লিখতে হোলে শিখতে হয় কথাটি সম্ভবত কবি নজরুল বলেছিলেন এবং অতি সত্য কথাই বলেছেন। শুধু লেখার কথা কেন, পৃথিবীতে এমন কোন কর্ম নেই যা উত্তমরূপে শিক্ষা না করে সুচারুরূপে সম্পাদন করা যায়।
Sorsce
আর সাহিত্য যেহেতু একটি সুকুমার বৃত্তি সেহেতু পূর্ণ আত্মনিবেদন ও একাগ্রতা ছাড়া সাহিত্যের ভুবনে প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদার আসন লাভ করা অসম্ভব।
পৃথিবীর যেকোন ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে যারা স্বনামধন্য হয়েছেন এবং অমরকীর্তি ও কর্মের স্বাক্ষর রেখেছেন, নিরলশ সাধনার মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছিল।
সাহিত্য হল চিন্তার বাহন। সাহিত্যের মাধ্যমে সূচিত হয় দেশ, সমাজ ও জাতি চিন্তাজগতের বিপ্লব ও পরিবর্তন। শুভ কল্যাণের দিকে, কিংবা অশুভ ও কল্যাণের দিকে। সুতরাং পরিপূর্ণ শিক্ষা, চর্চা ও সাধনের মাধ্যমে আমাদেরকে অর্জন করতে হবে সাহিত্যের অঙ্গনে সর্বোচ্চ সফলতা।
আমাদেরকে হতে হবে বাংলা ভাষার শক্তিশালী লেখক। দ্বীনের খেদমত ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে কলমী হবে আমাদের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। প্রশ্ন হল কিভাবে আমরা সাহিত্য সাধনা করব? কিভাবে সফল লেখক হওয়া যায়? লেখা শিখতে হলে কি কি আমাদের করতে হবে?
অতি সঙ্গত প্রশ্ন? তবে পোস্টে আজকে নয় বহুদিন আগে ইউরোপে এক স্বনামধন্য লেখোকের মনে তরুণ বয়সে প্রশ্ন জেগেছিল। নাম তার এডমন্ড এ্যাপলেড। ভবিষ্যতে তিনি যুগের সেরা লেখক ও সাহিত্যিক হতে চান কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব কি তার করণীয়?
হঠাৎ তার মাথায় একটু বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি সে যুগের শ্রেষ্ঠ 5 জন সাহিত্যিকের কাছে এ প্রশ্নের জবাবে পাঠালেন। আমার মনে হয় প্রখ্যাত এক তরুণের এই অভিনব প্রশ্ন যুগের সেরা সাহিত্যিকদের চমৎকৃত করেছিল।
তাই তারা প্রত্যেকে এডমন্ড কে তার প্রশ্নের উত্তর এবং সুচিন্তিত পরামর্শ পাঠিয়েছিলেন। জে, বি পিষ্টাল লিখেছেন, তুমি যদি আদর্শ লেখক হতে চাও তাহলে তোমার প্রথম কর্তব্য হলো আদর্শ লেখকদের পরামর্শ লেখাগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে বারবার পড়া, তারা কিভাবে লিখেছেন, কেমন শব্দ চয়ন ও বাক্য গঠন করেছেন, কি ধরনের রীতি ও ছেলে ব্যবহার করেছেন? কিভাবে বিষয়বস্তু বিস্তার ও সংকোচন করেছেন? কিভাবে বক্তব্য ও তার যুক্তি উপস্থাপন করেছেন? এগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবন করতে হবে।
দ্বিতীয় কর্তব্য হলো প্রতিদিন কোন না কোন বিষয়ে কিছু না কিছু লিখতে থাকা। ভুলে যেও না যে, কয়েকদিন বেশি পরিমাণ লেখা আছে প্রতিদিন অল্প পরিমাণ লেখা অনেক বেশী কার্যকর ও ফলপ্রসূ।
সমারসেট মম লিখেছেন-ভালো লেখক হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো হৃদয়ের গভীরে লেখার প্রতি আবেগ ও প্রেরণা এবং অনুরাগ ও মমত্ববোধ থাকা। এটাই তোমার লিখতে এবং শিখতে উদ্ধুদ্ধ করবে।
সহজাত প্রেরনাই তোমাকে উদ্দেশ্য করে উপনীত হওয়ার জন্য ব্যাকুল করে রাখবে। নিরুত্তাপ হৃদয়ে আর যাই হোক সাহিত্য চর্চা হয় না।
দ্বিতীয় কথা, যা কিছু তুমি লিখবে সহজ-সরল ভাষায় লিখবি। সহজ চিন্তা, সহজ শব্দ, সহজ বাক্য এবং সহজ বর্ণনা এগুলোই হল আদর্শ লেখার গুণ ও বৈশিষ্ট্য।
ঠিক যেভাবে তুমি তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর সঙ্গে অন্তরঙ্গ পরিবেশে অন্তরঙ্গ বিষয়ে আলাপ করো। নিকলাস মোমারট লিখেছেন-ভালো লেখক হওয়ার চারটি শর্ত।
প্রথমত কোন বিষয়ে লেখার আগে সে বিষয়ে যতটা সম্ভব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তোমার পথের সঞ্চয় যত সমৃদ্ধ হবে লেখাটিতে সারগর্ভ, গতিশীল ও হৃদয়গ্রাহী হবে।
তোমার অভিজ্ঞতা সীমানা থেকে দূরের কোনো বিষয়ে কখনো কলম ধরার চেষ্টা করো না। কেননা সেটা হবে পন্ডশ্রম।