আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আল্লাহর রহমতে আমি সুস্থ আছি।
আশা করি আপনারও সুস্থ আছেন।
আর্সেনিক এক যমীনী আযাব। সুফল হিসাবে রোগ মহামারীর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ পানিবাহিত রোগ ব্যাধি থেকে বহুলাংশে মুক্ত হয়েছিল। কিন্তু সে নিরাপদ নলকূপ এখন হয়ে পড়েছে মৃত্যু- কূপ, কারণ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি নলকূপের পানিতে আর্সেনিক মারাক্তক মিশ্রণ ধরা পড়েছে । এবং তা গ্রহণযোগ্য ও সহনীয় সীমার এত উপরে চলে গেছে যে, স্বাস্থ্য-কর্তৃপক্ষ লাল চিহ্ন দিয়ে সেগুলোর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে । কিন্তু বিস্তীর্ণ জনপদের অশিক্ষিত সহজ সরল মানুষ শহুরে বাবুদের অনেক ঘটা করে এঁকে দিয়ে যাওয়া এসব লাল চিহ্নের মোজেযা বুঝতেই পারেনি বহু দিন। তাছাড়া পানির কোন বিকল্প ব্যবস্থাও তো নেই। তাই মানুষ এত দিন সব নলকূপ ওই ব্যবহার করে এসেছে অবাধে। ফলে আর্সেনিক দূষণ জনিত রোগ ব্যাধি ভয়াবহ রকমের বিস্তার লাভ করেছে। ইতিমধ্যে বহু রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। অবশ্য আর্সেনিক দূষণের বিস্তার যেহেতু শহরের তুলনায় গ্রাম-জনপদেই বেশি তাই এত বড় একটা জাতীয় দুর্যোগ কর্তাবাবুদেরকে তেমন নাড়া দিতে পারেনি এবং যদিও দিন দিন আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে কিন্তু প্রতিকারের তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এখনও উদ্ভাবিত হয়নি।
এক জরিপ মতে ১৯৭৮ সালের আর্সেনিক দূষণের বিষয়টি ধরা পড়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত কোটি লোক কোনো না কোনো পর্যায়ে আর্সেনিক বিষক্রিয়ার শিকার হয়ে পড়েছে। এবং ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৪৯ টি জেলার নলকূপেই আর্সেনিকের বিপজ্জনক মিশ্রণ ধরা পড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে অবশ্য বিষয়টি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ১০.১১.৯৮ তারিখে প্রকাশিত এক তথ্যপূর্ণ প্রতিবেদনে এটাকে ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিপর্যয় এবং গনবিষপান বলে উল্লেখ করেছে।
আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় চামড়ায় ও হাত পায়ের তালুতে ঘা হওয়া এবং পরবর্তী পর্যায়ে লিভার ও কিডনি আক্রান্ত হওয়া, শরীরে পচন ধরা এবং সর্বশেষ পর্যায়ে অসহায় ভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক উত্তোলন ও ব্যবহারকেই আর্সেনিক দূষণের প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞগণ চিহ্নিত করেছেন। আর্সেনিক দূষণের ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে মুক্তির জন্য কিছু কিছু প্রচেষ্টা অবশ্য চলছে। বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এম এ হাসান সম্পূর্ণ দেশজ প্রযুক্তিতে এবং নামমাত্র খরচে আর্সেনিক দূষণযুক্ত পানি বিশুদ্ধকরণের একটি সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
এতক্ষণ আমার পড়াটা কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।