পর্ব ০৩
পোস্ট দেখেই আমি অবাক কারণ পোস্ট টা ছিলো “আজ থেকে আপদটা বিদায় হইছে।”
পোস্ট টা যে আমাকে মিন করে লিখেছে সেটা আর বুঝতে বাকি রইলো না। চোখের সামনে এতো কিছু হয়ে গেছে অথচ বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
কিভাবে পারলো সে এই কাজটা করতে? এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু ওলটপালট হয়ে যাবে কখনো কল্পনাই করিনি।
যে সুমাইয়া আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না আজ সেই আমাকে বলছে আমি আপদ!
কত স্বপ্ন ছিলো, একসাথে বাকি জীবন টা কাটিয়ে দিবো কিন্তু ভাগ্য এতোই খারাপ যে এর ধারে পান্তেও আমি যেতে পারিনি৷
আসলেই সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো দাম নেই এই পৃথিবীতে। যদি অন্যদের মতো ইউজ করে ছেড়ে দিতাম তাহলে হয়তো ভালো হতো।
সানি আয়মান সুমাইয়ার বোন সামিয়াকে সব কিছু বলেছে। সুমাইয়ার এমন আচরণ তার বোনও মেনে নিতে পারেনি।
সেদিন সামিয়া আমাকে কল দিয়ে তার বোনের হয়ে সরি বলছে। যদিও মেয়েটা ছোট কিন্তু সব কিছুই খুব সুন্দর ভাবে মেনটেইন করতে পারে।
আমাকে মাঝেমধ্যে মেসেজ দিতো। কথা হতো৷ এভাবে আমার দিন যাচ্ছিলো। সুমাইয়ার ছবি গুলো প্রতিদিনই দেখতাম। পুরোনো মেসেজ গুলো পড়তাম। ওর পছন্দের জায়গায় গিয়ে বসে থাকতাম। যদিও সে আমার কথা আর মনে রাখেনি৷ কিন্তু আমি তাকে ভুলতে পারিনি।
এতো কিছুর পরও ওর জন্য সামান্য ঘৃণা আমার মনে আসেনি৷ আগের মতোই ভালোবাসি ওরে৷
প্রায় ৬ মাস পর সুমাইয়া বাড়িতে এসেছে। আসার আগের দিন রাতে সামিয়া আমাকে কল দিয়ে বলেছে যে কালকে ওর বোন আসবে। এটাও বলেছে আমাকে যেতে সব কিছু আবার আগের মতো করবে। আমি কিছু বলিনি। সানিকে কল দিলাম।
আমিঃ কই তুই?
সানিঃ টিউশনিতে আছি।
আমিঃ আচ্ছা শেষ করে, দিঘির পাড়ে আয়।
সানিঃ ওকে, আয়মান তোর সাথে আছে?
আমিঃ না।
সানিঃ আচ্ছা কল দে ওরে।
আমিঃ হুম দিচ্ছি।
এরপর আয়মানকে কল দিলাম। সে আসলো, এর কিছুক্ষণ পর সানিও আসলো।
সানিঃ কিরে কি হইছে?
আমিঃ আজকে সুমাইয়া আসছে।
আয়মানঃ কখন?
আমিঃ সকালে।
সানিঃ তোরে কে বলেছে?
আমিঃ কালকে রাতে সামিয়া কল দিয়েছিলো। সে বলেছে। আবার এটাও বলেছে আমাকে যেতে। সব ঠিকঠাক করে দিবে।
সানিঃ তোর মাথা ঠিক আছে? এটা জীবনেও পসিবল না।
আয়মানঃ দেখ সে তোকে যেই পরিমাণ অপমান করেছে তার উপর অন্য ছেলের সাথে রিলেশন। এতোদিনে হয়তো তারা আরো গভীরে চলে গেছে। তোর যাওয়া মোটেও ঠিক হবে না।
আমিঃ হয়তো সেদিন রেগে গিয়ে এগুলো বলেছে। মন থেকে নাও তো বলতে পারে।
সানিঃ দেখ ভাই, তুই এখনো ভুলতে পারিস নাই তাই এগুলো বলতেছিস৷ কিন্তু আসল কথা হচ্ছে সে তোকে চায় না। এখন তুই ওর সামনে গেলে নিজেকে আরো ছোট মনে হবে। ওর প্রতি আবারও দূর্বলতা কাজ করবে। নিজে নিজের মতো থাক। এই কাজ আর করিস না।
এভাবে আরো কিছুক্ষণ ওরা আমাকে বিভিন্ন যুক্তি দিলো। কিন্তু আমার মন কিছুতেই মানছে না।
পরে চিন্তা করলাম দূর থেকে একবার দেখে নিই। সামনে যাবো না। ভাবছিলাম সেদিন রাতে ওদের বাড়ির সামনে যাবো ওখান গিয়ে হয়তো দেখবো। কিন্তু সেটা আর হলো না।
বিকাল বেলা আমি আম্মুর জন্য মেডিসিন নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি এমন সময় দেখলাম সুমাইয়া আর ওর বোন, কয়েকটা কাজিন মিলে রাস্তায় হাটছে আর ছবি তুলছে।
দুজনেই মুখোমুখি হয়ে গেলাম। প্রথমে ভাবছি ও হয়তো কিছু বলবে। কিন্তু না কিছু বলেনি। বোনের হাত ধরে চলে গেলো। আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মানুষ কিভাবে এতোটা পাষাণ হতে পারে? তাও ভালোবাসার মানুষের সাথে? সামিয়া কয়েকবার আমার দিকে তাকাইছিলো। হয়তো সেও ভাবেনি সুমাইয়া এমন কিছু করবে। আগে থেকে অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আরো সুন্দর, স্মার্ট হয়ে গেছে।
সে সত্যি বলেছে আমার কোনো যোগ্যতা নাই ওর সাথে রিলেশন করার।
তারপর থেকে ২-৩ দিন আর বাড়ি থেকে বের হইনি। কারণ হয়তো তার সাথে আবার দেখা হয়ে যেতে পারে৷ ওর সাথে আবার দেখা হলে আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অপশন থাকবে না।
ফেক আইডি দিয়ে ওর প্রোফাইলে গেলাম, দেখলাম প্রায় প্রতিদিনই ছবি আপলোড সহ সব রকমের পোস্ট সে আপলোড করছে। অথচ আগে ইসলামি পোস্ট ছাড়া কিছুই দিতো না।
সুমাইয়া কিছুদিন বাড়িতে থেকে আবার চলে যায়। সব কিছুই আগের মতো চলতেছে কিন্তু আমি ওরে ভুলতে পারিনি।
এভাবে দিনে গিয়ে রাত আসে, ১ মাস ২ মাস করে প্রায় বছর হয়ে গেলো। তার সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ নেই। সব কিছু ঠিক থাকলেও এক সেকেন্ড এর জন্য আমি ওরে ভুলতে পারিনি।
এর কিছু দিন পর সুমাইয়ার বাবাকে তার কোন আত্নীয় ফোন করে সুমাইয়ার ব্যাপারে সব বলে দেয়। সে সারাদিন আড্ডা নিয়ে, বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়ানো পড়ালেখার নাম করে ছেলেদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া আব কিছুই ওর বাবাকে বলে দেয়।
ওর বাবা ওর জন্য ছেলে খুজতে শুরু করে। আমি ভাবছিলাম প্রথমে ওর বাবাকে ওর বিয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব দিবো। কিন্তু সেই সাহস আমার ছিলো না।
কারণ প্রথমত আমার বাবা ছিলো না। টিউশনির টাকায় সংসার চলে। তখন মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়তাম। এখনো অনেক কিছুই করার বাকি রয়েছে৷ তাছাড়া ওদের ফ্যামিলি ছিলো আমাদের থেকে অনেক ধনি। তার বাবা জীবনেও রাজি হবে না। আর হলেও সে আমাকে চাইবে না।
এর কিছু দিন পরেই সুমাইয়ার বিয়ে ঠিক করে ফেললো ওর বাবা। আমার পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করলো। চোখের সামনে প্রিয় মানুষ টার বিয়ে দেখবো, তাও অন্য কারো সাথে। ব্যাপার টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ওর বিয়ে হয়ে যাওয়া পর্যন্ত বাড়ির বাইরে চলে যাবো।
তাকে এক প্রকার জোর করা হচ্ছে বিয়ের জন্য। সে কিছুতেই রাজি না। ওর বাবা এতোই রেগে গিয়েছে যে ওর পড়ালেখা অফ করে দিয়েছে।
গায়ে হলুদের দিন আমি আমার আন্টিদের বাড়িতে চলে গেলাম। যদি সে রাজি থাকতো হয়তো তারে নিয়ে চলে যাইতাম কিন্তু সেতো আমার কথাই শুনতে পারে না। আমি আমার আন্টিদের বাড়িতে চলে গেলাম।
এদিকে বিয়ের অনুষ্ঠান চলতেছে। আমি অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে উঠে দেখি সানি আয়মান অনেক কল দিয়েছে। আমি কল ব্যাক দিলাম।
আমিঃ কিরে এতো কল দিলি কিছু হইছে?
সানিঃ সুমাইয়া কি তোর সাথে?
আমিঃ আজব আমার সাথে হবে কেন? ওর না বিয়ে?
সানিঃ ও বাড়ি থেকে পালিয়েছে৷ সবাই ভাবছে তুই নিয়ে গেছিস ওরে।
আমিঃ পালিয়েছে মানে?
সানিঃ হুম গতকাল রাতে পালিয়ে গেছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়, নইলে ওর বাবা তোর ফ্যামিলিকে আক্রমণ করে বসে থাকবে।
আমার পৃথিবী টা ঘুরতেছে৷ তাড়াতাড়ি করে আবার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। যাওয়ার পর দেখি…..