হয়তো বা এটি একটি ছোট্ট কুঁড়েঘর।
তবুও তো তা নিজের ঘর।
শুধু কি তাই !
এই ছোট্ট কুঁড়েঘরের সাথে কত শত সহস্র সৃতি জড়িয়ে আছে?
এই ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে তার প্রাণপ্রিয় স্বামী এবং একমাত্র সন্তান।
তাই চাইলেই কেউ এই কুঁড়েঘর টা কেড়ে নিতে পারবে না আমার কাছ থেকে।
কিন্তু জমিদার নাছোড়বান্দা।
সে তার রাজবাড়ীর সামনে এই কুঁড়েঘর টা উচ্ছেদ করেই ছাড়বে।
আর এদিকে বিধবা বুড়ি ও তার পাঁচ বছরের অনাথ নাতনির একমাত্র সম্বল এই কুঁড়েঘর টা।
তাই বিধবা বুড়ি সিদ্ধান্ত নিল, এখানে থেকে সে এক পাও নড়বে না, চলে যাবে না।
পরের দিন জমিদার বুড়ির কুঁড়েঘর এ গিয়ে তাদেরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চান।
কিন্তু বুড়ি অনড়।
তিনি তার কুড়েঘর থেকে বের হবেন না।
জমিদার চাইলেই পেয়াদা পাঠিয়ে বুড়িকে তাড়িয়ে দিতে পারতেন।
কিন্তু জমিদার হয়ে একটি অসহায় বিধবা বুড়ির বাড়ি জবর - দখল করবেন, সেটা ভালো দেখায় না।
তাই জমিদার বুড়ির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলেন।
বিত্তবান জমিদার আদালতে বুড়ির বিরুদ্ধে জিতে গেলেন।
এবার বাধ্য হয়ে বুড়ি কুঁড়েঘর ছাড়লেন।
নাতনির হাত ধরে স্বামী ও পুত্রের সৃতি- বিজড়িত কুঁড়েঘর এর সীমানা থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হলেন।
তারপর গ্রামের এক দরদী প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নিল বুড়ি ও তার নাতনি।
বুড়ি কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে আসার পর পরই জমিদার তার রাজপ্রাসাদ এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কুড়েঘর ভাঙতে লাগলেন।
দূর থেকে বুড়ি কুঁড়েঘর ভাঙার আওয়াজ পেয়ে একটা টুকরি নিয়ে সেখানে হাজির হলো।
তারপর সেখানে দন্ডায়মান জমিদারের কাছে গিয়ে আবদার করলো - বললো , বাবু ! আমি এই টুকরিতে করে আমার এই ভিটে মাটি থেকে কিছু মাটি নিয়ে যেতে চাই।
কারণ আমার নাতনি এই কুঁড়েঘর থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকেই সারাক্ষণ শুধু কান্না করছে।
তাই এই ভিটে মাটি থেকে কিছু মাটি নিয়ে গিয়ে আমি একটা চুলা বানাবো।
সেই চুলায় যদি রুটি তৈরি করে আমার নাতনিকে খেতে দিই, তাহলে হয়তো আমার নাতনির কান্না বন্ধ হবে।
এসব শুনে জমিদারের মন নরম হয়ে গেল। তাই তিনি অনুমতি দিলেন বুড়িকে মাটি নিয়ে যেতে।
বুড়ি টুকরিতে মাটি ভর্তি করার পর স্বয়ং জমিদারকে বললেন,টুকরি টা বুড়ির মাথার উপর তুলে দিতে।
এতে জমিদার ভীষণ ক্ষেপে গেলেও বুড়ির কাকুতিমিনতি শুনে এগিয়ে গেলেন বুড়ির মাথার উপর টুকরি তুলে দিতে।
কিন্তু এ কি!
জমিদার মাটি ভর্তি টুকরি টা কিছুতেই উপরে তুলতে পারছেন না।
অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করার পরও জমিদার হার মানলেন।তার পক্ষে এই টুকরি ওঠানো অসম্ভব।
বুড়ি তখন বলে ওঠে জমিদারের উদ্দেশ্য এ .......
বাবু ! আপনি সামান্য এই মাটি ভর্তি টুকরি টা উপরে তুলতে পারলেন না। অথচ আমার এই কুঁড়েঘর এ হাজার হাজার টুকরি মাটি পরে আছে। সেগুলো আপনি কিভাবে উপড়ে ফেলবেন??
বিধবা বুড়ির এই প্রশ্নে জমিদারের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সব দম্ভ ও অহংকার মাটির সাথে মিশে গেল।