ঘুম হল দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঘুমের সময় সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে।যাদের রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয় তারা দিনের একটি সময় ঘুমিয়ে তা পুষিয়ে নেন। এতে করে রাতের ঘুমে আরও ব্যাঘাত ঘটে। তাই দিনের বেলা না ঘুমিয়ে রাতে নির্দিষ্ট একটি সময়ে ঘুমানোর রুটিন তৈরি করুন। এছাড়া রাতে ঘুমানোর ঘণ্টা দুই আগে থেকে মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখা বন্ধ রাখুন। মোবাইল বা টিভি থেকে যে নীল আলো বের হয়, তাতে ঘুমের মেলাটোনিন নামক হরমোন উৎপাদনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে।
ঘুমের মধ্যে শরীরের ড্যামেজ হয়ে যাওয়া টিস্যু রিপেয়ার হয়। তাই ত্বকের যত্নে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি মানুষের বিশ্রাম প্রয়োজন। আর সেই বিশ্রামের যোগান দেয় ঘুম।ঘুমের মধ্যে শরীরের ড্যামেজ হয়ে যাওয়া টিস্যু রিপেয়ার হয়। তাই ত্বকের যত্নে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। এর একটি মূল কারণ – ঘুম কম হলে আমাদের ক্ষুধা লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়। ২ ধরনের হাঙ্গার হরমোন আছে আমাদের। বাচ্চা এবং বড় সবার ক্ষেত্রেই প্রতিদিন ৭ ঘণ্টার কম ঘুমালে ওজন বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের একটি মূল কারণ। রাতে যথেষ্ট ঘুম রক্তচাপ ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ঘুম কম হলে দেহ স্ট্রেস হরমোন করটিসোল-এর নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় যা হার্টের উপর প্রেসার ফেলে।
ঘেরলিন এমন একটি হরমোন মস্তিস্কে ক্ষুধা লাগার বার্তা পাঠায়। তখন মস্তিস্ক আমাদেরকে খাবার খেতে বলে। তখন আমাদের দেহে এবং লেপ্টিনের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে আমরা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ ওজন বাড়াতে পারে। আর আমাদের ক্ষুধাভাব কমিয়ে আনে লেপ্টিন নামক হরমোন। ঘেরলিন হরমোন বেড়ে যায় ঘুম কম হলে। ঘুমের ক্ষেত্রে শরীর সুস্থ রাখতে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। অন্যদিকে সব বয়সের মানুষের জন্য ঘুমের সময়ের মাঝেও আছে পার্থক্য।
যাদের বয়স ৬ থেকে ৯, তাদের কমপক্ষে ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন; যাদের বয়স ১০ থেকে ১৭, তাদের প্রয়োজন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আর যারা বয়ঃসন্ধিকাল পার করছেন, তাদের ১১ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।অনেকেই এর চেয়ে কম ঘুমিয়েও সুস্থ থাকতে পারেন। তবে ঘুম কম হলে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতার।১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের জন্য ঘুমানো প্রয়োজন ৭-৮ ঘণ্টা। তবে ১১ ঘণ্টার বেশি কখনই ঘুমানো উচিত না, এতে করে উল্টা ঘটনাও ঘটতে পারে আপনার শরীরে।ঘুম কম হলে নতুন স্মৃতি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ঘুম কম হলে মস্তিষ্কে ‘বিটা অ্যামিলয়েড’ নামের ক্ষতিকর প্রোটিন তৈরি হয়। অ্যালঝাইমার রোগের সঙ্গে এই প্রোটিনটির সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের শরীর মস্তিষ্ক থেকে বিটা অ্যামিলয়েড ও এরকম অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে থাকে।
কাজেই ঘুম কম হলে অ্যালঝাইমার রোগ সৃষ্টিকারী এই প্রোটিনটি ও এরকম ক্ষতিকর পদার্থগুলো মস্তিষ্কে জমা হবে। আর যত দিন যাবে, ডিমেনশিয়া তৈরি হবে।অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুম একজনের শারীরিক বয়সকে তার প্রকৃত বয়সের চেয়ে দশ বছর বাড়িয়ে দেয়। যেসব পুরুষ রাতে মাত্র পাঁচ বা ছয় ঘণ্টা ঘুমান, তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে দাঁড়ায় তাদের চেয়ে প্রায় দশ বছর বেশি বয়সীদের সমান।শরীরের ওপর ঘুম কম হওয়ার নানারকম প্রভাব রয়েছে। প্রথমত, এর ফলে প্রজননতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
কম ঘুমের প্রভাব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপরও পড়ে। মাত্র এক রাত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমালে শরীরের ক্যান্সারপ্রতিরোধী কোষগুলোর ৭০ শতাংশ মরে যায়।এ সম্ভাবনা এতই বেশি যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেকোনো নাইটশিফটের কাজকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গভীর ঘুম রক্তচাপের প্রাকৃতিক চিকিৎসক। কারণ গভীর ঘুমের সময় হার্টবিটরেট কমে আসে, রক্তচাপ নেমে যায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুম না হলে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে পারেনা। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।আর এসব কাটিয়ে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন দিনে গড়ে আট ঘণ্টা ঘুম। ঘুম কম হলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার ওপরও খারাপ প্রভাব পড়ে। ঘুমানোর আগে চা কিংবা কফি পান করলে এতে থাকা ক্যাফেইন ঘুম কমাতে কাজ করে। ঘুমানোর আগে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিতে পারেন।
অন্যদিকে অনেকেরই চা-কফি পান করার অভ্যাস আছে ঘুমের আগে। আপনি যদি তেমনি কেউ হয়ে থাকেন, তবে আজকেই এ অভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। এতে ভালো ঘুম হয়।
এছাড়া বর্তমান করোনাকালীন অনেকেই ঘরে সময় কাটাচ্ছেন। এতে করে একঘেয়েমি ভর করছে আপনার ওপর।
তাই ঘুমানোর আগে একটু হেঁটে নিতে পারেন। হালকা ব্যায়াম অথবা ইয়োগাও ঘুমের ক্ষেত্রে খুব কার্যকর।
ঘুমানোর আগে বিছানা গুছিয়ে নেয়া ও পর্যাপ্ত বাতাস আর চারপাশ অন্ধকার আছে কিনা- এ বিষয়ের ওপরও নজর রাখা আবশ্যক।
ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে ঘুমানোর আগে বইপড়ার অভ্যাসও ঘুম আসার ক্ষেত্রে খুব কার্যকর।
ঘুম শরীর ও মন- দু’ক্ষেত্রেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো ঘুম যেমন আপনাকে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও অবসাদ থেকে দূরে রাখবে, তেমনি আপনাকে রাখবে সারা দিন ফুরফুরে মেজাজে আর মানসিকভাবেও সুস্থ আর হাস্যোজ্জ্বল।
ঘুমের স্বল্পতা প্রাণঘাতী স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ২০০% বাড়িয়ে দেয়।
এভাবেই কম ঘুম তৈরি করে অন্ত্রের ক্যান্সার, প্রোস্টেটের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের মতো নানা ধরণের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। টানা ১৬ ঘণ্টা নির্ঘুম কাটালেই মানুষ মানসিক ও শারীরতাত্ত্বিকভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করে।১৯ থেকে ২০ ঘণ্টা টানা না ঘুমিয়ে থাকলে কারো মানসিক ও শারীরিক অবস্থা মাতালের সমতুল্য হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক স্বাস্থ্যর সাথে ঘুমের সম্পর্ক নিয়ে অনেকগুলো গবেষণা রয়েছে।
যারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন তাদের অনেকেই দেখা গেছে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। এছাড়াও যারা ইনসোমনিয়াক তাদের মধ্যে অনেককেই ডিপ্রেশনে ভুগতে দেখা গিয়েছে।
পর্যাপ্ত পরিমানের ঘুম আমাদের দেহে ইনফেকশন কিলার সেলগুলোকে বৃদ্ধি করে। ফাইট করা এন্টিবডিগুলোর পরিমাণ কমতে থাকে ঘুম কম হলে এই ইনফেকশনের সাথে ফাইট করা এন্টিবডিগুলোর পরিমাণ কমতে থাকে।
ঘুমের সময় আমাদের দেহ সাইটোকাইয়ানিন নামক প্রোটিন রিলিজ করে যা ইনফেকশন ও ইনফ্লেমেশন দূর করতে সাহায্য করে। ঘুমের মধ্যে শরীরের ড্যামেজ হয়ে যাওয়া টিস্যু রিপেয়ার হয়। তাই ত্বকের যত্নে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।