারা মনে করছে আমি সুমাইয়াকে কোথাও নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখছি।

সামিয়া বুদ্ধি করে সুমাইয়ার ঢাকার একটা ফ্রেন্ডকে কল দিলো। তারপর জানতে পারলো ওই ছেলেটার সাথে পালিয়ে গেছে। এখন ঢাকাতেই আছে৷ কথাটা শুনে আমার বুকের মধ্যে একটা ব্যথা অনুভব হলো। এতো ভালোবাসলাম আর সে অন্য কারো সাথে চলে গেছে। একবারও আমার কথা ভাবলো না।

সেদিন ছেলে পক্ষের লোকজন এসে সুমাইয়ার বাবাকে অনেক অপমান করলো৷ এলাকার লোকজন বলতে লাগলো “আরো পড়াও মেয়েকে ঢাকাতে, ডাক্তার বানাবে। আমার মাথা বানাবে। দিলো তো এখন মুখের মধ্যে চুনকালি মাখিয়ে। “
এভাবে একেকজন একেকটা কথা বলতে লাগলো। সুমাইয়ার বাবা রোবট এর মতো দাঁড়িয়ে সবার সব কথা হজম করলেন।

আমার নিজের কাছেও কথা গুলো শুনতে খারাপ লাগছে, আমি আমার ভাইকে নিয়ে বাড়িতে চলে গেলাম।
বাড়িতে যাওয়ার পর দেখি আম্মু আগে থেকে পায়চারি করছে। আমাদের দেখে দৌড়ে আসলেন। রাতের বেলা খাওয়ার সময় আম্মু বললো।

আম্মুঃ তোর সাথে আমার কথা আছে।
আমিঃ কি কথা বলো।
আম্মুঃ তুই আমার মাথা ছুয়ে ওয়াদা কর।

images.png

আমিঃ আরে কি হইছে সেটা তো বলো৷
আম্মুঃ আজ থেকে তুই ওই মেয়ের কথা আর মনে রাখবি না। যদিও সে আসে কখনো ফিরিয়ে নিবি না। ওই মেয়ের জন্য আজ তোর মৃত বাবাকে গালি শুনতে হয়েছে।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ বাইরে থেকে বাড়িতে চলে আসলাম। সকালবেলা মানুষের চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভাঙ্গলো।
বাইরে গিয়ে আসলাম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে উনি যেটা বলেছে সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

সুমাইয়ার বাবা নাকি মারা গেছে। ঘুমের মধ্যেই মারা গেছে৷ তাড়াতাড়ি ওদের বাড়ির দিকে দৌড় দিলাম। গিয়ে দেখি আসলেই ওর বাবা মারা গিয়েছে।
ওর মা আর বোনের কান্না কাটিতে বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। চারপাশ থেকে লোকজন আসতে শুরু করলো। ওর বাবা প্রভাবশালী ছিলো। অনেক পরিচিত লোকজন ছিলো।

একেক করে আত্নীয় স্বজন সবাই আসলো। দুপুরের নামাজের পরেই উনার কাফন সম্পূর্ণ হলো। মাটি দিয়ে যে যার মতো চলে গেলো৷
আমরাও চলে আসলাম। একটা মানুষ কতটা খারাপ হলে এই কাজ করে। আমার কথা বাদই দিলাম। আমার সাথে তো রিলেশন ছিলো। কিন্তু যে বাপ মা এতো কষ্ট করে বড় করেছে, মানুষ করেছে, পড়ালেখা করিয়েছে তাদের কথা একবারও চিন্তা করলো না। স্বার্থপরের মতো এভাবে চলে গেলো?

download (1).png

ওর প্রতি এখন ভালোবাসা না ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে।
এভাবে কিছু দিনে গেলো। সুমাইয়ার আর কোনো খবর নাই, কিন্তু ওরে এখনো ভুলতে পারিনি। যখন একা থাকি ওর কথাই মনে হতো।

এভাবে দিন গিয়ে বছর। সামিয়ার সাথে মাঝেমধ্যে আমার কথা হতো। সুমাইয়ার মাও নাকি অসুস্থ। ওর বাবার কথা চিন্তা করে কান্না করে। আমি মাঝেমধ্যে ওদের বাড়িতে যাইতাম।

প্রায় ৪ বছর পর….

আমি থানায় বসে বসে কয়েকটা ফাইল দেখছি। ওহ আপনাদের তো বলাই হয়নি। আমি অনার্স কমপ্লিট করার পর পুলিশে জয়েন করি। এস আই হিসেবে ভালো একটা শুনামও পাই।

এর মাঝে অনেক কিছুই হয়ে যায়। আমার ছোট ভাই স্কলারশিপ পেয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যায়। আম্মু আমাদের ছেড়ে চলে যায় এই পৃথিবী ছেড়ে। সব কিছুই আছে আজকে আমাদের শুধু সুখটা দেখানোর জন্য আম্মু আর আব্বু নাই।
আমি সামিয়াকে বিয়ে করি। মানে সুমাইয়ার ছোট বোনকে।

ওর মায়ের ইচ্ছেতেই সামিয়াকে বিয়ে করি। চাকরির সুবাদে আমি আর সামিয়া ঢাকাতেই থাকি। ছোট একটা ফ্যামিলি। সামিয়ার আম্মু মানে আমার শাশুড়ী উনিও আমাদের সাথে থাকতেন কিন্তু উনিও চলে যান আমাদের ছেড়ে। ক্যান্সারের কাছে হার মেনে নেয়।

download.png

যাইহোক আসল কথায় আসি। আমি অফিসে বসে বসে একটা ফাইল দেখতেছি এমন সময় আসিফ একটা ফাইল নিয়ে আসে।
আসিফঃ স্যার জুরুরি একটা কেস আছে।
আমিঃ কি?

আসিফঃ স্যার একটা খুন হয়েছে আমাদের এখনিই যেতে হবে।
আমিঃ কোথায়? কিভাবে?
আসিফঃ স্যার মিরপুর৭ এ।

তাড়াতাড়ি করে গাড়ি বের করে ওখানে গেলাম। আগে থেকেই কয়েকজন পুলিশ ওখানে তল্লাশি চালাচ্ছে। আমি যাওয়ার পর একজন এসে আমাকে পুরো ঘটনা বর্ণনা করলো।
“সংসারে অশান্তিকে কেন্দ্র করে বউয়ের হাতে জামাই খুন। ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে তারপর গলা কেটে দেয়। “

শুনেই আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। এই রকম বউও হয় নাকি।
আমিঃ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
কন্সটেবলঃ জ্বি স্যার। জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। যেহেতু আপনার এরিয়ায় এই ঘটনা হয়েছে, সব জোগজিজ্ঞেস আপনি করতে পারেন।

images (1).png

আমি সেখানে আরো কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে দেখলাম। ছেলেটাকে কেমন চেনা জানা মনে হচ্ছে। মনে হয় কোথাও দেখেছি তবে মনে করতে পারছি না।
যাইহোক আমি থানায় চলে গেলাম। ভিতরে গেলাম। দেখলাম মেয়েটা উল্টো দিকে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। কাপড়ের মধ্যে রক্ত লেগে লাল হয়ে আছে।

আমি যাওয়ার পর কাশি দিলাম। কিন্তু ফিরলো না। তারপর ডাক দিলাম। উনি পিছনে তাকালো। আর তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।
কারন মেয়েটা আর কেউ নয়, সুমাইয়া। ও এই কাজ করবে আমি ভাবতেও পারিনি। ওরে দেখে আমার মুখ বন্ধ হয়ে গেলো। কি বলবো সেটাই বুঝছি না। তারপর…

সুমাইয়াঃ “জুয়েল তু তুমি?”
আমিঃ এক্সকিউজ মি! নাম ডাকার অধিকার কে দিয়েছে? কল মি স্যার।
সুমাইয়া দৌড় দিয়ে এসে আমার পা ধরে ফেললো।

“জুয়েল আমাকে বাঁচাও৷ আমি এই কাজ করিনি। প্লিজ আমাকে বাঁচাও। সে নিজেই এই কাজ করছে।
আমিঃ আজব নিজে নিজে কেউ গলা কাটতে পারে নাকি?

সুমাইয়াঃ ওর অনেক গার্লফ্রেন্ড ছিলো ওদের মধ্যে কেউ একজন এই কাজ করেছে। প্লিজ তুমি আমাক্র বাঁচাও।
আমিঃ দেখেন এইসব বলে লাভ হবে না। আপনি যদি সত্যিটা বলেন তাহলে আপনার শাস্তি কমানোর জন্য আমি সুপারিশ করতে পারবো। কেন মেরেছেন?
সুমাইয়াঃ শান্তির জন্য!

images.jpg

আমিঃ মানে? এই শান্তির জন্য ভালোবাসাকে ছেড়ে দিলেন, নিজের বাবা মাকে ছেড়ে দিলেন। বাবা মারা গেলো একবার খবরও নিলেন না। মা মারা গেলো তাও খবর নিলেন না। সব শান্তি তো আপনার লাইফে ছিলো। টাকা পয়সা, ধন দৌলত সব কিছুই তো ছিলো তাহলে ছেড়ে দিলেন কেন?

সুমাইয়াঃ ভালোবাসা। সব ছিলো কিন্তু ভালোবাসা ছিলো না। যে ভালোবাসা আমি তোমার কাছে পেয়েছি সেটা ও আমাকে দিতে পারেনি৷ সে শারীরিক ভাবেও দূর্বল ছিলো। আজকে এতো বছর আমাদের কোনো সন্তানও হয়নি। পরে জানতে পারলাম আমার বাইরেও সে অনেক গুলো মেয়ের সাথে খারাপ কাজ করে বেড়াতো৷ অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু সে বুঝতে চায় নি। দিনের পর দিন আমাকে ইগনোর করেই গেছে।

download.png

আমিঃ তারজন্য আইন ছিলো। এই কাজ করার কি দরকার?
সুমাইয়াঃ আইন তো আর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
আমিঃ কি?

সুমাইয়াঃ আমি আবার তোমার লাইফে ফিরতে চাই।
আমিঃ হা হা হা। আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। আগে আপনার ডাক্তার দেখানো হবে তারপর আপনাকে কোর্টে চালান করা হবে।

আমি এ কথা বলে চলে আসলাম। বাইরে থেকে আসিফ সব শুনলো। যদিও আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আমি ওরে দিয়ে সুমাইয়াকে কোর্টে পাঠানোর জন্য সব ব্যবস্থা করলাম। ৷
পরেরদিন সকালে….

maxresdefault.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!