কিছুদিন আগেও যে ছেলেগুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতো, কেউ কেউ নেশায় বুদ হয়ে ঘুরতো মাতালের মতো, তারা আজ দেশের তরে নিজেকে অর্পন করেছে৷ বাউন্ডলে জীবনকে খানিকটা অবকাশ দিয়ে নেমে পড়েছে, দেশের উন্নয়ন সাধনে। রোদ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সারা দিন-রাত দলগত ভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের বিপরীতে কাজ করছে৷ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করেছে, তারা৷ বয়স কতই হবে, ১৭ ১৮ ১৯ কিংবা ২০, তবু তারা দক্ষতার সাথে এসব কাজ সম্পাদন করছে, নিজ স্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে৷
রাস্তায় কেউ অনিয়ম করলে তাকে হালকা শাস্তির আওতায় আনছে তারা। মোটামুটি সবকিছু নিয়ম মাফিকই চালানোর চেষ্টা করছে, গোটা ছাত্র সমাজ।
আবার কেউ কেউ বাজার মনিটরিং করছে, কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যাতে পণ্যের দাম বেশি নিতে না পারে। তাদের তত্ত্বাবধানে এখন চাঁদাবাজিও প্রায় বন্ধ। কোনো যানবাহনে চলাচলের সময় কোনো যাত্রী যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখছে তারা, পাশাপাশি কেউ ভাড়া বেশি দাবি করলে তারা দ্রুত তার ব্যবস্থা গ্রহন করছে।
মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট পরিধান করার জন্য অনুরোধও করছে তারা।
কখনও কখনও হেলমেট বিহীন মোটরসাইকেল আরোহীকে দাড় করিয়ে শাস্তিস্বরুপ পাঁচ মিনিট রাস্তায় দাড়িয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করছে৷
সন্দেহভাজন কোনো গাড়ি দেখলে চেকিং করছে ছাত্ররা৷ দেশের এই সংকটময় সময়ে আবার নতুন করে নাশকতার সৃষ্টি যেন না হয়, সেব্যাপারেও তারা প্রচুর সজাগ৷
সারাদেশের পুরো ছাত্রসমাজ কিভাবে একটি দেশকে সুন্দরভাবে গড়তে অংশ নিয়েছে, তা আমাদের সামনে দৃশ্যমান। সকলে মিলে শহর পরিষ্কার করছে, মানুষকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করছে৷ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলতে নিষেধ করছে৷ যেখানে সংস্করণ প্রয়োজন, সেখানে সংস্করণের ব্যবস্থা করছে৷
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়াতে সংখ্যালঘুদের পাশে থেকে তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো পাহারা দিচ্ছে।
সরকারি হসপিটালগুলোতে সাধারণ মানুষ যেনো সুচিকিৎসা পায় সেজন্য সেখানকার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলছে৷ লোডশেডিং দূর করতে স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে আলোচনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল-পরিবর্তনের দাবী জানাচ্ছে। এককথায় বলতে গেলে, পুরো একটি দেশের দ্বায়িত্বই যেনো তাদের ঘাড়ে।
তারা তাদের এমন গর্বিত কাজের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষের। তারা যেহেতু সেচ্ছায় এসব কাজে অংশগ্রহণ করেছে তাই অনেক মানুষই তাদেরকে বিস্কুট, জুস, পানি দিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করছে সেই শুরু থেকেই, যদিও অনেক সময় এসব গ্রহণে তারা অনীহা প্রকাশ করে৷
তরুণদের এই তারুণ্য জিইয়ে রাখা প্রয়োজন। তারা যেমন করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় নিজেদের উৎসর্গ করেছে, আমাদেরও উচিত তাদের সহযোগীতায় নিজেদের উৎসর্গ করা। পরিবর্তনে তাদের এমন রুপরেখা ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এটাই সবার কাম্য।