এ কালের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী গণমাধ্যম হচ্ছে টেলিভিশন। এ এক বিস্ময়কর গ্রাহক যন্ত্র। ছোট বউ পদ্মায় মুহূর্তেই ভেসে ওঠে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে সম্প্রচারিত যে কোন ঘটনা, অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি সব জীবন্ত ছবি।
Sorsce
সদ্য ঘটনা ছবি ছাড়াও ধারণকৃত ছবিতে দেখানো চলে। ফলে টেলিভিশন এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হয়ে উঠেছে তথ্য, শিক্ষা ও বিনোদনের অপরিহার্য মাধ্যম।
গ্রিক 'টেলি' আর লাতিন 'ভিশন' শব্দযোগে গঠিত টেলিভিশন শব্দটির অর্থ হচ্ছে দূর্দর্ষণ। ১৯২৬ সালে বিজ্ঞানী লেগি বেয়ার্ড প্রথম সাদাকালো ছবির সকল পদ্ধতি সম্প্রচারের সফলতা দেখান।
তার ঐ পথ ধরে প্রকৌশলী আইজাক সেনবাগের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে বিশ্বের প্রথম সফল টিভি সম্প্রচার শুরু করে বিবিসি। পঞ্চাশের দশক উন্নত বিশ্বে টেলিভিশনে হয়ে ওঠে প্রধান গণমাধ্যম। সম্প্রতিককালে টেলিভিশন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অগ্রগতি হয়েছে।
তার ওই ফসল রঙিন টেলিভিশন, ফ্ল্যাট টেলিভিশন, পকেট টেলিভিশন ইত্যাদি ।এছাড়া মহাকাশ গবেষণা ও টেলিভিশনের বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটেছে। স্যাটেলাইট টিভি সম্প্রচার তারই প্রত্যক্ষ ফল।
বাংলাদেশের প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৪৬ সালে, কেবল ঢাকা শহরে। উপগ্রহের মাধ্যমে ঢাকার বাইরে টিভি সম্প্রচার শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের হাজার ১৯শে ডিসেম্বর চট্টগ্রামের টিভি কেন্দ্র চালু হয়।
সংবাদ মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন:
স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যাণী টেলিভিশন এখন ২৪ ঘন্টা তথ্য প্রদানে সক্ষম। গণযোগাযোগের বিশ্বব্যাপী টেলিভিশনের যে ভূমিকা পালন করেছে তা অভাবনীয়।
সংবাদ মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের ভূমিকায় এখন গ্রামের নিরক্ষর মানুষ অচেতন হয়ে উঠতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ঘটনা বা পরিস্থিতিতে টেলিভিশন সংবাদ মাধ্যমে হিসেবে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
যার ফলে লোকজন জেনে যায় কখন কোন বিপদের আশঙ্কা আছে আগে থেকেই টেলিভিশনের খবরে তার সতর্ক করে দেয়। টেলিভিশন দেখে এই গ্রামের লোকজন এরা বিপদকে কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন:
টেলিভিশন আমাদের জীবনে এনে দিয়েছে বৈচিত্র্যময় বিনোদনের সুযোগ। টিভিতে সম্প্রচারিত সৃজনশীল মনমুগ্ধকর নানা অনুষ্ঠান আমাদের অভিভূত করে।
সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, ম্যাগাজিন, অনুষ্ঠান ইত্যাদি উপভোগের সুযোগ আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে পাচ্ছি। টেলিভিশনের সুবাদে আমরা খেলার মাঠে না গিয়েও, অলিম্পিকো বিশ্বকাপ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খেলা দেখতে পারি। সিনেমা হলে না গিয়েও, ঘরে বসে নানা চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারি।
শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন:
টেলিভিশন গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। টেলিভিশনের পর্দায় পাঠ্যসূচির বিষয় আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপিত হয়। ফলে তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়।
ডিসকভারি, অ্যানিম্যাল প্লানেট, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, দি হিস্টরি চ্যানেলের কল্যাণে জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
টেলিভিশনে প্রচারিত বিতর্ক, আলোচনা, সিনেমার, মুখোমুখি অনুষ্ঠানে বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ টেলিভিশন ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারে ও আমাদের টেলিভিশন সচেষ্ট।
অন্যান্য ক্ষেত্রে টেলিভিশনের ভূমিকা:
টেলিভিশনের আরো কিছু ভূমিকা রয়েছে। দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া আর সরকারের ভূমিকা জনগণকে অবহিত করার ব্যাপারে টেলিভিশন মুখোপাধ্যায় ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়া জনমত সৃষ্টিতে টেলিভিশন কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে টেলিভিশন কুপমন্ডুকতা ও সংকীর্ণ তার হাত থেকে আমাদের বাসায় এবং দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
রাষ্ট্রীয় বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে টেলি সম্মেলনের আয়োজন এখন তথ্য বিনিময় এর সর্বাধিক পন্থা হিসেবে সমাদৃত।
টেলিভিশনের কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। টিভির প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। টেলিভিশনের আকর্ষণ তরুণদের খেলাধুলা থেকে বহুলাংশে বিরত করছে।
টিভিতে খেলা দেখার চেয়ে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা যে দেহ-মনের জন্য ছিল তা এখন তরুণরা ভুলে যেতে বসেছে। তাছাড়া স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচারিত এক ধরনের অনুষ্ঠান তরুণ প্রজন্মকে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
কুরুচিপূর্ণ এবং স্থূল বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার নৈতিক অধঃপতন ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হচ্ছে। অন্যদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্রমেই পরিণত হচ্ছে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানে।
পাঞ্জাবের বিজ্ঞাপন প্রচার করে ভোগ্যপণ্যের বাজার তৈরি এদের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভোগ্য পণ্যের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করে এরা তরুণদের ভবন জীবনদর্শনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যার সমাজ প্রগতির অন্তরায়।
আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে টেলিভিশনকে শিক্ষা সংস্কৃতি ও উন্নয়নমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
জাতির নৈতিক চরিত্রের উত্তরণ ঘটনার ক্ষেত্রে টেলিভিশন হতে পারে কার্যকর বাহন। তাই টেলিভিশন যেন সুস্থ সাংস্কৃতিক বিকাশ এর পরিপন্থী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে তা নিশ্চিত করা দরকার।
টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে খবর অতি সহজেই পেয়ে থাকে। কোন দেশের কি পরিস্থিতি হয় তা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি।
এটা অনেক ভালো একটা দিক। কারণ সারাদেশ সহ বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে সকল ধরনের খোঁজখবর নিতে পারছি এলিভেশন এর মাধ্যমে।
টেলিভিশন শুধু খোঁজখবরই দেয় না বরং শিক্ষামূলক অনেক বক্তব্য তুলে ধরে। এই টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কখন বৃষ্টি হতে পারে বা কখন ঝড় হতে পারে এসব কিছুর আগামী বার্তা টেলিভিশনের মাধ্যমে খবর সম্প্রসারণ করে।
শুধু টেলিভিশনে ভালো দিক লক্ষ্য করলেই নয় বরং এর খারাপ দিকও আছে। কারণ টেলিভিশনের মাধ্যমে অসংখ্য যুবক-যুবতী টেলিভিশন দেখার এক আসক্তি হয়েছে। ছেলে নিয়েছে তাদের অধঃপতনের দিকে।
তাছাড়া টেলিভিশন দেখে দেখে তাদের চোখে সমস্যা হচ্ছে এবং টেলিভিশন দেখার লোভে খেলাধুলা থেকে বিরত থাকার ফলে তারা জীবন-যাপন করছে।
এসব দিক লক্ষ্য করলে দেখা যায় টেলিভিশনের ভাল দিকও আছে কিন্তু কিছু খারাপ দিকও আছে। তাই আমাদের উচিত খারাপ দিকগুলো বর্জন করে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করা।
এবং প্রয়োজনের সময় টেলিভিশন দেখা আর খেলাধুলার সময় খেলাধুলা, ঘোরাফেরা ইত্যাদি করা।