জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের মালিকরা ভাড়া বাড়িয়েছেন; তাতে বিপাকে পড়েছেন বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমদানিকারক, পরিবহন এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের।
তারা বলছেন, আগে বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রাকের ভাড়া ১৮ থেকে ২৩ হাজার টাকা ছিল, এখন ২৮ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে।
ফলে আমদানি পণ্যের শুল্ক পরিশোধের পরও বাড়তি ভাড়া ও পরিবহন সঙ্কটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারছেন না।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, “তেলের দাম বাড়লে ট্রাক ভাড়া তো বাড়বেই। বেনাপোল বন্দর থেকে সারা দেশের পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। বাড়তি ভাড়া শনিবার থেকেই নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি জানান, আগে বেনাপোল থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনে ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৮ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে ২৮ থেকে ৩২ হাজার টাকা হয়েছে। একইভাবে কভার্ডভ্যানের ভাড়াও ২৫ হাজার থেকে বেড়ে ৩৫ হাজার টাকা হয়েছে।
গত ৫ জুলাই রাতে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা করা হয়।
পাশাপাশি পেট্রোলের দাম ৫১.১৬ শতাংশ বেড়ে লিটার ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৫১.৬৮ শতাংশ বেড়ে ১৩৫ টাকা হয়েছে। শনিবার প্রথম প্রহর থেকে ওই দাম কার্যকর করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ার কারণে বেনাপোল বন্দরে খালাস করা পণ্য ফ্যাক্টরিতে নিতে পারছেন না বলে জানালেন ঢাকা কেরানীগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান 'রোজ ট্রেডিং' এর মালিক ফাইজুর রহমান।
তিনি বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা প্রিন্টিং কালির কয়েকটি চালান বেনাপোল বন্দরে ঢুকেছে। কাস্টমস ও বন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতাও শেষ। কিন্তু ট্রাক ভাড়া ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি চাওয়ায় পণ্য ফ্যাক্টরিতে আনতে পারছেন না।
ঢাকার মগবাজারের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান 'মাইশা ট্রেডিং' এর মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, “এত বেশি ট্রাক ভাড়ায় আমদানি করা কেমিকেল ফ্যাক্টরিতে নিলে লাভ তো দূরে থাক, আসলও উঠবে না।”
যশোরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান 'রিপন অটোর' ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে বেনাপোল বন্দর থেকে যশোর পর্যন্ত ৭ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিয়েও তিনি পণ্য নিয়েছেন। এখন ভাড়া চাইছে ১২ হাজার টাকা।
“প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের দামও বাড়ানো যায় না। এখন আমাদের অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়া দিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।”
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, ভারত থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে ঢোকে। আর ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে যায়।
আর বেনাপোল বন্দর থেকে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ ট্রাক পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিকটন পণ্য আমদানি হয়েছে। সেসব পণ্য সড়ক পথে ট্রাক ও কর্ভাডভ্যানে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, “ডিজেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকের ভাড়াও বেড়েছে। সরকারের এখন নজর দিতে হবে যাতে পণ্য পরিবহন খরচ খুব বেশি না বাড়ে। না হলে দিন শেষে চাপ ভোক্তার ওপর গিয়ে পড়বে।