পর্ব ০২
সাথে সাথে ওরে কল দিলাম। নাম্বার ওয়েটিং। আমিও বার বার দিতে লাগলাম৷
কয়েকবার দেওয়ার পর সে কল ব্যাক দিলো। কল দিয়েই আমার সাথে গরম….
সুমাইয়াঃ কি ব্যাপার তোমার প্রবলেম কি? এতো বার কল কেন দিচ্ছো?
আমিঃ তুমি এগুলা কি শুরু করছো?
সুমাইয়াঃ কি করছি আমি?
আমিঃ তোমাকে না বলেছি ওই ছেলে গুলার সাথে মিশবে না। পর্দায় থাকবে। কিন্তু তুমি জিন্স প্যান্ট পড়ে ওদের সাথে কি করো? ছেলেটার সাথে তোমার কি সম্পর্ক যে তোমার গায়ে পর্যন্ত হাত দেয়?
সুমাইয়াঃ আমার লাইফ আমি যা ইচ্ছে তাই করবো! তাতে তোমার কি?
আমিঃ আমার কি মানে? দেখো সুমাইয়া যেগুলো আমি লাইক করি না ওগুলা করবে না। বার বার বল….
পুরো কথা শেষ করার আগেই কল কেটে দিলো।
আবার কল দিলাম, কিন্তু নাম্বার বিজি। আমাকে ব্লক দিয়ে দিছে। আমার পুরো শরীর কাঁপতেছে।
সাথে সাথে সানি আর আয়মানকে কল দিলাম। ওদেরকে আমার সাথে দেখা করতে বললাম।
কিছুক্ষণ পর ওরা আসলো।
সানিঃ কিরে কি হইছে? হঠাৎ এতো জুরুরি ভাবে আসতে বললি?
আয়মানঃ কি হইছে বল।
আমি পুরো বিষয় টা ওদেরকে বললাম।
সানিঃ হয়তো ফ্রেন্ড হবে, এখানে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে।
আমিঃ তোর মোবাইলে দেখ ওর ছবি গুলো তাহলে ক্লিয়ার হয়ে যাবি। আর ফ্রেন্ড হলে সেই বিষয় টা আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারতো। এভাবে ব্লক কেন দিবে?
আয়মানঃ আচ্ছা ছেলেটার সাথে আবার রিলেশনে জড়িয়ে যায় নি তো?
আমিঃ দেখ এগুলো বলিস না। আমার মাথা ঠিক থাকবে না।
সানিঃ একটা কাজ কর।
আমিঃ কি?
সানিঃ চল আমরা ঢাকা যাই।
আয়মানঃ আমরা ওখানে যেয়ে কি করবো?
সানিঃ সুমাইয়া কি করে নিজের চোখে দেখে আসবো। ওরে হাতেনাতে গিয়ে ধরবো। তাহলেই সব ক্লিয়ার। ওখানে সে আর আমাদের সাথে চালাকি করতে পারবে না।
আমিঃ যাওয়া কি ঠিক হবে?
আয়মানঃ আরে চল। আমার আন্টির বাসা আছে। আমরা একদিন আগে যাবো। রাত ওখানে থেকে পরেরদিন সুমাইয়াদের ক্যাম্পাসে যাবো।
সানিঃ ওর ঠিকানা জানিস তুই?
আমিঃ না।
আয়মানঃ তাহলে কেমনে কি করবি?
সানিঃ সুমাইয়ার একটা বোন আছে না? সামিয়া, ওর থেকে নিয়ে নে৷
আয়মানঃ সে কি দিবে?
আমিঃ হুম দিবে। আমাদের রিলেশন এর ব্যাপারে ও সব জানে। আমার সাথে মাঝেমধ্যে কথা বলতো।।
সানিঃ তাহলে তো হয়েই গেলো। তুই ঠিকানা ব্যবস্থা কর, বাকিটা আমরা দেখতেছি।
এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ওরা চলে গেলো।
রাতের বেলা সুমাইয়াদের বাসার নাম্বারে আমি কল দিলাম। আমি টেনশনে ছিলাম কল যেন আন্টি না ধরে। সামিয়া কল ধরলে ভালো হতো।
কিছুক্ষণ পর সামিয়া কল ধরলো। আমি ওর সাথে কথা বললাম। অনেকক্ষণ শুভেচ্ছা বিনিময় করে ওর বোনের সব কথা জানালাম। সামিয়াও আপসেট হয়্র গেছে।
আমি সামিয়ার থেকে ঠিকানা নিলাম। এবং এটাও বললাম যাতে সুমাইয়াকে না বলে।
রাতের বেলা আমি সামি আর আয়মানকে কল করে বললাম। সানি বলছে পরের দিন যাওয়ার জন্য। আমিও ঘুরে আম্মুকে ইনিয়েবিনিয়ে বুঝিয়ে সব ঠিকঠাক করলাম।
পরেরদিন সকালে আমি সানি আর আয়মান ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাস চলতে শুরু করলো। পথ যে শেষ হচ্ছে না।
৪ ঘন্টা পর আমরা ওখানে পৌঁছালাম৷ সেদিন আয়মানের আন্টির বাসায় আমরা থেকে গেলাম। পরের দিন সকালে আমরা রেডি হয়ে সুমাইয়াদের ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
একটা রিক্সা নিলাম। কিছুক্ষন পর ওখানে গিয়ে পৌঁছালাম। আমি ভাবছি হয়তো আমাদের ক্যাম্পাসের মতো সবাই ভিতরে যেতে পারবে। কিন্তু দারোয়ান আমাদের যেতে দিলো না। বাইরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। একেক করে কেউ আসছে কেউ যাচ্ছে কিন্তু সুমাইয়ার কোনো ছায়াও নাই।
আমরা বাইরের একটা ক্যান্টিনে গিয়ে বসে রইলাম। বসতে বসতে প্রায় দুপুর হয়ে গেছে। আমি বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি মনে হচ্ছে কিছুতেই সময় যাচ্ছে না।
প্রায় দুইটার সময় স্টুডেন্ট গুলো আবার বাহির হতে শুরু করলো। আমরা ৩ জনই খুজতেছি।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম সুমাইয়া আসতেছে। সাদা এপ্রোন পড়া।
আমি তাড়াতাড়ি ওর দিকে যাবো এমন সময় সানি আমার হাত ধরে ফেলে।
সানিঃ আগে দেখ ও কি করে। তারপর যাবি।
আমরা ওদের পিছু নিলাম। সুমাইয়া আর সাথে দুইটা মেয়ে বাকি ৫ জন ছেলে।
ওরা বাইরের একটা রেস্টুরেন্টে গেলো। আমরা বাহির থেকে নজর রাখলাম। দেখলাম সুমাইয়া ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে ফেলেছে। গায়ে একটা গেঞ্জি এর উপর শার্ট গায়ে দেয়া। মাঝাখানের থেকে উপরের দিকে কয়েকটা বোতাম খোলা। ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিয়ে সব কয়টা দাঁত ফেলে দিই।
ওরা খাওয়ার এর অর্ডার করলো। দেখলাম সুমাইয়া আর ওই ছেলেটা একটা ড্রিংক এর মধ্যে দুইজনে খাচ্ছে। ওদের এই অবস্থা দেখে আমি আর স্থির থাকতে পারি নি।
সোজা ভিতরে চলে গেলাম। গিয়েই ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম ছেলেটার গালে। সানি আর আয়মান দৌড়ে আমাকে গিয়ে ধরলো।
সুমাইয়া অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। সাথে সাথে সেও আমাকে একটা চড় বসিয়ে দিলো।
আমিঃ তুমি এই কাজ করতে পারলে?
সুমাইয়াঃ ওই কুত্তা তোর সাহস কি করে হয় ওর গায়ে হাত তোলার। তোর কোনো যোগ্যতা আছে, হুম?
আমিঃ আমার সাথে এতো দিন রিলেশন করে এতো স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে এগুলো করতে লজ্জা করে না তোমার?
সুমাইয়াঃ তোর সাথে কিসের রিলেশন করবো? তোর যোগ্যতা আছে আমার মতো মেয়ের সাথে রিলেশন করার। যা নিজের মতো কাওকে খুজে নে। নিজেকে কখনো আয়নায় দেখেছিস?
সানিঃ দেখো সুমাইয়া এটা কিন্তু….
সুমাইয়াঃ তুই চুপ কর চামচা কোথাকার৷
আমিঃ রিলেশন রাখবে না এটা বললেই পারতে। এতো নাটক করার কি আছে?
সুমাইয়াঃ তোরে আমি অনেক ভাবেই বুঝিয়েছি, তোরে বোঝানোর জন্য আমি fb তে ছবি দিই, তোর কল ধরি না। তোর মেসেজ সিন করি না। এর পরও যদি না বুঝিস তোর থেকে গর্দভ আর কেউ নাই।
আমিঃ হুম ঠিক বলেছো আমি আসলেই গর্দভ, আসলেই বোকা। সেজন্য তোমাকে এতো ভালোবেসেছিলাম।
সুমাইয়াঃ দেখ তোর এই ন্যাকামো দেখার টাইম নাই। এখান থেকে যা নাহলে ওদের কে দেখতেছিস? ওদেরকে দিয়ে এমন মারা মারবো এখান থেকে আর বেঁচে ফিরে যেতে পারবি না।
আয়মান আমাকে একটা টান দিয়ে ওখান থেকে বাইরে নিয়ে আসে৷ তখন মনে হয়েছিলো আমার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই।
মনে মনে ঠিক করলাম সুইসাইড করে ফেলবো। এই জীবন রাখার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
সেদিন আমরা আবার ফেনীতে চলে আসি। বার বার সুমাইয়ার কথা গুলো কানে বাজতে লাগলো। কিভাবে পারলো সে এই কাজ করতে। অথচ আমাকে স্পর্শ করে কসম খেয়ে বলেছিলো সেদিন। কখনো ছেড়ে যাবে না।
আমার মতিগতি দেখে সানি আয়মান বুঝে গেছে হয়তো আমি খারাপ কিছু করে বসবো। রাতের বেলা ওরা দুইজন আমার বাসায় আসে৷ তারপর আমাকে বাইরে নিয়ে যায়।
সানিঃ দেখ তোর সাথে যেটা হয়েছে সেটার শান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা আমাদের নাই। কিন্তু এমন কিছু করিস না যাতে পুরো লাইফ শেষ হয়ে যায়।
আয়মানঃ তোর ফ্যামিলি এখন তোর উপর নির্ভরশীল। ছোট ভাই আছে, ওর পড়ালেখার খরচ, ফ্যামিলির খরচ। তোর মা আছে, এমন কিছু করবি না যাতে করে ওদেরকেও কাঁদতে হয়। একটা মেয়ের জন্য কখনো লাইফ থেমে থাকবে না। অন্তত পরিবারের কথা ভেবে হলেও তুই স্ট্রং থাক।
সানিঃ শোন, সুমাইয়া আর কখনো তোর হবে না এটা সিউর থাক। তুই এমন কিছু কর যাতে ওর বোনকে তুই বিয়ে করতে পারিস। ওর প্রতিশোধ ওর বোনকে বিয়ে করেই নিবি।
আমিঃ না এটা পসিবল না। সামিয়া আমাকে ভাইয়ের মতো জানে।
সানিঃ জানুক সমস্যা নাই।
আমিঃ দেখ এগুলো বলিস না। ওদের কাওকে চাই না। বাদ দে তো ভালো লাগছে না।
আয়মানঃ আমাদের ওয়াদা কর কোনো খারাপ কিছু করবি না।
আমিঃ আমি আবার কি করবো।
সানিঃ কি করবি জানি না। তবে কোনো খারাপ কিছু যাতে না শুনি। আমরা আমাদের কোনো বেস্টফ্রেন্ডকে হারাতে চাই না।
ওরা আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলো। আমিও বাসায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুতেই সুমাইয়ার কথা ভুলতে পারছি না। রাতের বেলা একটা ফেক আইডি দিয়ে ওর প্রোফাইলে গেলাম। একটা পোস্ট করেছে, পোস্ট দেখেই…..