‘কোরবানি পূর্ববর্তী শরীয়তের এমন এক ইবাদত, যা ইসলামী শরীয়তেও বহাল রয়েছে। কোরআন মজিদে আছে : ‘এবং আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির প্রথা জারি রেখেছি। যাতে তারা আমার দেওয়া চতুস্পদ জন্তুর উপর আমার নাম নেয়।’( সুরা হজ)।আরবি ‘কুরবানুন’ শব্দের অর্থ নৈকট্য লাভ। ব্যাপক অর্থে, যে বস্তু দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়, হোক সেটা যবেহকৃত বা অন্য কোনো দান-খয়রাত ( ইমাম রাগিব)। তাফসিরে মাযহারীর বর্ণনা মতে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নযর-মান্নত রূপে যা পেশ করা হয় তাকে বলা হয় ‘কুরবান’। ইমাম আবুবকর জাসসাস (রাহঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রহমতের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য কৃত প্রত্যেক নেক আমলকে ‘কুরবান’ বলা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় কোরবান হলো সেটা যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নিবেদন করা হয়; তা পশু হোক বা অন্য কিছু। তবে প্রচলিত অর্থে এ উদ্দেশ্যে পশু জবেহকে বলা হয় কোরবান। ‘উযহিয়া, ‘নাহর’ সমার্থক শব্দ। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোরবানির প্রথা চালু রয়েছে। কোরআনের সুরা মায়িদায় আদমপুত্র হাবিল ও কাবিলের কোরবানির বর্ণনা পাওয়া যায়। সুরা সাফফাতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কর্তৃক পুত্র ইসমাইলের কোরবানির যে বিবরণ রয়েছে, তা ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায়। বস্তুতঃ ইসলামী শরীয়তের কোরবানি একে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। সাহাবায়ে কেরাম একদা রাসুল (সাঃ)- এর প্রতি আরজ করে বলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোরবানিগুলো কি?’রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের পিতামহ ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নত।’ তাঁরা আবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘এতে কি পাওয়া যায়?’ রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘প্রতি লোমের বিনিময়ে একটি করে নেকি’। (ইবনে মাযাহ) । আল্লামা আলুসী (রাহ) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানির প্রথা সকল আসমানী ধর্মে বিধিবদ্ধ করে দেওয়া হয়। তাফসীরে হক্কানীতে লেখা আছে : ‘হযরত মূসা, ইয়াকুব, ইসহাক ও ইব্রাহীম (আঃ) এর শরীয়ত সমূহে কোরবানী করা ধর্মের আইনরূপে স্বীকৃত ছিল। কোরবানির কয়েকটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো যাতে এর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। মানুষের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কোরবানির প্রচলন হয় হযরত আদম (আঃ) এর পুত্রদ্বয় হাবিল ও কাবিলের হাতে। পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদায় আছে, ‘এবং আদম পুত্রদ্বয়ের সত্য ঘটনা লোকদের শোনাও। যখন তারা উভয়ে কোরবানি পেশ করে। অতঃপর একজনের (হাবিল) কোরবানি কবুল হয় এবং অপর জনের (কাবিল) অগ্রাহ্য হয়। কাবিল তখন হাবিলকে বলে, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব।’ হাবিল বলে, ‘আল্লাহ পরহেজগারের কোরবানিই কবুল করেন।’ (আয়াত-২৭)।
হযরত নূহ (আ.) এর যুগে প্রচলিত কোরবানি প্রথার উল্লেখ করে মিসরের প্রখ্যাত আলেম মুহাম্মদ ফরীদ ওয়াজদী ‘দায়েরাতুল মাআরিফ’ গ্রন্থে প্রমাণ সহকারে বলেন, ‘হযরত নূহ (আ.) জন্তু জবেহ করার উদ্দেশ্যে একটি ‘কোরবানগাহ’ নির্মাণ করেছিলেন। এবং তাতে জবেহকৃত জন্তু আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দিতেন। তারপর দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন কোরবানী পেশ করেছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ.) এবং তাঁর সময় থেকেই এটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে প্রচলিত হতে থাকে। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর সেই নজিরবিহীন কোরবানির স্মৃতিকে দুনিয়ার বুকে কায়েম রাখার জন্যে আমাদের শরীয়ত প্রত্যেক সামর্থবান লোকের উপর কোরবানি ওয়াজিব করে দেয়। পবিত্র কোরআনের সূরা সাফ্ফাতের কতিপয় আয়াতে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর কোরবানির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে বলা হয়, ‘তাঁর এ স্মৃতি পরবর্তী মানব সমাজের মধ্যে বহাল রাখা হবে।’ মুহাম্মদী শরীয়তের কোরবানি উৎসব হিসেবে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর উক্ত কোরবানির কিছু বিবরণ পেশ করা এখানে আবশ্যক মনে করি। দাওয়াত : হযরত ইব্রাহীম (আ.) নবুয়ত লাভ করার পর নবুয়তের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে যখন তাওহীদের প্রচার শুরু করেন, তখন সর্বপ্রথম সংঘাত বাধে তাঁর পিতা আযরের সঙ্গে। পিতা বলেন, ‘বাপ-দাদার ধর্মের বিরুদ্ধে তোমার প্রচার অভিযান অব্যাহত থাকলে পাথর মেরে তোমাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হবে।’ কিন্তু পিতার আদেশের চাইতে আল্লাহর আদেশের গুরুত্ব ছিল তাঁর কাছে বেশি। ফলে পিতাসহ গোত্রের সকল লোকই তাঁর শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) এতসব ধমকি-হুমকি সত্ত্বেও শিরকের গহীন অন্ধকারে একত্ববাদের প্রচারে নিয়োজিত থাকেন। নিজ গোত্র উপায়ন্তর না দেখে তাঁকে জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা নেয়। নির্দিষ্ট দিন-তারিখে সমকালীন রাজা নামরূদের আদেশে তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয় হাজার হাজার দর্শকের চোখের সামনে। ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ.) তৎক্ষণাৎ এসে তাঁকে বলেন, ‘সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমি হাজির।’ তিনি বলেন, ‘আপনার ব্যক্তিগত সাহায্যের প্রয়োজন নেই। যে আল্লাহর একত্ববাদ প্রচারের দায়ে আমি আগুনে নিক্ষিপ্ত, তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। তিনি যাই সাব্যস্ত করেন, তার উপর আমি পরম সন্তুষ্ট।’ ঠিক এমন সময় আল্লাহর আদেশ আসে- হে আগুন, ইব্রাহীমের জন্যে শীতল ও শান্তিময় হয়ে যাও। পরক্ষণেই দেখা যায় সমগ্র অগ্নিকুণ্ড ফুল বাগানে পরিণত হয়। ইতিহাসের বিশ্ময়কর এই ঘটনা ঘটে প্রাচীন ইরাকে। প্রতাপশালী সম্রাট ও দর্শকবৃন্দ এ ঘটনায় হকচকিয়ে যায়। এ ছিল হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর এক প্রকাশ্য মুজেযা। এর খণ্ডন ওদের সাধ্য-সাধনার বাইরে দেখে দেশবাসী তাঁকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। তিনিও এ কথা বলে বিদেশের পথে পাড়ি দেন- আমার প্রতিপালকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে চলছি, তিনিই আমাকে হেদায়েত করবেন। অতঃপর মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন সবকিছু ছেড়ে তিনি হযরত লূত (আ.) কে সঙ্গে নিয়ে সুদূর ফিলিস্তিনের কিন্আন নামক স্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ছিয়াশি বছর। এখানে এসেও তিনি বহু পরীক্ষার সম্মুখীন হন। এছাড়া তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। ছিয়াশি বছর বয়সেও আল্লাহর কাছে তিনি সন্তানের জন্য প্রার্থনা করেন। আল্লাহ্ তাঁকে এক ধৈর্য্যশীল সন্তানের সু-সংবাদ দেন। তিনি হলেন হযরত ইসমাইল (আ.)। পরে নিরানব্বই বছর বয়সে তাঁর আর এক সন্তানের জন্ম হয়। নাম ইসহাক (আ.)। পরম আশা ও অব্যাহত দোয়ার পর ছিয়াশি বছর বয়সে তিনি যে সন্তান লাভ করেন, পরে দেখা যায় সেই সন্তানই একের পর এক পরীক্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম আসে- দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা ও দুগ্ধপোষ্য ইসমাইলকে সুদুর হিজাযের জনমানবশূন্য ধু-ধু মরু এলাকায় রেখে আস।
এ হুকুম তামিলের উদ্দেশ্যে তিনি অল্প খেজুরসহ মা ও ছেলেকে নিয়ে সিরিয়া থেকে রওনা হয়ে ঠিক যেখানে বর্তমান ‘বায়তুল্লাহ্’ শরীফ অবস্থিত, গায়েবী ইশরায় সেখানে এসে যাত্রাবিরতি ঘটান এবং খেজুরগুলো স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে কিছু না বলেই পুনঃযাত্রা করেন। কিছু দূর গেলে স্ত্রী পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলেন, ‘এই জনমানবশূন্য মরু এলাকায় আমাদের কেন রেখে যাচ্ছেন? এটাও কি আল্লাহর হুকুম?’ তিনি পেছনে না ফিরে চলার গতিতেই জবাব দেন, ‘হ্যাঁ।’ স্ত্রী হাজেরা বলেন, ‘তা হলে চিন্তার কিছু নেই। আল্লাহ্ আমাদের হেফাজত করবেন।’ দুগ্ধপোষ্য সন্তান নিয়ে বিবি হাজেরার একা দিন যাপন, জমজম কূপের উৎসরণ, বিদেশি বাণিজ্য কাফেলার সেখানে আগমন এবং ধীরে ধীরে মক্কায় মানুষের বসতি স্থাপনের কাহিনি বহু দীর্ঘ। সে কাহিনি অল্প বিস্তরে অনেকের জানা। তাই মুখ্য আলোচনার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। হযরত ইব্রাহীম (আ.) সিরিয়া থেকে মাঝে-মধ্যে মক্কায় এসে স্ত্রী ও সন্তানকে দেখে যেতেন। ইসমাইল শিশু থেকে কৈশোরে পদার্পণ করলে একদিন পিতা এসে বলেন, ‘প্রিয় বৎস, স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে নিজ হাতে জবেহ করছি। বলো, তোমার কি মত?’ তিনি নিঃসঙ্কোচে জবাব দেন, ‘আব্বাজান! আল্লাহর সে আদেশ পালন করুন। আমাকে ইনশাল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ পরদিন সকালে পিতা ও পুত্র যখন আল্লাহর আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন তখন শয়তান শুভাকাঙ্খীর বেশ ধরে বিবি হাজেরার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে, ‘ইসমাইল কোথায়?’ তিনি বলেন, ‘ওর পিতার সঙ্গে কাঠ আনতে গেছে জঙ্গলে।’ শয়তান বলে, ‘আসল কথা তুমি জান না। ওকে জবেহ করার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ তিনি তাজ্জব হয়ে বলেন, ‘পিতা কি আপন পুত্রকে জবেহ করতে পারে?’ শয়তান বলে, ‘ওর পিতা নাকি এ জন্যে আল্লাহর আদেশ পেয়েছেন।’ তখন মা বলেন, ‘তাহলে এ আদেশ তাঁকে পালন করতেই হবে।’ শয়তান এখানে নিরাশ হয়ে পিতা ও পুত্রের পিছু নেয়। অতঃপর এক হিতৈষী বন্ধুর বেশ ধরে তাঁদের গতি রোধ করতে চায়। কিন্তু তারা শয়তানকে এড়িয়ে চলেন। পরে সে অন্য বেশ ধরে পথ রোধ করে দাঁড়ায়। তখন এক ফেরেশতা এসে ইব্রাহীম (আ.) কে বলেন, ‘ওকে পথার ছুঁড়ে মারুন।’ তিনি সাতটি পাথর মারেন এবং প্রতিবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলেন। শয়তান পাথরের আঘাতে সরে গিয়ে একটু দূরে পুনরায় পথ বন্ধ করে দাঁড়ায়। এখানেও তিনি তাকবীর বলে আবার সাতটি পাথর মারেন। সে আবারও সরে যায় এবং তৃতীয় বারের মতো পথ আগলে দাঁড়ায়। হযরত ইব্রাহীম (আ.) এখানেও পূর্বের আমল করতঃ নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পৌঁছেন। (রুহুল মাআনী, ইবনে কাসীর)। বস্তুতঃ হাজিগণ এখনও তাঁর সেই স্মৃতি রক্ষার্থে মীনা প্রান্তরে স্থাপিত তিনটি স্তম্ভে সাতবার করে পাথর ছুঁড়ে থাকেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) আপন প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাঈলকে যখন আল্লাহর নামে কোরবানির উদ্দেশ্যে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে গলায় ধারালো ছুরি চালাতে উদ্যত হন, ঠিক সে সময় আকাশ থেকে গায়েবী আওয়াজ আসে- ইব্রাহীম ক্ষান্ত হও, অবশ্যই তুমি স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে দেখালে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) এ আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে যান। দিগন্তলোকে দৃষ্টি দিয়ে দেখেন, হাতে এক দুম্বা নিয়ে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে দ্রুত আগুয়ান। পরক্ষণেই তিনি সেখানে হাজির হয়ে ছুরির তলদেশ থেকে ইসমাঈলকে টেনে নিয়ে দুম্বাকে শুইয়ে দেন এবং পর মুহূর্তে ইব্রাহীম (আ.) এর হাতে তা-ই জবেহ হয়ে যায়। হাদীস শরীফে আছে- অপরাপর মানুষ অপেক্ষা আল্লাহর নবী-রাসুলগণ সর্বাধিক শক্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর বেলায়ও তাই ঘটল। তিনি একের পর এক পরীক্ষার সম্মুখীন হন। প্রথমে মা-বাপ, আত্মীয়-স্বজন সবাই তাঁকে ত্যাগ করল। তারপর অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হন। এরপর আসে মাতৃভূমি ত্যাগের কঠিন মুহূর্ত। অতঃপর প্রাণাধিক প্রিয় ইসমাইলের গলায় স্বহস্তে ছুরি চালানো। বাস্তবিক, এ সকল পরীক্ষা ছিল কঠিন থেকে কঠিনতম। কিন্তু তিনি প্রত্যেক পরীক্ষা হাসিমুখে বরণ করে প্রমাণ করে দিলেন- ইন্না-সালাতি ওয়া-নুসকি। অর্থাৎ আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত। ইতিপূর্বে আলোচনা থেকে পরিষ্কার হলো যে, হযরত আদম (আ.) এর যুগ থেকে একটি স্বতন্ত্র ইবাদত হিসেবে কোরবানি প্রথা চলে আসছে। তবে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর যুগ থেকে এর গুরুত্ব আরও অধিক বৃদ্ধি পায়। ফলে ইসলাম ধর্মেও গুরুত্ব সহকারে তা অনুমোদিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম, তাবী, তবেতাবী ও ইমামানে কেরাম থেকে এ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে এই এবাদত চালু রয়েছে। পবিত্র কোরআন সূরা কাউছারে এরশাদ হয়- ‘অতএব নামাজ আদায় কর তোমার রবের উদ্দেশ্যে এবং ‘নাহর কর।’ মুফাস্সিরীনে কেরামের মতে এখানে ‘নাহর’ অর্থ কোরবানি। তাফসীরে রুহুল মাম’আনীর ভাষ্যমতে কতিপয় ইমাম ঐ আয়াত দ্বারা কোরবানি ওয়াজিব হওয়াকে প্রমাণ করেছেন। তিরমিযী শরীফের হাদীসে আছে- হযরত আবদুল্লাহ্ বিন ওমর (রাযি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) দশ বছর মদীনায় ছিলেন এবং প্রতি বছর কোরবানি করেন।’ প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হযরত মোল্লা আলী আল্-ক্বারী (রাহ্) ‘মরিকাত’ কিতাবে লিখেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছর কোরবানি করায় কোরবানির আমল ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করে।’ এজন্যে হযরত ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) ছাহেবে নেসাবের উপর কোরবানিকে ওয়াজিব মনে করেন। ‘ওয়াফাউল ওয়াফা’ ও ‘কিতাবুল ফিকাহ আলাল্ মাযাহিবিল আরবাআ’ নামক প্রসিদ্ধ কিতাবদ্বয়ে লেখা আছে যে, রাসুল্লুল্লাহ্ (সা.) ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং অতঃপর কেরাবানি করেন। ইবনুল আসীর লিখিত ‘তারীখুল কামিল’ গ্রন্থে দ্বিতীয় হিজরীর ঘটনাবলী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়- ‘অতঃপর রাসুল্লুল্লাহ্ (সা.) বনী কায়নুকা’ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলে কোরবানির সময় এসে পড়ে। তাই তিনি ঈদগাহের দিকে গমন করেন এবং মুসলমানদের নিয়ে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। আর এটি ছিল মদনী যুগের প্রথম কোরবানির ঈদ। অতঃপর তিনি দুটি ছাগল, অন্য বর্ণনা মতে একটি ছাগল কোরবানি করেন। আর এটি ছিল তাঁর প্রথম কোরবানি, যা মুসলমানগণ প্রত্যক্ষ করেন।’