গ্রামীণ মেলা গ্রাম বাংলার রুপ যেন সার্থকভাবে ফুটে ওঠে। মেলায় গ্রামের মানুষদের নতুন আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই আত্মপ্রকাশের মধ্যে একটা সর্বজনীন রূপ আছে। মেলা যে মিলনক্ষেত্র, তাই ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষের আনাগোনা।
Sorsce
মেলায় আগত দর্শকদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা থাকে। নাগরদোলা, লাঠি খেলা, কুস্তি, পুতুল নাচ, যাত্রা, কবি গান, বাউল ফকিরের গান, ম্যাজিক, বাইস্কোপ, সার্কাস ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে।
কখনো সার্কাসের জোকার ও সঙ্গের কৌতুকে হাসে লুটিয়ে পড়ে কেউ। কুমার, কুমার, সুতার, কৃষক, কাসারুর সাজানো পসরার বিকি-কিনি চলতে থাকে অবিরাম।
মেলায় পণ্যের কারিগরের সাথে ক্রেতার সরাসরি সংযোগ তৈরি হয়। নতুন নতুন নকশা ও কারো কাজের চাহিদা বাড়ে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোক সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান পূর্ণতা পায়।
স্বল্প পুঁজির অবহেলিত পেশাজীবী, যেমন: কামার, কুমোর, তাঁতী তাদের তৈরি পণ্য সহজে বেচা বিক্রি করতে পারে। এটা গ্রামীণ মেলা দেখতে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক দিক হিসেবে লক্ষ করা যায়।
মেলায় আসা বৈচিত্র্যময় পণ্যের শেষ নেই। হস্ত ও কুটির শিল্প জাত দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: বাঁশ বেতের তৈরি ডালা, কুল্লা, হাতপাখা, শীতলপাটি, নকশিখাতা, ডাল ঘুটনি, নারকেল কোরা, মাছ ধরার কোচ, জাকি জাল ইত্যাদি।
মৃৎশিল্পের সামগ্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: মাটির হাড়ি পাতিল, পাতিলের ঢাকনা ইত্যাদি। কামারের তৈরি লোহার জিনিস এর মধ্যে রয়েছে: দা, কাস্তে, ছুরি, খুন্তি, কোদাল, শাবল,বটি ইত্যাদি।
কাঠের তৈরি সামগ্রী মধ্যে দেখা যায়: পেরি, বেলুন, জল চৌকি, চেয়ার, টেবিল, খাট পালঙ্ক লাঙ্গল জোয়াল ইত্যাদি। তাছাড়াও মেলায় আসে শিশু খেলনা যেমন: পুতুল, বাঁশি, বল, গুলতি, লাটিম, মার্বেল ইত্যাদি।
মেয়েদের প্রসাধন উপকরণের আকর্ষণ যথেষ্ট থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ফিতা, চুরি, ক্লিপ, স্নো পাউডার, হালকা প্রসাধনী। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে মুড়ি মুড়কি, খই, খাজা, কদমা, চিনি, বাতাসা, জেলেপি, আমিত্তি, নিমকি, রসগোল্লা ,নারিকেলের নাড়ু, পিঠেপুলি ইত্যাদি নানা মুখরোচক খাবারের ক্রেতা ও দর্শকের আকৃষ্ট করে থাকে বলে আমার মনে হয়।
গ্রামীণ মেলা গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য। আবহমান বাংলার লোক সংস্কৃতির অংশ মেলার মাধ্যমে এক গাঁয়ের মানুষ সঙ্গে অন্য গায়ে মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
পরিচিত জনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, ভাবের আদান-প্রদান হয়। এতেশাম প্রীতি আর ও সদর হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলা চিত্র চরিত্রের পরিবর্তন এসেছে। বদলে গেছে এখন গ্রামীণ মেলা গ্রুপ। বৈদ্যুতিক বাতি, ব্যান্ড, সংগীত পুরোনো থেকে অনেকটা পাল্টে দিয়েছে। গ্রামে এখন এমন প্রাণোচ্ছল মেলা আর বসে না।
মেলায় পাওয়া যায় না আগের মত আর আনন্দ। এখন মিলাদু বদলিয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিউজিক, বক্স, মাইক ইত্যাদি আসার ফলে আগের দিনের মেলা চিত্র অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে।
বদলে যাচ্ছে আগের দিনের সংস্কৃতি এবং আনন্দ বিনিময় এর উৎসব মেলা। তবে গ্রামবাংলার মানুষেরা এখনও তারা মেলার মাধ্যমে নিজের জীবনের আনন্দ উৎসব খুঁজে নেয় তারা মেলায় একে অপরের সাথে আনন্দ করে।
গ্রাম বাংলার মানুষ যখন ধান কেটে ঘরে তোলে তখন তাদের মনে অন্য এক ধরনের আনন্দ হয় এবং তখন যদি কোন জায়গায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাহলে ওই মেলায় গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র কিনে আনে।
মেলাতে তাদের শিশু সন্তানদের কে নিয়ে যায়। তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মেলা থেকে কিনে নেয় এবং গান-বাজনার মাধ্যমে আনন্দ-বিনোদন করে এবং জীবনকে উপভোগ করে।
এখনকার মেলায় একটা জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বেড়ে গিয়েছে। তার কারণ আগের দিন মেলাগুলো ওই হিন্দু, মুসলমান সবাই একসাথে আনন্দ বিনোদন করত।
কিন্তু এখনকার দিনে তাঁর হচ্ছে না কারণ মানুষের মানুষের ভেদাভেদ নিয়ে গিয়েছে এক কোলাহল মধ্যে যেখানে শুধু ঝগড়া বিবাদ হয় সমাধানের কোনো বিষয় নেই।
তাই আমাদেরকে অবশ্যই মেলায় আনন্দ উৎসবে নিজের জীবনের আনন্দ বয়ে নিয়ে আসব এবং কষ্টগুলো মুছে নতুন দিন চলা শুরু করব।
আমার লেখাটা কষ্ট করে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ভাল থাকবেন বন্ধুরা সবাই।