একটি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাফল্য দেখতে কেমন?
এই প্রশ্ন টা কে আমি প্রথমে দুটো অংশে বিভক্ত করতে চাই।
১. আধ্যাত্নিকতা
২. সাফল্য
এখন আমি প্রথমে আধ্যাত্নিকতা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
মূলত আধ্যাত্নিকতা একটি মানবিক অনুভূতি। এটা সম্পূর্ণ রূপে মনের একটি অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালোবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।জৈবিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, দর্শনভিত্তিক দ্বারা অনেকেই আধ্যাত্নিকতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এবং এর উৎস নির্ণয়ের প্রচেষ্টা সাধিত হয়েছে।
আধ্যাত্নিকতা যেহেতু অদৃশ্য একটি বিষয়।এটা তো আর চক্ষু দিয়ে দেখা যায় না। শুধু মাত্র হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হয় ।
এবার আমি সাফল্য নিয়ে লেখার চেষ্টা করবো।
সাফল্য এমন একটি বিষয়, যা মানুষের চোখে পড়ে খুব সহজেই।
যেমন ধরুন,
কারো বাড়ি,গাড়ি, সোনা গয়না ও অনেক ধন সম্পদ আছে।
কিংবা কেউ পড়াশোনায় অনেক ভালো। অনেক ভালো রেজাল্ট করে অনেক ভালো চাকরি জীবনে প্রবেশ করার সুযোগ পায়।
এগুলোকে মানুষ সাধারণত সাফল্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
কিন্তু আমার মতে, সাফল্যের সাথে সুখ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সমাজে ধনী,গরিব,সুখী,অসুখী; বিভিন্ন ধাঁচের মানুষের বসবাস। তবে বর্তমানে সুখী মানুষ খুঁজে পাওয়া সোনার পাথর বাটির মতো। সকলেই সুখী হতে পারে না। তবে সুখী হতে পয়সা লাগে না। নিজের ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই সুখী হওয়া সম্ভব। নিজের যতটুকু আছে তন্মধ্যে সন্তুষ্ট থাকলে, আনন্দ খুঁজে পেলে সুখী হওয়া কঠিন কিছু না। সুখ একটা আপেক্ষিক ব্যাপার।
তবে মনে রাখতে হবে, ধনবান ব্যক্তি হলেই সুখী হওয়া যাবে, তা নয়। ছোট কুটিরেই সুখ লাভ করা যায়।
এ প্রসঙ্গে আমি একটা উদাহরণ পেশ করতে চাই আপনাদের কাছে।
নাইজেরিয়ান এক তেল কোম্পানীর মালিক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ফেমি ওতেদোলা একবার এক রেডিও ইন্টারভিউতে তার জীবনের অজানা অনেক কিছু জানাচ্ছিলেন। কথোপকথনের এক পর্যায়ে উপস্থাপক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার কি এমন কোনো স্মৃতি আছে, যখন আপনার মনে হয়েছিল আপনি এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ও সফল মানুষ?’
ওতেদোলা তখন বলেছিলেন, "আমার জীবনে আমি সুখ ও সফলতার খোঁজে চারটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। তারপর অবশেষে আমি সত্যিকারের সুখ ও সফলতার খোঁজ পেয়েছি।
প্রথম পর্যায় ছিল যত পারা যায় ধনসম্পদ উপার্জন। কিন্তু সবকিছু অর্জন করেও আমি সুখের দেখা পাইনি।
এরপর দ্বিতীয় পর্যায় ছিল দামি ও বিলাসবহুল জিনিসপত্র কেনা। আমার কাছে মনে হতো এর মাধ্যমে আমি সুখ পাব। কিন্তু এবারও আমি সুখের দেখা পেলাম না।
এরপর তৃতীয় পর্যায়ে বড় বড় প্রজেক্ট নিজের করে নেয়া শুরু করলাম। একটা সময় নাইজেরিয়া ও আফ্রিকার ৯৫% ডিজেলের সাপ্লাইয়ার ছিলাম আমি। আফ্রিকা ও এশিয়ায় সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল আমার। কিন্তু এরপরও আমি সুখ পেলাম না।
এমতাবস্থায় আমার মনের অস্হিরতা বেড়েই চলেছিল।
ঠিক তখনই আমার এক বন্ধু বলল ২০০ প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য হুইলচেয়ার কিনে দিতে।
আমার বন্ধু আমাকে অনুরোধ করে, হুইলচেয়ার গুলো প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের হাতে যেন আমি নিজেই তুলে দিই।
বন্ধুর অনুরোধে আমি যখন বাচ্চাদের হাতে হুইলচেয়ার গুলো তুলে দিচ্ছিলাম।আর তারা হুইলচেয়ার গুলো পেয়ে,সেগুলোতে বসে এখানে ওখানে ছোটাছুটি করছিল।একেকজনের মুখে সে কি অপার্থিব হাসি। যেন এর চেয়ে আনন্দের দিন তাদের জীবনে আর আসেনি।
এরপর যখন আমি অনুষ্ঠান থেকে বিদায় নিতে যাব হঠাৎ এক বাচ্চা আমার পা জড়িয়ে ধরল। আমি তার কাছ থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু বাচ্চাটি আরও শক্ত করে পা ধরে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি হাঁটু গেড়ে বসে বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার কি আর কিছু দরকার?’
বাচ্চাটি বললো, ‘আমি আপনার চেহারাটা ভালোভাবে মনে রাখতে চাই। যদি জান্নাতে আমাদের দেখা হয় সেদিনও যেন আমি আপনাকে চিনতে পারি আর আজকের এই দিনটির জন্য আরও একবার ধন্যবাদ দিতে পারি।’
ছোট বাচ্চার জবাবে ফেমি ওতেদোলার দুচোখের পানি বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। ছোট বাচ্চাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি।
ফেমি ওতেদোলা বলেন, ছোট্ট এই ঘটনা আমাকে কেবলই আনন্দিতই করেনি, বরং সেদিন থেকে আমার কাছে জীবনের অর্থই পাল্টে গিয়েছে। আজ আমি সফলতার সংজ্ঞা কি সেটা জানি। আর সেই সফলতা নিয়েই আমি আমৃত্যু বেঁচে থাকতে চাই।
"একটি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাফল্য দেখতে কেমন?"
এই হলো আমার বিশ্লেষণ।এই হলো আধ্যাত্নিক দৃষ্টিতে সাফল্য।এটা শুধু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা সম্ভব।অন্য কোন কিছু তে নয়।