রূপময় দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ ছায়াঘেরা মায়াভরা সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশ ফুল আর ফলের দেশ ফুটন্ত ফুলের শুভ্র হাসি বাড়ন্ত ফলের নতজানু গাছের অপরূপ দৃশ্য হৃদয়ে রেখাপাত করে।
Sorsce
বহুরূপী প্রকৃতি যেন নতুন মনোহারী সাজে সজ্জিত হয়ে আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হয় ছয়টি বিভিন্ন ঋতুতে আমরা আমাদের বাংলাদেশকে দেখতে পায় বিচিত্র ফুল আর ফলের সমারোহে। সত্যিই স্রষ্টা কি অপূর্ব সম্পদেই না আমাদের সম্পদশালী করে তুলেছেন।
বাংলাদেশের প্রকৃতি বাংলার মানুষকে বিলাসী করে তুলেছে অতি সাধারণ লোকের বাড়ির আঙ্গিনায় ও দূ-একটি ফুল ও ফলের গাছ দেখতে পাওয়া যায় বেলি ওশিউলির মালা পড়ে আজও আমরা বিলাস উৎসবে আনন্দে পুলকিত হই।
জীবনের স্নিগ্ধ মুহূর্তগুলো ও মালতির গন্ধে মধুর করে তোলে রজনীগন্ধার প্রীতিস্নিগ্ধ সুঘ্রানে বিতরণ করে আমরা ধন্য হই উৎসবের দিনে বিচিত্র ফুলের গুচ্ছ প্রিয়জনদের হাতে তুলে দিয়ে তৃপ্তি অনুভব করি। তাই আমাদের গর্ব আমাদের দেশে অপরূপ সৌন্দর্যের ফুলগুলো আমরা সৌন্দের্য্যে নিমজ্জিত করে প্রিয়জনদের হাতে তুলে দিই।
গৃষ্ম আসে প্রচন্ড উত্তাপ আর কাঠফাটা রৌদ্র নিয়ে একটু সায়া আর একটু শীতল আশ্রয়ের জন্য মানুষ পশু পক্ষী সবাই কাতর হয়ে ওঠে কিন্তু মৃদুমন্দ দখিনা বায়ু গ্রীস্মের এ খরতাপ দূর করে প্রাণে শীতল পড়শীর দোলা দেয় শুধু তাই নয়।
গৃষ্ম কালে সুমিষ্ট ফল আম কাঁঠাল লিচু বেল গোলাপ জাম প্রভৃতি মানুষের সুখের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। চাপা বেল বকুল জবা কবরী এসময়ের ফুল। এসব ফুলের গন্ধ খুবই সুন্দর ঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয়ায় পুরো এলাকা এমনকি কাঁঠাল ফল খেতে অনেক মজা।
গ্রীস্মের ফল কাঁঠাল আর কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। কাঁঠাল ফল এর ওপর শক্ত আবরণ চামড়া দিয়ে ঢাকা এবং ভিতরে খুবই সুমিষ্ট এর রুয়া বা ফল। কাতার ফল খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং সুস্থ থাকে মানুষ কাঁঠাল ফলের রস অতি মিষ্ট তাইতো হয়েছে এটা আমাদের জাতীয় ফল।
গৃষ্ম আসে প্রচন্ড উত্তাপ আর কাঠফাটা রোদ্দুর নিয়ে একটু ছায়া আরেকটু শীতল আশ্রয়ের জন্য মানুষ এখানে সেখানে খুঁজে বেড়ায় ফল-ফলাদির গাছের নিচে আশ্রয় নেয়।
গ্রীস্মের মতোই বর্ষায় ক্রমাগত বৃষ্টিপাত মানুষের অসহ্য হয়ে ওঠে চারদিকে কেবল পানি আর পানি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার উপায় নেই তবুও জানালার ফাঁক দিয়ে কদম গাছে দেখা যায় অজস্র ফুলের সমারোহ পাশের থেকে ভেসে আসে কেয়া ফুলের গন্ধ।
কদম কে ছাড়াও কেতকী কুন্দ যুথি এ ঋতুর প্রধান ফুল। পেয়ারা জাম আনারস কাটার পরবর্তী সময়ে প্রধান ফল তাছাড়া ঝিঙ্গা ভুই কুমড়া শসা ইত্যাদি এ সময়ের তরিতরকারি আর এসব খেতে অনেক সুস্বাদু হয় এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
শরৎ ও হেমন্তের নিম্ন রমণীয় বার্তা নিয়ে আসে শেফালী ফুলের আভাস। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমায় সর্বোচ্চ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাব। ঝোপঝাড়ের আড়ালে গাছগাছালির দেয়াল কোয়েলের সুর লহরীতে মুখরিত হয়।
প্রভাতের শিশির মনে জায়গা এক অপূর্ব সজীবতা জলপদ্ম স্থলপদ্ম যেন রূপ আর সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা পরিবেশ মাতাল করে তোলে। শরতের জ্যোৎস্নাধারা প্রাণে জাগায় অপূর্ব শিহরণ। শরতের প্রধান ফুল কাশ আর শেফালী।
শরৎ হেমন্ত এর ফল তাল নারিকেল বাতাবি লেবু আমচুর পেয়ারা ইত্যাদি। সত্যিকারে ফল ও ফুলের ভরা মৌসুম শীতকাল। এ সময়ের গাদা অতসী গোলাপ চন্দ্রমল্লিকা রজনীগন্ধা প্রভাতী মনোহর ফুল সৌরভ বিস্তার করে। শাকসবজি ও তরিতরকারির মৌসুম শীতকাল।
আলু মুলা কপি সিম গাজর ও পালং শাক সবজির সময় প্রচুর পাওয়া যায়। শীতে ফলপ্রসূ মেলে আঙ্গুর বেদনা পেস্তাবাদাম কমলা কুল পেঁপে ডালিমে সময়ে প্রচুর মিলে শীতকালে ভোগের মৌসুম বললেও অত্যুক্তি হয় না।
এর পরেই সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত বাংলাদেশ অতিশয় মনোরম রূপ ধারণ করে। বনে বনে কোকিলের কুহুতান নতুন পল্লব বনে বনান্তরে মধুপগুঞ্জন। সত্যিই বসন্তের ঋতুরাজ আখ্যা সমর্থন এসময়ের দখিনা বাতাসের মৃদু কুঞ্জবন আন্দোলিত হয়ে ওঠে মধুমক্ষিকার গুঞ্জনে বনভূমি ধ্বংস হতে থাকে।
শিমুল অশোক কৃষ্ণচূড়া পলাশ ফুলের বাহার মনে উতল হাওয়া বয়ে দেয় আম জাম কাঁঠাল জামরুল শাহেদা তরমুজ ডাব কলা পেঁপে কুল প্রভাতী এসময় প্রধান ফল এসব খেতে অনেক মজা।
এদেশের জুই জবা মালতি মল্লিকা অভিজাত শ্রেণীর ফুল কিন্তু অতসী অপরাজিতা দোপাটি ও কবরী কেই তুচ্ছ মনে করবো কি বলো। অল্প যত্নে গাধা ফুল ও অনেকদিন বাগান আলো করে চোখের তৃপ্তি সাধন করে থাকে কিন্তু অল্প যত্নের জন্য বলে এর প্রতি আমাদের নেশা কম কথাটি লজ্জা হলেও অতিশয় সত্য।
ফলের বেলাতেও দেখা যায় পেঁপে বিনা যত্নে হয় কিন্তু আজকের বাংলাদেশের শতকরা কয়টি বাড়িতে বা কাগজি লেবুর ছাল দেখা যায় এমন কি ভাল কলাগাছে ও শতকরা আশিটি বাড়িতেই নেই।
অথচ এসব ফল আমাদের জন্য খুবই উপকারী এবং এসব ফল গালগুলো অল্প যত্ন দেই বড় হয় এবং ফল দিতে শুরু করে বাড়ির আঙিনায় বা ঝাড় জঙ্গল এর মধ্যেও এই গাছগুলো বড় হয়ে থাকে কিন্তু কেউ এসব গাছ রাখতে চায়না পারেনা বা এসব গাছ রোপন করে না।
ফুল ও ফলের চাষ এর ব্যাপারে বাঙ্গালীদের আরেকটি লজ্জার কথা আছে অনেকেই মনে করেন দুই চার জন বিলাসী ও ধনী ব্যক্তিই ফল ফুলের চাষ করবে। ফল ফুলের চাষে অর্থ ব্যয় ও সময় নষ্ট হয় এটি এজাতীয় লোকের ধারণা।
কথাটি মোটেও সত্য নয় বরং সভ্যতাও রুচির বিকাশ ফুল ও ফলের চাষ আবাদের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। সভ্যতার প্রথম বিকাশে মানুষ এর স্বর্গীয় ফুল দেখে চমৎকৃত হয়েছিল সে ফুল আর ফলের দেশে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি এ মাটি অতি উর্বর হয়ে থাকে। চাষাবাদ থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু করা হয় না কেন সব কিছুতেই ভালো ফল পাওয়া যায় এ মাটিতে। আমাদের এ মাটিতে ফল ফুল সব ধরনের গাছ জন্মে শুধু একটু যত্ন নেওয়া দরকার।
তাই আমাদের উচিত ফল ফুল গাছ বেশি বেশি রোপণ করা এবং পরিবেশকে নমনীয় নাতিশীতোষ্ণ পরিণত করা।