বিথী, পাপড়ি ও সূচী তিন জন ই বাল্য কালের বান্ধবী। তিন জন ই একি পাড়ায় বাস করে। তাই তাদের পড়াশোনা, খেলাধুলা,আড্ডা দেয়া , ঘোরাঘুরি সব একসাথে।
তিন জনের মধ্যে ই ছিল ভীষণ ভালো বন্ধুত্ব। তবে বিথীও পাপড়ির মধ্যে ছিল গলায় গলায় ভাব। কারণ তারা দুজন ই ছিল চঞ্চল, আধুনিক ও স্মার্ট।অন্য দিকে সূচী ছিল শান্ত ও লাজুক স্বভাবের মেয়ে। চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করে বেশি।
যাই হোক তিন জন ই এস এস সি পরীক্ষা পাশের পরে বিথীও পাপড়ি ভর্তি হলো ঢাকার একটি বেশ ভালো কলেজে।
আর সূচী ভর্তি হলো একটি ভালো মহিলা কলেজে।
কলেজের নতুন জীবন পেয়ে বিথী ও পাপড়ি হয়ে গেল আরো স্বাধীন। আরো বেপরোয়া। হাজারো রকমের ছেলে বন্ধু জোটালো তারা। ঘোরাঘুরি করতে লাগলো নানান রকম জায়গায়।
ফলে ভালো মন্দ নানান রকম ছেলে কারণে অকারণে তাদের দুজনকে বিভিন্ন সময়ে বিরক্ত করতে থাকে।
তেমনি হঠাৎ একদিন পাপড়ি অসুস্থ থাকায় বিথী একাই বেড়িয়ে পড়েছে কলেজ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রাস্তায় সে একাই হেঁটে যাচ্ছে হেলেদুলে। হঠাৎ কয়েক জন বখাটে ছেলে তার পথ আটকে দাঁড়ায়। এতে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল বিথী এক সাথে এতো গুলো ছেলে কে দেখে। ছেলে গুলো বিথীকে একা পেয়ে নানান রকম অশ্লীল কথা বলাবলি করতে শুরু করেছে।আর তাকে স্পর্শ করার জন্য তার দিকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় বিথী র শরীর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে রিক্সায় করে এক বোরকা পরা নারী এপথ দিয়ে যাচ্ছিল। বোরকা পরা নারী টি দেখতে পেল একা একটা মেয়ে কে কয়টা ছেলে ঘিরে রেখেছে।সে বুঝতে পারে মেয়েটি বিপদ এ পড়েছে। তাই সে রিক্সা আটকিয়ে ভীড়ের কাছে একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল বিপদে পড়া মেয়ে টা তার ই বাল্য বান্ধবী বিথী।
তাই সে যখনি বিথী বলে ডাক দিলো অমনি বখাটে ছেলে গুলো বোরকা পরা নারী কে তার মা ভেবে দিক বিদিক ছুটে পালিয়ে যায়।
আর বিথী ফ্যালফ্যাল করে বোরকা পরা নারী র দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। বোরকা পরা নারী টি তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে, আরে তোমার বাল্য বান্ধবী সূচী। একটি কাজে এ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।
সূচী এভাবে বিথীকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে বিথী তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
সূচী তখন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে- বিথী আজ একটা কথা তোকে না বলে পারছি না। তুই কি জানিস- আমাদের সমাজে, সংসারে, পরিবারে এত দুঃখ,এত হতাশা কেন??? মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ই এর মূল কারণ। আর এটা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা অমান্য করা এবং দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, " তোমাদের কে যেসব বিপদ আপদ স্পর্শ করে সেগুলো তোমাদের ই কৃতকর্মের ফল।"
বিথী মাথা নিচু করে সূচীর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে। এবং বলে আমার এখন কি করা উচিত। সূচী তখন বিথীর উদ্দেশ্য এ বলে আমি বোরকা পড়ি বলে তোরা আমাকে কত কথা শুনিয়েছিলি। আনস্মার্ট,খ্যাত ,গেঁয়ো বলেছিলি। অথচ শুধু মাত্র এই পর্দা ই একটি নারী কে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
বিথী বলে আমি কিভাবে এবার কলেজে যাব। বাসার বাইরে এবং কলেজে গেলেই তো এই ছেলে গুলো আবার আমাকে উত্যক্ত করবে , অসম্মান করবেন। তবে কি আমার আর পড়াশোনা করা হবে না। বাবা মা এর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো না।এসব বলে আবারও সূচীকে জড়িয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে।
সূচী বলে তুই কোন দুশ্চিন্তা করিস না। আমার কাছে সহজ সমাধান আছে। তবে সমাধান টা তোর মনের বিপরীতে। তবুও তুই এটা মানলে বখাটেদের হামলা থেকে রক্ষা পেতে পারিস।
বিথী বলে আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। তুই ই আসলে পর্দা করে সঠিক পথে ছিলি। আর আমি আর পাপড়ি মিলে তোকে অনেক অপমান ও অবহেলা করেছি। এবার বল আমাকে কি করতে হবে???
সূচী বলে তুই আমার মতো বোরকা পরে কাল থেকে কলেজে যাওয়া শুরু করবি। তাহলে তোকে কেউ চিনতে পারবে না এবং অসম্মান করার সুযোগ পাবে না।
এ বলে সূচী বিথীকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার একটা নতুন বোরকা বিথীকে উপহার হিসেবে দেয়। বিথী আনন্দ চিত্তে উপহার টা গ্রহণ করে খুশি মনে নিজের বাড়িতে সূচীকে নিয়ে ফিরে আসে ।
পরদিন বিথী এবং সুচী দুজন ই বোরকা পরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে কলেজ যাওয়ার সময় দেখতে পায় আজকেও বখাটেরা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে দিয়ে দু বান্ধবী নিশ্চিত এ হেঁটে পাড় হয়। অথচ বখাটে রা তাদের চিনতে না পেরে সসম্মানে রাস্তা ছেড়ে দিয়ে পাশে সরে দাঁড়াল।
নিরাপদে কলেজে পৌঁছে বিথী খুশিতে আত্মহারা হয়ে সূচীকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগল।বললো তোর জন্য ই আজকে একটা নতুন জীবন পেলাম। তুই আসলেই সত্যি কারের বান্ধবী।
পরবর্তীতে পাপড়ি ও এদের দেখাদেখি বোরকা পরা শুরু করে।সূচীর উসীলায় এভাবে তারা দুজন নতুন জীবন পেয়ে বলে- তোর মতো একজন বান্ধবী থাকায় কতো সহজেই না আমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছি আমরা। সেই সাথে লম্পদের দৃষ্টির অন্তরালে এসে আজ আমরা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি......................
একটা প্রবাদ বাক্য দিয়ে শেষ করি বন্ধুরা কেমন!!!
" সৎ সঙ্গে সর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ"