আমার জীবনের এমন একটি সময় ছিল, যখন গ্রামের চেয়ে শহর অনেক বেশি ভালো লাগত। কারণ শহরে বসবাস করার সুবিধা হলো, হাতের মুঠোয় সবকিছু পাওয়া যায় মুহূর্তের মধ্যে। দৈনন্দিন জীবন যাপন এর জন্য যা যা প্রয়োজন সব উপকরণ মুহূর্তে শহরে পাওয়া যায়। সেই তুলনায় গ্রামে এই সহজ ব্যাপারগুলো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে অধিকাংশ সময়ই। চাওয়া মাত্রই সবকিছু পাওয়া সম্ভব নয়।তার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
তবে ইদানিং আমার মনটা আবার গ্রাম অঞ্চলের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। কারণ গ্রামের নির্মল পরিবেশ, নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ, সকাল- সন্ধ্যায় পাখিদের কিচিরমিচির এবং চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে নানান রকম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।আর শহরে দিন দিন বেড়েই চলেছে যান্ত্রিক কোলাহল, কলকারখানার দুষিত কালো ধোঁয়া, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ইত্যাদি বিষয় গুলো আমার অনেক বিরক্ত এর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞানের বিকাশে জীবন অনেক বেশি যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে ঠিকই কিন্তু গাছ তথা অরণ্যানী ব্যতীত এই কৃত্রিম যন্ত্র সভ্যতাও অচল। কৃত্তিম এই যন্ত্রসভ্যতার দুনিয়া থেকে সামান্য বিরতি নিতেও আমি তাই বারবার ফিরে যাই অরণ্যের বুকে আমার গ্রামের বাড়িতে।
তাই আমি যখনি সুযোগ পাই তখনই ছুটে যাই গ্রামের বাড়িতে। এই তো কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম ঘুরতে গ্রামের বাড়িতে। সেখানকার সবুজের সমারোহ আমাকে খুবই আকৃষ্ট করে। গ্রামের বাড়ির আমার এক প্রতিবেশীকে দেখলাম অনেক বড় আকারের একটি জমিতে অনেক গুলো গাছ লাগিয়েছেন। এতো চমৎকার করে অনেক গুলো গাছ লাগানোর কারণ আমি যখন চাচাকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন আমার প্রতিবেশী চাচা গাছ লাগানোর উপকারিতা সম্পর্কে যা বললেন, তা আমি এখন শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
চাচার ভাষায় ............( চাচার লাগানো কিছু চমৎকার গাছের ছবি আমি এখানে তোমাদের কাছে শেয়ার করবো। ছবি গুলো আমার নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে ক্যামেরাবন্দী করেছি।)
পৃথিবী সৃষ্টির লগ্ন থেকে মানুষের সাথে গাছের রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।গাছ তার সবকিছু উজাড় করে দেয় আমাদের উপকারে।মানুষ সর্বদা পরিবেশ দূষণের কারণ ঘটাতে থাকে।আর এই পরিবেশ দূষণের প্রতিকারে গাছ সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে। তারপরও প্রতিমুহূর্তে মানুষের লোভের শিকার হচ্ছে তার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু গাছ। মানুষ দিন দিন বনাঞ্চল ধ্বংস করেই চলেছে। গাছ নামক এই অকৃত্রিম বন্ধুর প্রতি মানুষের বিবেকহীন আচরণ এমনি।
গাছ মানুষের ক্ষুধায় জুগিয়েছে ফলমূল, আশ্রয়ে দিয়েছে ছায়া। বায়ু থেকে প্রাণ হরণকারী বিষ আহরণ করে সে বায়ুকে নির্মল করেছে।ঝরা পাতা দিয়ে ভূমিকে করেছে উর্বর। গাছ আমাদের দিয়েছে বসবাসের আচ্ছাদন, রোগের ওষধি, আমোদ-প্রমোদে বাদ্যযন্ত্র, রৌদ্রতাপে শ্রান্ত পথিককে দিয়েছে শীতল ছায়া। সে বন্যার রক্ষক, ভূমিক্ষয় নিবারক—তার অজস্র অকৃপণ দানে প্রাণী মাত্রই কৃতার্থ কৃতজ্ঞ।
জন্মের পর থেকেই সব মানুষের পরম সখ্যতার আরম্ভ হয় গাছের সাথে।প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই বন্ধুর সাহায্য নিয়েই আমাদের জীবনের পথ চলা। এটা অতি সত্য যে, গাছপালা ছাড়া জীবন সম্পূর্ণরূপে অচল।গাছ নিয়ে এত অল্প সময়ে এবং এই ক্ষুদ্র পরিসরে বর্ণনা করা সহজ ব্যাপার নয়। আমাদের প্রত্যেক নিশ্বাসে রয়েছে গাছের অবদান। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকুও আমরা সংগ্রহ করে থাকি আমাদের পরম বন্ধু গাছ থেকে। উদ্ভিদহীন পৃথিবী অক্সিজেনশূন্য, আর অক্সিজেনশূন্য পৃথিবীর রূপ নিস্পন্দ, প্রাণহীন।
আমার মনে হয়- যতদিন আমরা বেঁচে থাকব ততদিন আমাদের স্লোগান হওয়া উচিত এটি ....একটি গাছ, একটি প্রাণ’_ কিংবা হয়তো তারও বেশি করে গাছ লাগাবো সবাই। গাছ থেকে আমরা যেভাবে উপকৃত হই তাতে গাছের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব রক্ষায় আমাদেরও বেশ কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। বর্তমানে মানবসভ্যতার উন্নতির স্বার্থে আমরা গাছের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট করছি। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রচুর গাছ কেটে ফেলছি আমরা। এটা আমাদের নিজেদের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মতো বিষয় টা। গাছ কেটে যে বিশাল ক্ষতি আমরা করেছি তা পূরণের দায়ও আমাদের। তাই আমাদের সকলের বেশি বেশি করে গাছ লাগানো এবং গাছের যত্ন নেওয়া উচিত। আজীবন গাছের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখার দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকার বা কোনো ব্যক্তি বিশেষের নয়, তা আমাদের সকলের।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন পরিবেশ রক্ষার প্রাথমিক শর্ত হল অরণ্যের বিস্তার। নগরের এই যান্ত্রিক জীবন বর্জন করে অরণ্যে ফিরে যাওয়া আজ মানুষের পক্ষে তো আর সম্ভব নয়। তাই যে যেখানেই বসবাস করি না কেন , আমাদের সর্বদা বৃক্ষরোপণ এর প্রতি সজাগ থাকতে হবে। এবং সেই সাথে গাছকে প্রাণের বন্ধু বানাতে হবে।তবেই আগামীতে আমরা একটা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবো ।