দেশে ডিজেল আছে ৩০ দিনের, অকটেন-পেট্রল ১৮ দিনের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা নিয়ে শঙ্কা

in blurthealth •  2 years ago 

দেশে ৩০ দিনের ডিজেল মজুত আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ। এ ছাড়া অকটেন ও পেট্রল মজুত আছে ১৮ দিনের।

বুধবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বিপিসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রায় সব ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে আমদানি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, দাম বাড়ানোর পরও প্রতি লিটার ডিজেলে ৬ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার দেশের বাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

আর অকেটন প্রতি লিটার ১৩৫ ও পেট্রল ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকেই নতুন দাম কার্যকর হয়।

বৈশ্বিক সংকটে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ক্রমেই কমছে। সংকট কাটছে না ডলারের। অপরদিকে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এছাড়া অব্যাহত আছে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি। ফলে ভারাসাম্যহীন হয়ে পড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি।

পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সংকটে-মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। সামনে ধেয়ে আসছে আরও মূল্যস্ফীতির ধাক্কা। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হচ্ছে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির। সর্বশেষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনার চতুর্থ ঢেউ, যা বাড়লে নষ্ট হবে সামষ্টিক অর্থনীতির গতিশীলতা।

উল্লিখিত সংকট ও নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ (শুক্রবার) শুরু হলো নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) যাত্রা। রাষ্ট্র পরিচালনার শীর্ষ পর্যায়, নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিবর্গ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আগামী বছরটি পার করতে হবে। এ সময়ে অনেক কিছুর ওঠানামা থাকবে।

নানাবিধ সংকটের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেছেন, শঙ্কা ও চ্যালেঞ্জের কথা। বুধবার সংসদে অর্থবিল উত্থাপনের সময় বলেছেন, এটি সবাই স্বীকার করেন যে, অর্থনৈতিক এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে না। আজকে যদি স্বাভাবিক সময় হতো, তাহলে যেসব সংশোধনের প্রস্তাব আমাদের কাছে আসছে সেখান থেকে অনেক সংশোধনী গ্রহণ করতে পারতাম। কিন্তু আমি আগেই বলেছি সময়টি এখন স্বাভাবিক নয়।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দুটি সমস্যা আছে। এক ডলার সংকট, দ্বিতীয় মূল্যস্ফীতি। শুধু আন্তর্জাতিক কারণে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে এটি ঠিক নয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিও মূল্যস্ফীতিতে অবদান রাখছে। এর মধ্যে নতুন বাজেট সম্প্রসারণমূলক। ফলে বর্তমান মূল্যস্ফীতি ৭.৪ শতাংশ বিরাজ করলে আগামীতে আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কথা মন্ত্রীরা বিভিন্ন স্থানে বলছেন। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। অপর দিকে নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেই। যেসব কর্মসূচির মাধ্যমে গরিব মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে বিশেষ করে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বৃত্তি এসব কর্মসূচির আওতা ও ভাতা কোনোটি বাড়ানো হয়নি।

এ অর্থবছরেও চলমান সংকটগুলো বিদ্যমান থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ কবে থামবে সেটি নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। ফলে জ্বালানি তেল ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমার বিষয়টি প্রায় অনিশ্চিত।

গত অর্থবছরে মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে অতিরিক্ত ৮২০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৭৬ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। আগামীতেও এই ব্যয় অব্যাহত থাকবে। আর এসব পণ্য ভর্তুকিতে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত এটি এক লাখ কোটি টাকা পৌঁছাতে পারে বলে অর্থ বিভাগ আশঙ্কা করছে। ফলে বড় অঙ্কের বর্ধিত ভর্তুকির টাকা সংস্থান করাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ডলার সংকট কাটছে না। বিপরীতে টাকার মূল্য কমছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের প্রধান শক্তি রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে না। বৈশ্বিক সংকট না কাটা পর্যন্ত নতুন অর্থবছরেও এ পরিস্থিতি বিরাজমান থাকবে।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশরে মধ্যে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়েই নতুন অর্থবছরের যাত্রা শুরু হয়েছে। এটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে নতুন বাজেটে এ উদ্যোগ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তাদের মতে, চলতি বাজেটের (২০২২-২৩) আকার টাকার অঙ্কে বেড়েছে ২০ শতাংশ। এই টাকা বাজারে আসবে। ফলে সম্প্রসারণ মূলক বাজেট মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে।

এ বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এটি আদায় বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ এরই মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে করোনার চতুর্থ ঢেউ। এ ঢেউ বিগত সময়ের মতো ছড়িয়ে পড়লে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আবারও থমকে যাবে।

যদিও অর্থ বিভাগ বলছে রাজস্ব বাড়াতে নজর দেওয়া হবে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় কর সংগ্রহে। এ ছাড়া বাড়ানো হবে ভ্যাট ও আয় করের নেট। বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে। দেশে চার কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত। যার অধিকাংশই আয়কর দিচ্ছে না। করযোগ্য আয়ধারী সবাইকে কর জালের আওতায় আনা হবে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলায় নতুন অর্থবছরে টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধনের নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। যা খুব শিগগিরই ঘোষণা দেওয়া হবে। আমদানিনির্ভর ও কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ রাখা হবে। নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন গতি হ্রাস করা হবে। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার এবং উচ্চ-অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার তাগিদ দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরি যুগান্তরকে জানান, অর্থনীতি স্থিতিশীলতার জন্য দুটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। মূল্যস্ফীতি বেশি হলে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে একে সংযত রাখার জন্য দৃষ্টি দিতে হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে-বহির্খাত (আমদানি-রপ্তানি)। এখন সেখানে অস্থিরতা চলছে।

আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। কার্ব মার্কেট ও ব্যাংকের মধ্যে ডলারের দামের পার্থক্য বেশি, এটি কমিয়ে আনতে হবে। না হলে অবৈধপথে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো বেড়ে যাবে। মনে রাখতে হবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের শক্তিশালী উৎস রেমিট্যান্স। অনেক শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছে। কিন্তু বৈধপথে সে তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে না।
petrol.JPG

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!