নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীর প্রভাব

in blurtbd •  2 years ago 

নদী বাংলাদেশের জীবনদায়িনী শক্তি । নদ-নদী বিধৌত বাংলাদেশকে বলা হয়- নদীমাতৃক দেশ।ব্যবসা – বাণিজ্যের পণ্য সামগ্রী পরিবহনে এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রেও আমাদের নদ – নদীর গুরুত্ব অপরিসীম । এদেশের নদ – নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য , নগর , বন্দর ও শহর । নদ – নদীগুলোরনাম : বাংলাদেশের প্রধান ও বড় নদী তিনটি হলো:পদ্মা , মেঘনা ও যমুনা । প্রতিটি দেশের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নদীর গুরুত্ব খুব বেশি ।

river (9).jpg
বলা যায় , নদীর অবদানেই কোনো দেশ তারনিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে ।বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ ।খানকারমানুষের ওপর নদীর প্রভাব অপরিসীম । ছোট বড় অসংখ্য নদ – নদী এ দেশের বুকের ওপর জালের মতছড়িয়ে রয়েছে । বাংলাদেশের নদীগুলোর উৎস, উত্তরে হিমালয় পর্বতশ্রেণী, নেপাল, সিকিম ও ভুটান প্রভৃতি রাজ্য। উত্তর-পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার উপত্যকা, পূর্বে গারো, খাসিয়া, জয়ন্তিয়া, ত্রিপুরা ও মায়ানমারের পার্বত্যভূমি। এত বেশি নদ – নদী পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই । নদীর স্রোতধারায় বাহিত পলি দ্বারা পুষ্ট এদেশের মাটি । উত্তর-পশ্চিমে দ্বারবঙ্গ বা দ্বারভাঙ্গা পর্যন্ত সমভূমি, পশ্চিমে রাজমহল, সাঁওতাল পরগনা, ছোটনাগপুর, মানভূম, সিংভূম, কেওঞ্জর, ময়ূরভঞ্জের পর্বতময় গৈরিক মালভূমি। এছাড়া রয়েছে ছোট বড় বহু শাখা ও উপনদী ; যেমন– ধলেশ্বরী , বুড়িগঙ্গা , শীতলক্ষ্যা , আত্রাই , গড়াই , তিস্তা , সুরমা , কুশিয়ারা , বংশাই , মধুমতি , আড়িয়াল খাঁ , মাতামুহুরী এবং আরো অনেক ।

river (6).jpg
বাংলাদেশের নদীগুলো বিস্তৃত ।বৈশাখ – জ্যৈষ্ঠে নদ – নদীর দুর্দান্ত শক্তি অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়ে । বাংলাদেশের মাটির মতোই এদেশের নদ-নদী অনবরত তাদের স্রোতধারাগুলি পরিবর্তিত করে সময়ে অনেক সভ্যতা গড়ে তুলেছে আবার সময়ে ধ্বংস করেছে। কাজেই নদ-নদীর স্রোতধারার সাথে শুধু বাংলাদেশের নয়, বৃহত্তর বাংলার সভ্যতা ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদের অনেক কিছু জড়িত।বর্ষায় এ নদীগুলোকে সাগরের মতো বলে মনে হয় ।কোনো কোনোনদী আবার শুকিয়ে যায় । তখন নদীর বুকে জেগে ওঠে বালুচর । তার প্রধান কারণ – নদ-নদী, জলাভূমি ও বন-জঙ্গলে পূর্ণ এই দেশে রাস্তা- ঘাট ছিল অত্যন্ত সীমিত।নদীগুলো বর্ষায় পানিতে পরিপূর্ণ । কাজেই ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন, আদান-প্রদান, যাতায়াত সবই প্রায় গড়ে উঠেছে নৌপথকে কেন্দ্র করে। হয়ে ওঠে।নানা কারণে আজ আর আমাদের নদীগুলোতে আগের মতোপানি প্রবাহ নেই ।

river (7).jpg
অত্যধিক পানিপ্রবাহে বন্যার সৃষ্টি হলে নদীগুলো ভয়ঙ্কর দৃশ্যের অবতারণা করে । নদী পথেই মালপত্র পরিবহন ছিল সহজ এবং কোনো কোনো অঞ্চলে একমাত্র পরিবহন ব্যবস্থা ছিল নৌপথ।মাঝে মধ্যে নদী অশান্ত হয়ে ওঠে । তাদেরউত্তাল তরঙ্গ অনেক সময় লণ্ডভণ্ড করে দেয় জনজীবন । ভারত কর্তৃক গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে পদ্মা শুকিয়ে যাচ্ছে । নদীবাহিত পলিতে নদীগুলোভরাট হচ্ছে ,ফলে নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে । যার ফলে প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে ভৌগোলিক পরিবেশের ওপর। বাংলার ভূ-প্রকৃতি গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। নদ-নদীর গতিপ্রকৃতি বাংলার আকার-আকৃতি নির্ধারণ করেছে।

river (5).jpg
এই অঞ্চলের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হিসেবে এই নদীসমূহ চিহ্নিত।নদী এদেশকে করেছে শ্যামল ও সৌন্দর্যে অপরূপা । নদীর সাথে মিশে আছে দেশেরইতিহাস । সম্ভবত কোনো এক সুদূর অতীতে নদী থেকেই উৎপন্ন হয়েছে এ শ্যামল প্রান্তর ।বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ । ধন – ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এবাংলাদেশ – নদীরই দান । যুগ যুগ ধরে এদেশের বেশিরভাগ ব্যবসা – বাণিজ্য চলছে এ নদীর পথ ধরেই । আবার নদীর উত্তালতরঙ্গের সাথে সংগ্রাম করেই এদেশের মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় । তাই লড়াই ও সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় এদেশের মানুষনদীগুলোকে কখনো বন্ধু রূপে কখনো বা ভয়ঙ্কর শত্রু রূপে কল্পনা করে ।

river (4).jpg
বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নদ নদীগুলোর প্রভাবঅস্বীকার করা যায় না । বর্তমানের মতো প্রাচীনকালেও এই নদ-নদীসমূহের গতিপথ ঘন ঘন পরিবর্তিত হতো।নদীগুলো দেশের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে । একেক ঋতুতে নদীগুলো একেক রূপধারণ করে । শীতে এদের এক রূপ , গ্রীষ্মে আবার অন্যরূপ ; কিন্তু বর্ষায় সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ । বর্ষায় বাংলার নদীগুলো হয়ে ওঠে পূর্ণযৌবনা । নদীগুলো পানিতে ভরে ওঠে আপনদেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে । আবার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে দু‘তীরে প্লাবিত করে সৃষ্টিকরে বন্যার পানিতে মগ্ন নদীর ঘাট , তীরবর্তী ভূমি , লোকালয় এবং বন্যা প্লাবিত গ্রামগুলোকে তখন দ্বীপের মতো মনে হয় ।ধানের শিষগুলো জলের পরশে শ্যামল হয়ে মৃদু বাতাসে দুলতে থাকে । প্লাবিত বন্যার পানিতে চলে সোনার তরীর আনাগোনা ।ছোট ছেলেমেয়েরা কলার ভেলায় সাগর পাড়ি দেয়ার আনন্দ অনুভব করে । আবার শরতে নদীগুলো শান্ত হয়ে ওঠে এবং পানিরপরিমাণও অনেকটা কমে যায় । তখন শুভ্র আকাশ মেঘের পর্দা সরিয়ে নদীগুলোর দিকে অতৃপ্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে ।

river (10).jpg
ধানেরওপর বাতাসের ঢেউ , কূলে কূলে ভরা নদীর তীরে কাশফুলের শ্বেতশুভ্র হাসির তরঙ্গ বাস্তবিকই মনকে উদাস করে ।নদীতে বন্যা হলে জমির ফসল , রাস্তা – ঘাট , গ্রাম এমনকি শহর পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায় । ফলে মানুষের চলাচলের ভীষণঅসুবিধা হয় । সর্বোপরি মানুষ নানা রোগে জর্জরিত হয়ে পড়ে । বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষতি হয় , কিন্তু উপকারের তুলনায়এসব ক্ষতি অতি নগণ্য । বিশেষ করে সমতলভূমিতে নদীর খাত পরিবর্তন করা খুবই সাধারণ ঘটনা। এই নদীসমূহের তীরবর্তী অঞ্চলে শহর, বন্দর ও ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তাছাড়া রাজনৈতিক কেন্দ্রও এদের তীরে স্থাপিত হতো। গৌড়, তাম্রলিপ্তি, গঙ্গার নদীতীরে গড়ে উঠেছিল।নদীর প্রধান সম্পদ পানি ও মাছ । আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত ও মাছ । দেশের নদীগুলো থেকেই আমরা শতকরা আশি ভাগমাছ পেয়ে থাকি । ইলিশ , চিংড়ি , রুই , কাতল , চিতল , পাঙ্গাস প্রভৃতি মাছ ও কচ্ছপ রপ্তানি করে আমরা মূল্যবান বৈদেশিকমুদ্রা অর্জন করে থাকি । কিন্তু সময়ের ব্যবধানে গঙ্গানদীর খাত পরিবর্তন হয়। ফলে গৌড় ও তাম্রলিপ্তির যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে এদের প্রাধান্য হারিয়ে যায়। প্রাচীন বাংলার শাসকদের সামরিক বাহিনীর একটি শাখা হিসেবে নৌবাহিনী ছিল অন্যতম।নদীর খাত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোনো বন্দরের নৌঘাটির গুরুত্বও লুপ্ত হয়ে যায়। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই রয়েছে প্রায় সাত শতাধিক নদ-নদী। এসব নদ-নদী জালের মতো সারাদেশে বিস্তৃত। মোট নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,১৫৫ কি.মি.। ৫৪ এসব নদ-নদীর মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৩৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। পানির এ প্রবাহের সাথে বছরে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন টন পলিমাটি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পূর্বে প্রবাহিত পানি ও তৎসঙ্গে বাহিত পলির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। এই পলিতেই গড়ে উঠেছে আবাদি জমি, লোকালয়, শহর ও বন্দর। আবার এই নদীই ধ্বংস করেছে বহু জনপদ ও চাষযোগ্য ভূমি। নদীর এই ভাঙ্গাগড়া বহু যুগ যুগ ধরে অপ্রতিহত গতিতে চলছে। এক সময় অসংখ্য নদ-নদী সারা দেশে জালের মতো বিছানো ছিল। কালক্রমে সে সকল নদীসমূহের অনেকগুলোই বর্তমানে হারিয়ে গেছে। নদী আমাদের দেশের প্রাণ । নদীই এদেশকে সুজলা – সফলা শস্য – শ্যামলা সোনার বাংলাদেশ রূপে গড়ে তুলেছে ।

river.jpg
নদীআমাদের চাষের জমিতে বয়ে আনে পলি , করে উর্বর , যোগায় সেচের পানি , সরবরাহ করে পর্যাপ্ত মাছ । দেশের আভ্যন্তরীণযাতায়াত , মালামাল পরিবহন ও ব্যবসা – বাণিজ্যের অধিকাংশই নদীপথে হয়ে থাকে । নদীই আমাদের জীবনকে করে গতিময় ওপ্রাণবন্ত । আরও বহু নদী এখন হারিয়ে যাবার পথে।নদী আমাদের জীবনকে করেছে নিয়ন্ত্রিত , দেশকে করেছে সমৃদ্ধ এবং মানুষকে করেছে উন্নয়নশীল । তাই সরকার যদি এনদীগুলোর গতি – প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ , প্রয়োজনে পুনঃখনন ও সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসেন তবেই বাংলাদেশের উন্নতিহবে ।

river (8).jpg
নদীর উপরই নির্ভর করছে আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। সীমান্তের ওপাড়ে ভারতীয়দের বাঁধের কারণে বিভিন্ন বড় বড় জীর্ণ শীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং সেই সাথে এই সকল বড় বড় নদীর শাখা নদীগুলোও দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। তারপরে এখনো যে সকল নদী অবশিষ্ট রয়েছে, সে সকল নদী নিয়ে এই অংশের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নিচে এই সকল নদীর বর্ণনানুক্রমিক তালিকা তুলে ধরা হলো।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!