যুদ্ধে বিজয়ী হলেই বিপ্লবী হওয়া যায় না৷ প্রকৃত বিপ্লবী তো সেই যে স্ত্রীর মনের একমাত্র বীরপুরুষ ।

in instablurt •  3 years ago 

ঢাকার বসুন্ধরা সিটির পাঁচ তলায় কেনাকাটা করছে এক যুবক।
কেনাকাটা শেষ করে চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে নামতেই পাশের এক সিকিউরিটি গার্ডকে চোখে পড়ল তার ।

heart-529607__480.webp
Source

সিকিউরিটি গার্ড তার অল্প দামের একটি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় শপিং মলের বিভিন্ন ধরনের ভিডিও করছে।

বিশালাকার শপিং মলের ভেতরের চলন্ত সিঁড়ি, উপরের গম্বুজাকৃতির ছাদ এমনকি বাহারী রঙের আলো ঝলমলে করা বাতিগুলোও তার কম দামী মোবাইলে ভিডিও করছে।

সিকিউরিটি গার্ড অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে ভিডিও করতেছে দেখে তার আশপাশের কাউকে খেয়াল করার সময় যেন নেই তার।তার মনোযোগ দিয়ে ভিডিও করার এই দৃশ্য দেখে যুবকের বেশ কৌতূহল হলো।

সে সিকিউরিটি গার্ড এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো এতো মনোযোগ দিয়ে কি ভিডিও করছেন আপনি ?

এবার বেশ চমকে উঠে সে যুবকের দিকে তাকাল। বয়স ত্রিশের কোটা পেরোয়নি মনে হয়। চোখেমুখে অবাক এক সারল্য।
কাচুমাচু ভঙিতে যুবককে বলল, ভিডিও করতেছি স্যার!
যুবক উত্তরে বললো , তাতো নিজের চোখেই দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু কেন ভিডিও করছেন?

যুবকের এই প্রশ্নে সিকিউরিটি গার্ড অপরাধী ভঙ্গিতে নিরুত্তর থেকে মাথা নিচু করে নীচের দিকে তাকিয়ে রইল।

সিকিউরিটি গার্ড এর মাথা নিচু করার দৃশ্য দেখে যুবক মনে মনে নিজেই কষ্ট পেল।সে মনে মনে ভাবলো, স্মার্ট ফোনের এই যুগে অধিকাংশ মানুষই যা মন চায় ইচ্ছে মতো ক্যামেরাবন্দী করছে। তাদের নিয়ে তো কেউ মাথা ঘামায় না।

আর এই লোকটি সিকিউরিটি গার্ড এবং সমাজের উঁচু স্তরের লোক নয় বলেই কী আমি তার ছবি বা ভিডিও করার ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছি বা প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছি।

এইসব ভাবতে ভাবতে যুবকটি এবার বন্ধু সূলভ হাসি দিয়ে সিকিউরিটি গার্ড এর কাঁধে আলতো করে একটা হাত রেখে নাম জিজ্ঞেস করলো।

অভয় পেয়ে সিকিউরিটি গার্ড উত্তরে তাঁর নাম বললো, আশরাফ।

এবার যুবক স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো
বাড়ি কই, এখানে কী করেন?
আশরাফ বললো, আমাগের বাড়ি যশোর। এইখানে এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করি।

ও আচ্ছা, ভালো।
বলে যুবক চলে যেতে উদ্যত হলে আশরাফ নিজেই যুবকের উদ্দেশ্যে বলে,
আসলে স্যার, আগে আমার শুধু কথা বলার একটা ছোট মোবাইল ছিল। তারপর কয়েক মাস ধরে টাকা জমিয়ে অল্প দামে এই ক্যামেরা মোবাইল টা কিনছি।

এবার যুবক হেসে বললো , বুঝতে পারছি। যে কোন মানুষ ই যখন নতুন কিছু কিনে , তখন এই রকম কৌতুহল সবারই থাকে।

আশরাফ তাড়াতাড়ি যুবককে থামিয়ে দিয়ে বললো না না স্যার। সেই কারণে না। ভিডিও করার অন্য কারণ আছে।

যুবক এবার বেশ অবাকই হয়ে থমকে দাঁড়াল।
বললো, অন্য কী কারন?

আশরাফ বেশ লাজুক হাসি দিয়ে বললো, আমি আসলে নতুন বিয়া করছি। বউ থাকে গিরামে। সে জানে আমি অনেক বড় মার্কেটে চাকরি করি। শুনিছে, এই মার্কেটের সিঁড়ির উপর দাঁড়াইলে আপনা-আপনিই মানুষ উপরের দিকে উইঠে যায়। হাটা লাগে না। সে খুবই অবাক হয়া গেছে। বউ গিরামের মেয়ে, কোনদিন শহরে আসেও নাই আর এতো বড় মার্কেট দ্যাখেও নাই। তাই আমারে বলিছে, আমি যেন সব কিছু ভিডিও কইরে নিয়ে তারে দেখাই। সে বাড়িতে বইসে বইসে দ্যাখবে। তাই ভিডিও করতিছি স্যার। আমার তো তেমন টাকা-পয়সা নাই। যদি কোন দিন কিছু টাকা পয়সা জমাইতে পারি তাইলে একদিন স্বশরীরে তারে শহর নিয়া আসার ইচ্ছা আছে!

আশরাফের গল্প শুনে অদ্ভুত এক ভালোলাগার স্রোত বয়ে গেল যুবকের বুকের গহীনে। মনটা ভরে গেল তার অপার মুগ্ধতায়। সে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইলো লজ্জাবনত আশরাফের দিকে।

এটা তো সত্য যে, আমাদের আশে-পাশে মুগ্ধ হবার মতো এমন কতো-শতো সহজ সরল ,পবিত্র ভালোবাসার গল্প আছে। ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণা মূলক জীবনের গল্প আছে- আমরা তার খোঁজ রাখি না।

elderly-2914879__480.jpg
Source

অথচ বিপুল উৎসাহ ও কৌতুহলে আমরা খোঁজ রাখি, চারপাশের ভালোবাসাহীন- মায়া মমতাহীন কুৎসিত সব গল্পের। যেগুলো আমাদের জীবনকে দূর্বিসহ করে তোলে।

আমরা আসলে সুখে থাকতে জানি না। বা অনেকেই অনেক দুঃখ বিলাসী। তাই প্রবল আগ্রহে জীবন নামক সমুদ্র থেকে আমরা বেছে বেছে আহরন করি অসীম বেদনা আর কষ্টমাখা হাহাকার গুলো কে। অথচ খুব সহজ ভাবে যত্নে গাথা ঝিনুকের মালা থেকে যায় আমাদের চোখের আড়ালে!

আহারে জীবন !!!

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!