মাঝে মাঝে এই জীবনটা খুব অর্থহীন মনে হয়। বাঁচার জন্য বাঁচা। যখন আমি মহাবিশ্ব নিয়ে ভাবি তখন নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয়। লক্ষ কোটি গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে একটা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। কত মিলিয়ন মিলিয়ন মিল্কিওয়ে নিয়ে আমাদের এই মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বে ছোট্ট একটা বিন্দুর মতো স্থান করে আছে আমাদের নীল গ্রহ নামক এই পৃথিবী। যেখানে বাস করে লক্ষ লক্ষ রকমের ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, উদ্ভিদ, আর ৭০০ কোটিরও অধিক মানুষ।
আজ থেকে কয়েক কোটি বছর আগে এই পৃথিবী রাজত্ব করতো বিশাল আকারের ডাইনোসর প্রানী। ধীরে ধীরে বিবর্তন ও সময়ের পরিক্রমায় আজ পৃথিবীকে শাসন করছে ৫-৬ ফুট দৈর্ঘ্যের মানুষরা। কখনো কখনো তাদের কাছে বনের হিংস্র প্রাণীও অসহায় হয়ে যায়। মানুষ ছুটছে ক্যারিয়ার নিয়ে, মানুষ ছুটছে সম্পর্ক নিয়ে, মানুষ ছুটছে সম্মান নিয়ে, মানুষ ছুটছে অর্থের জন্য। মানুষ ছুটছে আভিজাত্যের জন্য। মানুষ ছুটছে আগামী প্রজম্মের একটি বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য।
সেই কয়েক লক্ষ বছর আগের আদিম যুগের গুহা পেরিয়ে আজ মানুষ গড়েছে সুউচ্চ বিল্ডিং, পাকা সড়ক, গত শতাব্দীতে গঠিয়েছে শিল্প বিপ্লব, এই শতাব্দী শুরু থেকে প্রযুক্তি বিপ্লব। গড়েছে অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থাপনা। এই পৃথিবী নামক গ্রহটিকে মানুষ ২০০টিরও অধিক দেশে বিভক্ত করেছে, নির্ধারণ করেছে সীমানা। রাষ্ট পরিচালনার জন্য তৈরি করেছে সংবিধান। বানিয়েছে আইন। অপরাধীদের রাখার জন্য গড়েছে কারাগার। মানুষ বিনোদন করার জন্য বন-জঙ্গলের প্রানীকে ধরে এনে বন্দী করেছে চিড়িয়াখানায়। পৃথিবীর জায়গাকে বেচা কেনা করার জন্য তৈরি করেছে রেজিষ্ট্রি অফিস। দেশে দেশে অর্থ বিনিময়ের জন্য বানিয়েছে, টাকা, রুপি, পাউন্ড, ডিনার, রিয়েল, ডলার....। পৃথিবীর সব দেশগুলোর লেনদেন, ব্যবসা, বানিজ্যকে সংযুক্ত করতে এই মাধ্যমকে নাম দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক। এই সবকিছু হচ্ছে মহাবিশ্বের সীমায় স্থান করে থাকা ছোট্ট বালুকণার মতো গ্রহ এই পৃথিবীকে ঘিরেই। ব্যাপারটা কি আজব না? তারপরও মানুষ কত স্বপ্ন বুনে, ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য, প্রপার্টি গড়ার জন্য। খ্যাতি অর্জনের জন্য। সেলিব্রিটি জন্য। দুই দন্ড রোমাঞ্চিত হওয়ার জন্য। মানুষ কয় বছর বাঁচে? ৭০-৮০ বছর? অথচ এই সময়গুলি মহাবিশ্ব ট্রাবেল করার জন্য কিছুই না! আসলে মাঝে মাঝে এই জীবন, পৃথিবীর এই মানব সভ্যতা খুবই অর্থহীন মনে হয় খুব।