[বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে, এখানে প্রতিকী নাম ব্যবহার করা হয়েছে।]
সোহেল সাহেব অত্যন্ত সৎ, উদার ও বিনয়ী মানুষ। একদিন বিকেলে তিনি পায়ে হেঁটে অফিস থেকে বাসায় ফিরছেন। যদিও তিনি প্রায় সবসময়ই গাড়িতে করে ঘোরাঘুরি করেন। তবে মাঝে মাঝে পায়ে হেঁটে ও যাতায়াত করেন। কারণ এমনিতেই তো শুধু শুধু হাঁটাহাঁটি করার সময় জুটে না। শারীরিক ব্যায়াম এর জন্য তিনি এভাবে মাঝে মধ্যে হাঁটাহাঁটি করতে ভালোবাসেন।
যাই হোক, সেদিন ও তিনি অভ্যাস বশত পায়ে হেঁটে আনমনা হয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে -
বাবা গো ,ও বাবা ......
বলে কাউকে ডাক দিতে শুনলেন।
পাশ ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলেন , একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক রাস্তার পাশে বসে ভিক্ষা করছে।
সোহেল কাছে গিয়ে ভিক্ষুক কে বেশ দরদমাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, চাচা আমাকে ডাকছিলেন ?
ভিক্ষুক : জ্বি বাবা। আজ এখানে প্রায় সেই সকাল থেকে বসে আছি। কিন্তু কেউ একটুও ভিক্ষা দিলো না বাবা। সারাদিন না খেয়ে আছি বাবা। আর ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারছি না বাবা। আমাকে কয়টা টাকা দিন , একটু খাবার কিনে খাব ।
বৃদ্ধের আকুতি শুনে সোহেল সাহেব এর মনটা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো। তিনি বৃদ্ধ ভিক্ষুক কে হাত ধরে টেনে তুলে নিজের কাছে টেনে নিলেন।
তারপর কাছাকাছি একটি খাবার এর হোটেলে নিয়ে গেলেন সেই বৃদ্ধ ভিক্ষুক কে।
ভদ্রলোকের চেহারা ও পোশাক পড়া সোহেল সাহেব কে ভিক্ষুক নিয়ে হোটেলে ঢুকতে দেখে হোটেলের ম্যানেজার, ওয়েটার ও কাষ্টমার রা বেশ অবাকই হলো। অনেকেই আবার হাসাহাসি ও করলো।
সোহেল সাহেব ভিক্ষুক কে নিয়ে খাবার এর টেবিলে বসলেন। তারপর ভিক্ষুক কে জিজ্ঞেস করলেন, চাচা কি খাবেন ?
ভিক্ষুক: আপনার যা ইচ্ছে হয়, তাই দেন বাবা।
সোহেল সাহেব: আচ্ছা চাচা, আপনি খাসির মাংস দিয়ে কতদিন ধরে ভাত খান না।
সোহেল সাহেবের এ কথা শুনে বৃদ্ধ ভিক্ষুক হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। বললেন- বাবা ! শেষ কবে খাসির মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছি, তা মনে নেই বাবা।
বৃদ্ধের এ কথা শুনে সোহেল সাহেব কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে
রইলেন। তারপর বললেন, ঠিক আছে তাহলে আজকে আপনি পেট ভরে খাসির মাংস দিয়ে ভাত খান। বৃদ্ধ ভিক্ষুক কাচুমাচু করে বললেন, বাবা আমি শুধু একটা মাংসের টুকরো দিয়ে ভাত খাব। আর একটা মাংসের টুকরো ও একটু ভাত আমার বউ এর জন্য নিয়ে যাব বাবা। ও সারাদিন না খেয়ে আছে। আমি ভিক্ষা করে কিছু নিয়ে গেলে তবেই ও খেতে পায়।
সোহেল সাহেব বললেন, আপনি পেট ভরে খান।আর আপনার বউ এর জন্য আমি আলাদা প্যাকেট করে দিবো।আপনি নিশ্চিন্তে পেট ভরে খান।আর তিনি মনে মনে ভাবছেন, এরা কতো গরীব। তবুও এদের স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে প্রচন্ড একটা ভালোলাগার টান রয়েছে।অথচ বিশাল অট্টালিকা র মানুষের মধ্যে এই ধরণের ভালোবাসা বিলীন হবার পথে। বেঁচে থাকুক পৃথিবীর এই অকৃত্রিম ও পবিত্র ভালবাসা গুলো।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোহেল সাহেব ওয়েটার কে ডাকলেন বিলের রিসিট টা আনার জন্য।ওয়েটার- ম্যানেজারের কাছে থেকে রিসিট এর কাগজ টা এনে সোহেল সাহেব এর হাতে দিল।
সোহেল সাহেব রিসিটের কাগজের বদলে পেলেন অন্য একটি কাগজ এর টুকরো।তাতে লেখা " মানবতার কোন বিল হয় না" ।
তিনি ফ্যালফ্যাল করে কাগজের টুকরো র দিকে চোখের কান্নায় ঝাপসা দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলেন।এর মধ্যে ই ম্যানেজার একটি প্যাকেট এনে বৃদ্ধ ভিক্ষুক এর হাতে দিয়ে বললেন, এটা আপনার বউকে দেবেন।
সোহেল সাহেব ম্যানেজারকে অনেক জোর জবরদস্তি করলেন খাবারের মূল্য টা নেয়ার জন্য। কিন্তু হোটেলের ম্যানেজার বার বার সেই একই কথা বললেন, "
মানবতার কোন বিল হয় না।"
সোহেল সাহেব ভিক্ষুক কে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে কিছু টাকা সহ একটি রিক্সায় তুলে দিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে আসলেন।
আজকে সোহেল সাহেব কেন যেন বুকের ভেতর একটা তৃপ্তি বোধ করছেন। ভালো ও নেক কাজের অনুভূতি বুঝি এমনই হয়।
*** বাসার বাইরে বের হলেই এসব দৃশ্য প্রতিদিন আমাদের চোখে পড়ে। তবে এসব দৃশ্য শুধু চর্মচক্ষু নয় যদি অন্তরচক্ষু দিয়ে অবলোকন করা যায় , তবে সে দৃশ্যের মানুষ গুলোর জন্য কিছু করতে পারলে নিজের জীবন টা স্বার্থক মনে হবে।আমাদের চারপাশে র অনেক মানুষই এভাবে দিনের পর দিন ভালো খাবার তো দূরের কথা, দু মুঠো ভাত খেতে পায় না। অথচ আমরা কত খাবার নষ্ট করে ডাষ্টবিনে ফেলি। তাই আমাদের উচিত যার যার অবস্থান থেকে সাধ্য মতো অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়া।