আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন? আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছি।
আমি এবার লিখতে যাচ্ছি' বাংলাদেশের কুটির শিল্প সম্পর্কে। কুটির শিল্পের আগের অবস্থা, বর্তমান অবস্থা ও লুপ্ত শিল্পের পুনরুদ্ধারে আশার আলো সম্পর্কে কিছু তথ্য লিখব।
Sorsce
কুটিরে বা ঘরে বসে কুটিরবাসী অর্থাৎ সাধারণ মানুষ নিজ হাতে ছোট খাট যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে পণ্য উৎপাদন করে তাকেই কুটির শিল্প বলে।
দেশের মানবিক প্রয়োজন ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো সুগঠিত করতে প্রয়োজন শিল্পায়ন। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের ভূমিকা অতি নগন্য। জাতীয় আয়ের ১০% বা ১২% অর্জিত হয় কুটির শিল্প থেকে।
কুটির শিল্পে বেশি বেশি শ্রমিক নিয়োজিত থাকে। তাই আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বৃহৎ শিল্প কুটির শিল্পের অবদান অনেক বেশি। অতএব বাংলার গৌরব এই কুটিরশিল্প সংরক্ষণ ও উন্নয়ন অনিবার্য।
কুটির শিল্প ইউনিট গুলো পরিবারের সদস্যগণ বা স্বল্প আয়ের সাধারন মানুষ পূর্ণভা খন্ডকালীন সময় নিয়োজিত থাকে। শিল্পের হস্ত পণ্য এবং কারুকার্য সম্পর্কে উদ্ভাবনী শক্তি কুটির শিল্পের প্রাণ।
বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী যেসব শিল্পে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় এবং শ্রমিকের সংখ্যা ১০ এর কম, অথবা যে সব শিল্পীর বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় না শ্রমিকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০ এ ধরনের শিল্প কুটির শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আবার বিসিক এর মতে, "জমির মূল্য ব্যতীত স্থায়ী মূলধনের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকার অধিক না হলে তাকে কুটির শিল্প বলা হবে"।
একসময় বাংলাদেশের কুটির শিল্প বিখ্যাত ছিল। দেশের চাহিদা পূরণ করে প্রতিনিয়ত বিদেশে কুটির শিল্পের পণ্য রপ্তানি হতো। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হত। শতাব্দীকাল পর্যন্ত এদেশের কুটির শিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। এদিকে চাষিরা খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন করতে, অন্যদিকে কুটির শিল্পের এক ঘরে বসে নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন করত।
নানা ডিজাইন, নানা বর্ণ ও নানা কারুকাজ করা উৎপাদিত পণ্য, দেশে-বিদেশের হাতে শোভা পেত। কুটিরশিল্পীরা বাঁশ-বেত, কাঠ দ্বারা বিভিন্ন পণ্য, আসবাবপত্র ও বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র উৎপাদন করত।
তাঁতিরা সুতা দিয়ে কাপড়, কর্মকাররা লোহা ইস্পাত দিয়ে দা, ছুরি, কাস্তে, কোদাল, বটিসহ ছোটখাটো প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করত। শাঁখারিরা শাখা নির্মিত দ্রব্য, কুমারা কলস, জগ, হাড়ি, পাতিল, বাটি ইত্যাদি তৈরি করত। আমাদের কৃষককুল সহ জেলে, কুমার, কামার, কর্মকার, শাখারী, তাঁতি ইত্যাদি সকল ধরনের মানুষ সুখেই দিনাতিপাত করতে।
বর্তমানে বৃহৎ শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতে না পেরে আমাদের কুটির শিল্পের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। আজ বৃহৎ শিল্পের উৎপাদিত দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম, চিনামাটি, লোহা, প্লাস্টিক, মেলামাইনের পত্র আমাদের কুটির শিল্পের ওপর আঘাত হেনেছে।
অপরদিকে ভোক্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পাখা, ঝুড়ি, ঝাঁকা, মাদুর, চাটাইসহ বহুবিধ জিনিসপত্র বৃহৎ শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে। কারোয়ন বৃহৎ শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেক কম, স্বল্প সময়ে স্বল্প ব্যয়ে অনেক জিনিস উৎপাদন করা যায়। বৃহৎ শিল্পের মালিকদের রয়েছে বিপণন ও বাজারজাত ব্যবস্থার সুবিধা এবং অধিক পুঁজি। ফলে বৃহৎ শিল্প গুলো অনেক শক্তিশালী। অথচ কুটির শিল্পের মালিকদের এ সকল সুবিধা নেই, ফলে বেকার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি শিল্প।
লুপ্ত শিল্পের পুনরুদ্ধারে আশার আলো:
পুঁজি, কাঁচামাল, বিপণন বাজারজাত সহ সার্বিক সুযোগ সুবিধার অভাব থাকা সত্বেও কুটিরশিল্প আজও শুধু টিকে থাকেনি বরং নিত্যনতুন নানাবিধ পণ্য উৎপাদন করে যাচ্ছে। রেশম শিল্প তাঁতের কাপড় কাতান বেনারসি শাড়ি বুটিক ও নিপুন হাতের তৈরি কারুকাজ ময় কাপড়-চোপড় আবার ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে।
কুটির শিল্পের অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হলে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। রপ্তানি যোগাযোগ ও বাজারজাত সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এ শিল্পের উন্নয়নে আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
আমাদের সকলেরই দেশি পণ্য তথা কুটির শিল্পে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারে উৎসাহী হতে হবে। কুটির শিল্প সময়ের সাথে সাথে যাতে নবরুপ লাভ করতে পারে, অল্প ব্যয়ে অধিক উৎপাদন করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই আমাদের কুটির শিল্প হারানো গৌরব ফিরে পাবে। এ শিল্পের সাথে জড়িত এদের মাঝে ফিরে আসবে নবজাগরণ।