মানুষ সামাজিক জীব। পরিবারের মধ্যেই গড়ে ওঠে মানুষের সামাজিক জীবনের ভিত্তি। পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে পিতা মাতা। পিতা-মাতা-সন্তান সর্বাপেক্ষা আপনজন, সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়। পিতা-মাতা সন্তানের জন্য আল্লাহ তাআলার সেরা উপহার।
সিস্ট এর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী হিসেবে মানব শিশু জন্মগ্রহণ করে। সন্তান লালন পালন, দুঃখ কষ্ট লাঘব ও সুখ শান্তি উন্নতির জন্য, পিতা-মাতা নিজের সুখ শান্তি ও আরাম-আয়েশ কে বিসর্জন দিয়ে থাকেন।
সন্তানের ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে পিতা-মাতা চিহ্ন আদর সন্তানের দুঃখ-কষ্ট লব ও উন্নতির জন্য পিতা-মাতার আকুলতা, বধিরতা সর্বোপরি ত্যাগ-তিতিক্ষার কোন তুলনা হয় না।
পিতা-মাতার এরিন সন্তান কোনদিন শোধ করতে পারে না। তাই পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের রয়েছে অপরিসীম কর্তব্য। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১) জীবিত থাকা অবস্থায় পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য:
ক) সদ্ব্যব্যবহার: পিতা মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা সন্তানের প্রথম কর্তব্য শ্রেষ্ঠত্ব সওয়াবের কাজ। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান আল্লাহর গজব পতিত হয়। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, মায়ের পদ তলে সন্তানের বেহেশত। যে সন্তানের ব্যবহারে পিতা-মাতা সন্তুষ্ট থাকেন, তার ইহকাল এবং পরকাল সুন্দর হতে পারেনা। সুতরাং পিতা-মাতার সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে।
খ) পিতা-মাতার আনুগত্য করা: আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পিতা-মাতা যে কোনো নির্দেশ পালন করা, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা অবশ্য কর্তব্য। পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনে পিতা-মাতাকে সম্ভাব্য সর্ব প্রকার সহযোগিতা করা সন্তানের পবিত্র দায়িত্ব কর্তব্য।
গ) ইজ্জত সম্মান রক্ষা করা: পিতা-মাতা-সন্তান এর জন্য সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। প্রবাহের মান সম্মানের হানি হয় এমন কোন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এমন কোন কথা, কাজ বা আচরণ করা যাবে না, যাতে আদবের খেলাফ হয়, তাদের মান সম্মান নষ্ট হয়।
ঘ) সেবা-যত্ন করা: পিতা মাতার সেবা যত্ন করা সন্তান নিজের জন্য গৌরবের মনে করবে। তারা যখন বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছেন, চলাফেরায় কষ্ট পান, একান্ত প্রয়োজনীয় কাজগুলো একা করতে পারেন না, তখন সন্তান তাদের সাহায্য ও সেবা যত্নের প্রতিবেশী বেশি নজর দিবে।
ঙ) সন্তুষ্টি বা খুশি: পিতা-মাতা যেন ন্যায় সঙ্গত ভাবে সন্তানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখা কর্তব্য। তাদের ন্যায়সঙ্গত সন্তুষ্টি দ্বারা, সন্তানের ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্যের পথ সহজ হয়ে যায়। তাদের অসন্তুষ্টির কারণে সন্তান ইহকালে শান্তি পরকালে জাহান্নামের বাসিন্দা হতে পারে।
চ) আর্থিক সেবা: পিতা-মাতার প্রয়োজন ও নিজের স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখে তাদের আর্থিক সেবা প্রদান করা সন্তানের কর্তব্য।
২) পিতা-মাতার ইন্তেকালের পর সন্তানের কর্তব্য:
ক) দোয়া ও দান করা: পিতা-মাতার ইন্তেকালের পর তাদের পরকালীন মুক্তির জন্য সর্বদা দোয়া করা এবং আর্থিক দান-খয়রাত করা, সারাজীবন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা সন্তানের একান্ত কর্তব্য।
খ) ওসিয়ত, ঋণ পরিশোধ ওয়াদা পূরণ করা: পিতা-মাতার জীবিত অবস্থায় তাদের কৃত ন্যায় সংগত ওয়াদা, শরীয়ত সম্মত ওসিয়ত এবং কোনদিন করে থাকবে তার জরুরী ভিত্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করা সন্তানের কর্তব্য।
ধনে মনে জ্ঞানে গুণে বড় হলেও সন্তান পিতা মাতার নিকট স্নেহ পাওয়ার যোগ্য। পারিবারিক জীবন সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা, জন্মদাতা পিতা মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করা। এতে রয়েছে সন্তানের ইহকালীন ও পরকালীন সুখ শান্তি।