আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালই আছেন? আল্লাহর রহমতে আমিও ভালো আছি।
Sorsce
বন্ধুরা এবার আমি লিখব জনসেবা বা সমাজ সেবা সম্পর্কে। হ্যাঁ বন্ধুরা জনসেবা সমাজ সেবা করলে কত যে লাভ সে সম্পর্কে আমরা কোনো ধারণাই রাখিনা। আমি এ সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে একসাথে বাস করায় সে আনন্দ নিরাপত্তাবোধ করে। একজন সব কাজ একা করতে পারে না। প্রয়োজনে তাকে প্রতিবেশীর ওপর নির্ভর করতে হয়।
মানুষের শক্তি সীমিত বলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের কোন না কোন দিক দিয়ে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। সেজন্যই মানুষ সমাজ গড়ে তুলে একে অন্যকে সাহায্য ও সেবা করে। এরূপ নিঃস্বার্থ হয়ে অপরের সেবায় আত্মনিয়োগ করার নামই হচ্ছে জনসেবা।
এ সংসারে কেউ ধনী, কেউ গরিব, কার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আছে, কারো প্রয়োজন মেটাবার সঙ্গতি নেই, কিন্তু সুখ-দুঃখ সবার জন্য একরকম। তাই ছোট-বড় ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সাধ্যমত একে অপরের সাহায্য ও সেবা করলে সকলেই সুখে স্বাচ্ছন্দে বাস করতে পারে।
প্রত্যেক মানুষকেই আল্লাহতালা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এ স্বল্প সময়ে সকলের তরে সকলে এই মানসিকতা পোষণ করে চলতে পারলে সমাজের শৃংখলা থাকে, কোন রকম হিংসা-বিদ্বেষ থাকে না।জনসেবাতেই মানুষ্যত্বের পরিচয়।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,''মানুষের মাঝে তিনিই শ্রেষ্ঠ, যিনি পরে সেবা ও উপকার করেন''। নবী-রাসূলগণ আমাদের উপদেশ দিয়েছেন তাদের মহৎ কাজ দ্বারা। প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টির সেবা করলেই স্রষ্টার সেবা করা যায়।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, হাশরের দিনে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন,'খেয়ে বান্দারা! তোমাদের শক্তি ও সামর্থ্য দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাকে খাদ্য, পানি ও সেবা কিছুই দাওনি। তখন বান্দারা বলবে, হে আল্লাহ! আপনিতো এ সব থেকে পবিত্র। কি করে আমরা আপনাকে এসব দেব? উত্তর আল্লাহপাক বলবেন ক্ষুধার্তকে খাবার দিলে, তৃষ্ণার্তকে পানি পান করালে, অসহায় রোগীর সেবা করলেই আমি সব সেবা পেতাম। কিন্তু তোমরা আমাকে তা দাওনি। সুতরাং এ থেকে আমাদের বোঝা গেল আমাদের সকলেরই নিঃস্বার্থভাবে জন্য সেবায় এগিয়ে আসা কর্তব্য বলে মনে করি।
যারা নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী আল্লাহর নাম স্মরণ করার পর আল্লাহর দোয়া অপরাপর কর্তব্য পালন করে, অসহায় মানুষ ও জীবজন্তুর সেবা করে, আল্লাহ তাদের ওপর এই তুষ্ট থাকেন।
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সেবা ধর্ম পালন করতে গিয়ে অনেক দুঃখ কষ্ট ও লাঞ্ছনা ভোগ করেছেন, কিন্তু কিছুতেই বিরক্ত হন নি। আজকাল আমরা নিজ নিজ স্বার্থ নিয়েই মেতে আছি। এ জগতে নিজেদের স্ত্রী-পুত্র, কান্না ছাড়া আর যে মানুষ আছে, সে কথা আমরা অনেকেই ভুলে যাচ্ছি।
অসহায়দের সাহায্য করার কথা কোন সময় চিন্তাও করি না। আমরা শুধু শ্রী পুত্র-কন্যা আত্মীয়-স্বজনের সাহায্যে এগিয়ে আসি। আমাদের সকলকে এই সর্ব অবস্থায় বিপদাপন্ন মানুষের সেবার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে যাওয়া উচিত। এটা আমাদের সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করি।
জনসেবা করার মধ্যে যথেষ্ট আনন্দ রয়েছে। কারণ যখন আমরা কোনো অসহায় কে সাহায্য করি, পিরিতের সেবা করি, তখন তাদের মুখে কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।তাতে আমরা আমাদের হৃদয়ে সত্যিই আনন্দ পেয়ে থাকি। আমাদের সব সময় স্মরণ রাখা উচিত, অসহায় জনগণের সেবা করা আমাদের সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় কর্তব্য।
পৃথিবীতে কল্যাণকর একটি কাজ সেবা। সেবার বিভিন্ন খাত থাকলেও সমাজসেবা অন্যতম। মানব জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমাজ সেবা সীমাহীন গুরুত্বের দাবিদার। সাধারণত সমাজের অসুবিধা গোশত নিম্ন শ্রেণীর মানুষের কল্যাণে গৃহীত সেবামূলক কার্যক্রম কে সমাজসেবা বলা হয়।
আধুনিক ধারণা মতে সমাজসেবা হচ্ছে সমাজে মানুষের নিরাপত্তা ও মঙ্গলার্থে গৃহীত যাবতীয় কার্যক্রম এর সমষ্টি। বর্তমানে সমাজসেবা কে সামাজিক নিরাপত্তা মূলক কর্মসূচি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী,'ব্যক্তিও তার পরিবেশের মধ্যে সংবিধানে সহায়তাদানের লক্ষ্যে গৃহীত ও সংগঠিত কাজটিকেই জনসেবা। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আদর্শ কে সামনে রেখে আমাদের সমাজ সেবামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।
বান্দার হক তথা আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গরীব দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং আতমানবতার সেবা, সামাজিক সমস্যা দূর করন ও সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে।
জনসেবা বা জনগণের সেবা ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে, জনসেবা করে তাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম ঘোষণা করেছে, যা তাদের কল্পনাই ও আসে না। মানব কল্যাণ করা সব কাজ ইসলামী ইবাদত হিসেবে গণ্য।
প্রতিটি এমন কাজ, যা চিন্তিত ব্যক্তির চিন্তা, বিপদ গোশতের বিপদ, আহতের ক্ষত, বঞ্চিতের অধিকার, মজলুমের জুলুম, পরাভূত ব্যক্তির পরাজয় দূর করার উদ্দেশ্যে হয়, তা ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে।
তাই আমাদেরকে বেশি বেশি করে জনসেবা করতে হবে। একে বিপদে এগিয়ে আসায় হলো জনসেবা। সমাজে আমরা যারা বসবাস করি সবাই একে অপরের সাহায্য সহযোগিতা করে নিজের জীবনকে সৌন্দর্যময় এবং আনন্দময় করে তুলবো।