আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন, আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছি।
বন্ধুরা আবারো হাজির হলাম আপনাদের সামনে আমি আমার নতুন আরেকটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনাদের সবার ভালো লাগবে। আমি আবার লিখব মাতৃভাষায় শিক্ষার বাহন।
মাতৃভাষা শিক্ষার বাহন:
মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে- অন্য কোথায় জন্ম থেকে যে ভাষা উচ্চারণ করে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করে, তাই তার মাতৃভাষা। জননীর স্তন্যদুগ্ধে মাতৃভাষার ভাব দহন করে মানুষ মানসিক পুষ্টি লাভ করে।
আজন্ম যে ভাষার সঙ্গে তার পরিচয়, যে ভাষার মধ্যে দিয়ে শিশু পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পরিজনবর্গের হৃদয়বৃত্তির উপলব্ধি করে, সে ভাষাই তার অস্থিমজ্জার সাথে মিশে থাকে।
মাতৃভাষার মাধ্যমে আমরা নিজেদের জীবনকে উপলব্ধি করতে এবং কৃষ্টি ও চিন্তাধারা প্রকাশ করতে পারি। হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশের সতমুখি ভাবধারা আমরা পরিস্ফূট করতে পারি একমাত্র মাতৃভাষার সাহায্যেই।
তাই হৃদয়, মন ও জীবনের সঙ্গে মাতৃভাষার এক নিকটতম সম্পর্ক রয়েছে। কোন খ্যাতনামা সাহিত্যিক একবার বলেছিলেন,'জীবন ও সাহিত্য দেহ এবং আত্মার মত; তাদের পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
দেহ জীর্ণ হলে অবিনশ্বর সত্বেও আত্মাকে তার লীলা সংবরণ করতে হবে। আবার আত্মা পতিত হলে সিংহের বিক্রম নিও নিষ্ফল পরিনাম এর মধ্যে দেহের অবসান ঘটে।
সাহিত্যকে ললিত কলা মন্দির এবং শান্ত সুস্ময় বিভূষিত করতে হলে মাতৃভাষার প্রকৃত পরিপুষ্টি করা দরকার। পৃথিবীর সর্বোচ্চ যদি আমরা চক্ষু প্রসারিত করি তবে দেখতে পাই, বিভিন্ন জাতি তাদের বিভিন্ন সৃষ্টি এবং ভাষার সম্পদ নিয়ে অগ্রসর হয়ে চলেছে।
সকল দেশের কবি, নাট্যকার ও সাহিত্যই লেখনি থেকে যে বাণী নিঃসৃত করেছেন তা তাদের মাতৃভাষা। শেক্সপিয়ার থেকে আরম্ভ করে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সকল লেখক নিজেদের মধ্যে দিয়ে সমৃদ্ধি সাধন করে গেছেন মাতৃভাষার। তাই যে জাতির মাতৃভাষা যত উন্নত তার সাহিত্য ঠিক ততটুকু উন্নত। প্রত্যেক জাতিই নিজের জন্য মাতৃভাষা সাহায্য নিয়েছে।
জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভাবধারা এমনকি কর্মধারা পর্যন্ত মাতৃভাষার মধ্যে রূপায়িত হয়। জাতীয় ব্যাপারে রাষ্ট্রধর্মের দেশে সাধারণের ভাষা যতদিন গ্রহণ করা হয়, ততদিন বিদেশি ভাষার গুরুভারের নিচে জাতীয় জীবন থাকে নিষ্প্রভ ও অচল।
আবার জাতি যখন নিজস্ব ভাষা গ্রহণ করে, তখন তার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় জীবনের উদ্দাম প্রবাহ। স্বদেশবাসী ব্যতীত স্বদেশের কথা কেউ দরদ দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে না এবং দেশকে নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হলে দরকার হয় একমাত্র মাতৃভাষার।
তাই আমরা দেখতে পাই ফরাসি রাষ্ট্রবিপ্লবে যে দাবানল ইউরোপের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ভিশন ধ্বংশকৃত করে গিয়েছিল, যে জাতীয় শক্তির প্রচন্ড আঘাতে সমস্ত রাজশক্তির চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, সে শক্তির উন্মেষ ঘটেছিল একমাত্র সাহিত্যের মধ্য দিয়ে এবং সে সাহিত্য দেশের জনগণের মাতৃ ভাষায় রচিত হয়েছিল বলেই জনগণের প্রাণে স্পন্দন জাগিয়ে তুলেছিল, তারা নিজেদের সংহত শক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছিল রাজ শক্তির উপর।
এরপর হলো মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান: মাতৃভাষার মাধ্যমে যা কিছু শিক্ষা দেয়া হয় তা তৎক্ষণাৎ শিক্ষার্থীর হৃদয় স্পর্শ করে বোধ ও ভাবের উদ্বেগ করে। এরূপে যে শিক্ষা লাভ হয় তার শিক্ষার্থীর স্মৃতিতে স্থায়িত্ব লাভ করে এবং সে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক শিক্ষণীয় বিষয় আয়ত্ত করে প্রকৃত জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে।
শেরলক গানের সাথে তার হৃদয় ও মস্তিষ্কের পূর্ণ যোগাযোগ থাকে বলে তাতে প্রকৃত আনন্দ লাভ করে, কিন্তু এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীকে যদি প্রথমেই কোন এক অপরিচিত ভাষার সাথে পরিচয় করিয়ে তার মাধ্যমে তাকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়, তবে তার মন সর্বদা এসে ভাষার ভয়ে ভীত থাকবে।