নবান্ন উৎসব
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষিসংশ্লিষ্ট অনেক উৎসব রয়েছে। নবান্ন উৎসব এর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণই কৃষিজীবী। কঠিন মাটিকে তারা তাদের শ্রম ও শক্তির দ্বারা নমনীয় করে সেখানে প্রাণের জোয়ার সৃষ্টি করে। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অসম্ভব খাটুনির পর খেতের সোনালি ফসল যখন তারা ঘরে তুলতে পারে তখন তাদের প্রাণেও আনন্দের বান ডেকে যায়। নবান্ন উৎসব এই আনন্দমুখর প্রাণেরই উৎসব। হেমন্তের শুরু থেকেই সারা বাংলার ঘরে ঘরে ফসল তোলার ধুম পড়ে যায়। তখন এই লোকউৎসব গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয়। উৎসবের দিন ভোর না হতেই ছেলেমেয়েরা ঘরের বাইরে এসে ছড়া কেটে দাঁড় ।
Sorsce
নিমন্ত্রণ করত। এ দিন ভোরে নতুন ধানের নতুন চাল ঢেঁকিতে কোটা হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ির প্রবীণরা পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেন এবং ছোট ছেলে-মেয়েরা নতুন জামা-কাপড় পরে। এরপর বাড়ির উঠোনে গর্ত করে জ্যান্ত কই মাছ ও দুধ দিয়ে একটি বাঁশ পোঁতা হয়। একে বলে বীর বাঁশ। বীর বাঁশের প্রতিটি করিতে নতুন ধানের ছড়া বাঁধা হয়। বীর বাঁশ পৌতার পর একটি কলার খোলে চাল মাধ্য কলা ও নারকেলের নাড়ু কাককে খেতে দেওয়া হয়। কাককে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত এ পর্বটির নাম 'কাকবলি'। এই অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আহার করে না। শস্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীকে পূজা এবং নবার দিয়ে পরে সকলে আহার করে। ক্রমান্বয়ে এই লোক উৎসবটি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমান সময়ে নবান্ন উৎসবের ব্যাপকতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আমাদের উচিত বাংলা ও বাঙালির এই লোক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা।