জলবায়ুর প্রভাব।

in blurtbd •  3 years ago 

বাংলাদেশের এই যে এত সৌন্দর্য এর পেছনে কাজ করছে অনুকূল জলবায়ু। কর্কটক্রান্তি তার ওপর দিয়ে গেলেও সাগর কাছাকাছি থাকায় এবং মৌসুমি বায়ু তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবার ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা এখানে অতিমাত্রায় অনুভূত হয় না। জুন মাসের শুরুতে বঙ্গো সাগর থেকে উষ্ণ আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এবং পূর্ব ও উত্তরের পাহাড়ি এলাকায় বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। তখন এখানে বর্ষার ছোঁয়া পেয়ে বাংলাদেশের প্রকৃতি এক অভিনব রূপ ধারণ করে। নদনদী কানায় কানায় পানিতে ভরে যায়। মাঠে মাঠে শস্য উৎপাদনের আয়োজন চলতে থাকে। হাঁসেরা দল বেঁধে আনন্দে সাঁতার কাটতে থাকে। ছোট বড় মাছেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটাছুটি করতে থাকে। শাপলা, কুমুদ প্রভৃতি ফুল ফুটে অপূর্ব সৌন্দর্য ধারণ করে। গ্রীষ্মের দাবদাহ বর্ষার বর্ষণে অনেকটা কমে যায়। পাট ও আউশ ধানের খেতগুলো সবুজতায় ভরে যায়।

images - 2022-01-30T132606.902.jpeg
Sorsce

বর্ষার পরে আসে শরৎকাল। তখন গ্রীষ্মের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। শরতের চাঁদনি রাতে কী বনের গাছপালা, কী নদী-তীরের কাঁশবন, কী গৃহস্থের কুটির, কী গতিশীল নদীস্রোত নতুন নতুন রূপে আমাদের চোখে ধরা দেয়। নানা রকমের ফুল ফোটে। শরতের শেষে কিছুটা শীতের আমেজ শুরু হয়। এর ফাঁকে চলে আসে হেমন্তকাল। সোনালি ধানে মাঠকে মাঠ ভরে যায়। ফসলের সওগাত গৃহস্থের ঘরে ঘরে তুলে দিয়ে ধরণী এক সময় রিক্ত হয়। তখন আসে শীতকাল। সে সময় বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। তীব্র শীত অনুভূত হয় এবং শ্যামল প্রকৃতি যেন বুড়োদের মতো শীর্ণমূর্তি ধারণ করে। এরপর একটা সময় আসে যখন শীত ও গ্রীষ্মের মিশ্র আমেজ অনুভূত হয়। আসে বসন্তকাল। গাছপালা লতায় নতুন পাতা গজায় এবং বিচিত্র রঙের ফুল ফোটে। প্রকৃতি যেন নতুন সৌন্দর্যে তার যৌবন ফিরে পায়।

বিভিন্ন দৃশ্য : বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। তার প্রত্যেকটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙ্গশালা। যেদিকে চোখ যায়— অবারিত সবুজ মাঠ, ফুলেফলে ভরা গাছপালা, তৃণ গুল্মশোভিত বন-বনানী ও শ্যামল শস্যখেত— এই অনুপম রূপসুধা পান করে সকলের হৃদয়ে এক অভিনব আনন্দের শিহরণ জাগে। কোথাও প্রকৃতির সবুজ ঘোমটা ভেদ করে পাকা শস্যের সোনালি সুন্দর মুখখানা বের হয়ে আসছে, আবার কোথাও বিশালদেহ বটবৃক্ষ প্রান্তরের এক স্থানে ঊর্ধ্ববাহ্ণ হয়ে মৌন তাপসের মতো দাঁড়িয়ে সুশীতল ছায়া দিয়ে পথিকের ক্লান্তি দূর করছে। কোথাও তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে আকাশ থেকে নীলিমা ছিনিয়ে আনার জন্য ওপর দিকে হাত বাড়িয়েই চলছে, আবার কোথাও দীঘির কাকচক্ষু কালো পানিতে লাল সাদা শাপলা ও কুমুদ ফুটে অপরূপ সৌন্দর্য বিস্তার করছে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য বৈচিত্র্য সবার মন আনন্দে ভরে দেয়।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছোটবড় অসংখ্য নদনদী তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তাকে স্নেহসিক্ত করে দিচ্ছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, বাতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী, তিস্তা প্রভৃতি নদনদী বাংলাদেশের সমভূমি এলাকাকে শস্যশ্যামল করে তাকে সোনার দেশের গৌরবে ভূষিত করেছে। এসব নদীর দৃশ্যও নয়নাভিরাম। দিনে সূর্যের কিরণেও রাতে চাঁদের হাসিতে তারা বিচিত্র রূপ ধারণ করে। রং বেরঙের পাল উড়িয়ে নদীর বুকে নীল নানি কেটে যখন হাজার হাজার নৌকদর রত্তের করে সামনের দিকে ভেসে যায়, তখন হৃদয়ে এক অনির্বচনীয় ভাবের সৃষ্টি হয়। তীরে ফুলে নেচে ওঠে। বাংলাদেশের প্রকৃতির মতো এমন অপরূপ সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথায়ও দেখা যায় না।।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!