সালোকসংশ্লেষ (Photosynthesis)

in r2cornell •  2 years ago 

১৮৯৮ খৃষ্টাব্দে বিজ্ঞানী বার্নেস (Bernes) সালোকসংশ্লেষ বা ফটোসিন্থেসিস শব্দটি প্রচলন করেন ।যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে আলোর উপস্থিতিতে পরিবেশ থেকে শোষিত জল ও গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের আলোক রাসায়নিক ও জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সরল শর্করা (গ্লুকোজ) সংশ্লেষিত হয় ও উৎপন্ন খাদ্যে সৌরশক্তি স্থিতিশক্তি রূপে আবদ্ধ হয় এবং উপজাত বস্তু হিসেবে পরিবেশ থেকে গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সম-অণু অক্সিজেন ও জল উৎপন্ন হয়, তাকে সালোকসংশ্লেষ বা (Photosynthesis) বলে ।
photosynthesis (7).jpg

গ্রিক শব্দ ফোটোস (Photos) শব্দের অর্থ আলোক এবং সিন্থেসিস (Synthesis) শব্দের অর্থ সংশ্লেষ ।
সবুজ উদ্ভিদেরা পরিবেশ থেকে কাঁচামাল - কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জল সংগ্রহ করে পাতার মেসোফিল কলায় নিয়ে আসে । সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এবং ক্লোরোফিলের সক্রিয়তায় জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় শর্করা জাতীয় খাদ্য - গ্লুকোজ ।1940 খৃষ্টাব্দে বিজ্ঞানী রবার্ট হিল কোষ থেকে সংগৃহিত ক্লোরোপ্লাস্ট, হাইড্রোজেন গ্রাহক পটাশিয়াম ফেরিক অক্সালেট (A) এবং জলের মিশ্রণ আলো প্রয়োগ করে দেখান যে, পটাশিয়াম ফেরিক অক্সালেট বিজারিত হয়ে ফেরাস একসলেটে হয় এবং অক্সিজেন গ্যাস নির্গত হয় ।

photosynthesis (8).jpg
এই বিক্রিয়াটিকে হিল বিক্রিয়া বলে ।
আলোকের উপস্থিতিতে সংশ্লেষ ঘটে বলেই একে সালোকসংশ্লেষ নামে অভিহিত করা হয় ।রাত্রে সূর্যালোক থাকে না এবং গাছের পত্ররন্ধ্র বন্ধ থাকায় CO2 ( কার্বন ডাই-অক্সাইড) প্রবেশ করতে পারে না তাই রাত্রে সালোকসংশ্লেষ হয় না । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তার প্রধান উৎস সূর্যালোক । সূর্যালোকের ফোটন কণা ক্লোরফিলকে সক্রিয় করে, জলের আলোক বিশ্লেষণ ঘটায় ও ফটোফসফোরাইলেশন -এ সহায়তা করে । সুতরাং সূর্যালোকের অভাবে সালোকসংশ্লেষ সম্ভব নয় । তবে কৃত্রিম পর্যাপ্ত আলোতেও সালোকসংশ্লেষ সম্ভব ।

photosynthesis (6).jpg
সালোকসংশ্লেষের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি দুই প্রকার - বাহ্যিক উপাদান ও অভ্যন্তরীণ উপাদান । বাহ্যিক উপাদান গুলি হল (১) কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) , (২) সূর্যালোক (Sunlight) , (৩) জল (H2O) । আর অভ্যন্তরীণ উপাদান হল ক্লোরোফিল (Chlorophyll)
সালোকসংশ্লেষর অন্ধকার দশায় ক্লোরোপ্লাসটের স্ট্রোমায় পরিবেশ থেকে গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইড RuBP -র সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড (PGA) উৎপন্ন করে । পরে তা থেকে গ্লুকোজ তৈরি হয় । এভাবে পরিবেশের কার্বন ডাই-অক্সাইডের কার্বন কোষস্থ জৈব যৌগ গ্লুকোজে অঙ্গীভূত হওয়ায় সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বা কার্বন অ্যাসিমিলেশন বলে ।সালোকসংশ্লেষর অন্ধকার দশায় ক্লোরোপ্লাসটের স্ট্রোমায় পরিবেশ থেকে গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইড RuBP -র সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড (PGA) উৎপন্ন করে । পরে তা থেকে গ্লুকোজ তৈরি হয় । এভাবে পরিবেশের কার্বন ডাই-অক্সাইডের কার্বন কোষস্থ জৈব যৌগ গ্লুকোজে অঙ্গীভূত হওয়ায় সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বা কার্বন অ্যাসিমিলেশন বলে ।

photosynthesisphotosynthesis.jpg
যে প্রক্রিয়ায় পরিবেশ থেকে গৃহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের কার্বন কোষস্থ জৈব যৌগে আবদ্ধ হয় তাকে অঙ্গার আত্তীকরণ বা কার্বন অ্যাসিমিলেশন বলে ।সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপন্ন করে এবং উপজাত বস্তুরূপে অক্সিজেন নির্গত করে । এছাড়া এই সময় গাছ পরিবেশ থেকে দুষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস শোষণ করে বায়ুকে দুষণমুক্ত করে । সুতরাং সবুজ উদ্ভিদ ধ্বংস হলে খাদ্য ও অক্সিজেনের অভাবে প্রাণীজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে ।

photosynthesis (4).jpg

পাতার উর্ধ্বত্বক ও নিম্নত্বকের মধ্যে অবস্থিত ক্লোরোফিলযুক্ত আদি কলাস্থরকে মেসোফিল কলা বলে । পাতার মেসোফিল কলা সালোকসংশ্লেষের প্রধান ঘটনাস্থল । বিষমপৃষ্ঠ পাতার মেসোফিল কলা প্যালিসেড প্যারেনকাইমা (palisade parenchyma) ও স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা (spongy parenchyma) দ্বারা গঠিত । কিন্তু সমাঙ্কপৃষ্ঠ পাতার মেসোফিল কলায় কেবলমাত্র স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা থাকে । দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মেসোফিল কলা উপরের দিকে প্যালিসেড প্যারেনকাইমা (palisade parenchyma) এবং

photosynthesis (5).jpg
নীচের দিকে স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা (spongy parenchyma) নামক দুটি কলাস্থরে বিভেদিত । কিন্তু সমাঙ্কপৃষ্ঠ পাতার মেসোফিল কলায় কেবলমাত্র স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা থাকে । একমাত্র ক্লোরোফিলই সূর্যালোক শোষণে সক্ষমউচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের পাতার মেসোফিল কলার প্যালিসেড প্যারেনকাইমা ও স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা কোষগুলি সালোকসংশ্লেষের জন্য দায়ী ।
পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের (অর্কিড) বায়বীয় মূলের মৃতকলার আবরণকে ভেলামেন বলে ।

photosynthesis (3).jpg
এর সাহায্যে পরাশ্রয়ী উদ্ভিদেরা বায়ুমণ্ডল থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে ।মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম (Mg) ও নাইট্রোজেনের অভাব ঘটলে উদ্ভিদের ক্লোরোফিল সংশেষণ ব্যাহত হয় । যার ফলে গাছে সবুজ পাতা হলুদ হয়ে যায় । একে ক্লোরোসিস বলে ।
কারণ উদ্ভিদের মূলে ক্লোরোফিল থাকে না এবং মূল সাধারনত মাটির নীচে থাকায় সূর্যালোক পায় না, তাই উদ্ভিদের মূলে ও মৃদগত কান্ডে সালোকসংশ্লেষ হয় না ।
রাত্রে সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে গাছ সালোকসংশ্লেষ চালায় না বলে গাছ থেকে অক্সিজেন (O2) নির্গত হয় না । অন্যদিকে রাত্রে গাছের শ্বসনক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছের নীচে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) -এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে বায়ু দুষিত হয় ও শ্বাসক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে । তাই রাত্রে গাছের নীচে থাকা অস্বাস্থ্যকর ।

photosynthesis (2).jpg

কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), রিবিউলোজ বিস ফসফেট (RuBP), NADPH + H+, ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট) ও রিবিউলোজ বিস ফসফেট কার্বক্সিলেজ (RuBISCO) সহ অন্যান্য উৎসেচক ।
সালোকসংশ্লেষের আলোক দশায় সবুজ পাতার ক্লোরোফিল সূর্যালোকের ফোটন কণা শোষণ করে সক্রিয় হয় । এই সক্রিয় ক্লোরোফিল জলকে (H2O) ভেঙ্গে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ও হাইড্রক্সিল আয়নে (OH-) পরিণত করে ।

pexels-ravi-kant-5161265.jpg
সূর্যালোকের প্রভাবে সক্রিয় ক্লোরোফিল দ্বারা জলের (H2O) হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ও হাইড্রক্সিল আয়নে (OH-) বিশ্লিষ্ট হওয়ার পদ্ধতিকে ফটোলাইসিস বলে ।জলের আলোক বিশ্লেষণ বা ফটোলাইসিস ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানায় ঘটে । ফটোলাইসিস প্রক্রিয়াটি দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ঘটে । সূর্যালোক, জল, ক্লোরোফিল,
ও অন্যান্য সাহায্যকারী রঞ্জক, NADP (নিকোটিনামাইড অ্যাডেনিন ডাই-নিউক্লিওটাইড ফসফেট) ও ADP (অ্যাডিনোসিন ডাই ফসফেট) ।
NADPH + H+ (বিজারিত নিকোটিনামাইড অ্যাডেনিন ডাই-নিউক্লিওটাইড ফসফেট), ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট) H2O (জল) ও O2 (অক্সিজেন) ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!
Sort Order:  
  ·  2 years ago  ·  

Hey Nice post😍
give you an important news their is an airdrop going on and all who join will get $30 worth BLURT. if you get it already then ignore, if you didn't get it yet then you should get it now cause their campaign will end very soon.
click here for get the airdrop : UHIVE METAVERSE ADOPTION AIRDROP