কৃষি ডেস্ক: বাঁধা কপি (Cabbage) রবি মৌসুমের একটি প্রধান সবজি ফসল, বৈজ্ঞানিক নাম (Brassica oleraea var capitata)। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বাঁধাকপি চাষ হয়ে থাকে। এদেশে বাঁধাকপির যে সকল জাত গুলো রয়েছে প্রায় সব হাইব্রিড ও বিদেশী জাত। যে সকল জাতের বাঁধাকপি চাষ করা হয়ে থাকে তার সব জাতের বীজ এদেশে উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। সে সব জাতের বীজ উৎপাদন করা যায় সে জাত গুলে হলে বারি উদ্ভাবিত জাতগুলো। নিচে বাঁধাকপি চাষ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-
বাঁধাকপির পুষ্টিগুন
বাঁধাকপি পুষ্টিকর পাতা জাতীয় সবজি। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ‘ এবং বিটামিন বি, ও ভিটামিন সি রয়েছে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য বাঁধাকপি বেশ উপকারী। এবং যাদের দেহে চর্বি বেশি তাহারা বাঁধাকপি খেয়ে উপকার পেতে পারেন।
বাঁধাকপির চাষের সময়
বাঁধাকপি একটি শীতকালীন সবজি। শীতকালেই বাঁধাকপি ভালো জন্মে থাকে। শীত মৌসুমে আগাম ও নাবী দুইভাবেই চাষ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও বাঁধাকপি চাষ করা হয়। মৌসুমি ভেদে বাঁধাকপির বীজ বপনের সময় নিচে উল্লেখ করা হলো।
সময়
বীজ বপনের সময়
চারা রোপণের সময়
আগাম জাত
শ্রাবণ-ভাদ্র
ভাদ্র-আশ্বিন
মধ্যম জাত
আশ্বিন-কার্তিক
কার্তিক-আগ্রহায়ণ
নাবী জাত
অগ্রহায়ণ-মধ্য পৌষ
পৌষ-মধ্য মাঘ
চাষের মাটি
সব ধরণের মাটিতেই বাঁধাকপি চাষ করা যায়। সবথেকে বেশি ভালো হয় দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটিতে চাষ উপযোগী। অত্যধিক বেলে মাটি ছাড়া ও অদিক অম্লীয় বা লাল মাটিতে বাঁধাকপি ভালে জন্মে না।
বাঁধাকপির জাত সমুহ
আমাদের দেশে বাঁধাকপি চাষের জন্য নানান ধরনের জাত রয়েছে। এ সকল জাতগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১। আগাম জাত
২। মধ্যম জাত
৩। নাবী জাত।
আগাম জাত
আগাম জাত লাগাতে চাইলে এই জাতগুলো লাগাতে হবে
কে কে ক্রস
ওরিয়েন্টাল এক্সপ্রেস এফ-১
সুপার গ্রীন এফ-১
রেসি ৬৫ এফ-১
ইপসা বাধাকপি-১ জাত।
মধ্যম সময়ের উপযোগী জাত
মধ্যম সময়ে লাগাতে চাইলে এই জাতগুলো লাগাতে হবে
এটলাস ৭০
কে ওয়াই ক্রয়
টোকিও প্রাইড
গ্রীন এক্সপ্রেস
প্রভাতী ইত্যাদি জাতগুলো।
নাবী জাত
নাবী জাত লাগাতে চাইলে লাগাতে হবে
লিও ৮০
সেভয়
রুবি বল
ড্রাম হেড ইত্যাদি জাতগুলো।
বীজ উৎপাদনের জাত
বীজ উৎপাদন করতে চাইলে যে সকল জাত লাগাতে হবে।
বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতী)
বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত
ইপসা বাঁধাকপি ১ ইত্যাদি জাতগুলো।
আমদানীকৃত হাইব্রিড জাতসমূহ
সাম্প্রতিক আমদানীকৃত যে সকল হাইব্রিড জাতসমূহ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল
সামার ওয়ারিয়র এফ ১
লরেন্স এফ ১
গ্রীন ৬২১ এফ ১
সামার ষ্টার এফ ১
গ্রীন কর্নেট এফ ১
অটাম কুইন এফ ১
সুপার ট্রপিক এফ ১
সামার বয় এফ ১
গ্রীন বল ৪০ এফ ১
সুপ্রিম কুইন এফ ১ ইত্যাদি।
বীজের পরিমাণ
বাঁধা কপির জাত ভেদে প্রতি শতকে ২-৩ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়, এবং হেক্টর প্রতি ৫০০-৭০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বাঁধাকপি চাষে চারা উৎপাদন পদ্ধতি
বাঁধাকপির চারা প্রথমে বীজতলায় উৎপাদন করতে হয় এবংপরবর্তী সময়ে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলায় জন্য বালি, মাটি ও জৈবসার ভালাভাবে মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে নিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত।
বাঁধাকপি চাষে জমি তৈরি
বাঁধাকপি চাষ পদ্ধতি এর জন্য প্রধান কাজ হলো জমি তৈরি করা। জমি তৈরির জন্য গভীর ভাবে ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। শেষ চাষের সাথে জমিতে প্রয়োজনীয় সার সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি তৈরি হয়ে গেলে মাটি থেকে ১৫-২০ সে.মি. উঁচু ও এক মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করে নিতে হবে।বেড থেকে বেডের মাঝখানের দুরত্ব কমপক্ষে ৩০ সে. মি. রাখতে হবে এবং বেডের মাঝে নালা রাখতে হবে।
চারা রোপণ পদ্ধতি
বীজ বপনের পর চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে বা ৫/৬টি পাতা বিশিষ্ট ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা সুস্থ ও সবল চারা মুল জমিতে রোপন করতে হবে।রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দুরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪৫ সেন্টিমিটার দিলে ভাল হয়।প্রতি শতকে ১৫০টির মত বাঁধাকপির চারার প্রয়োজন হয়।চারা বিকেল বেলাতে জমিতে রোপণ করতে হয়।
বাঁধাকপির সার প্রয়োগ পদ্ধতি
আমরা জানি ভালাফলন পেতে হলে জমিতে পরিমাণ মতো সার প্রয়োগের বিকল্প নেই। জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুনাগুন যেমন বজায় থাকে তেমনি পরিবেশ ভালো থাকে। জমিতে ভালো ফলন পেতে হলে রাসায়ানিক সার নয় জৈব সার ব্যবহার করুণ।
বাঁধাকপির জন্য প্রতি শতক প্রতি ১২৫ কেজি গোবর সার,ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৮০০ গ্রাম, এমওপি ৬৫০ গ্রাম সার দিতে হবে। জমি তৈরির সময় সম্পূর্ন গোবর ও টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ২ কিস্তিতে চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর একবার এবং ৩০-৪০ দিন পর আর একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বাঁধাকপির চাষে সেচ দেয়া
সার দেয়ার পর পরই জমিতে সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে। জমিতে পানির অভাব দেখা দিলে সহজে ও দ্রুত সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সেচ দেওয়ার সুবিধার জন্য গাছ বড় হবার সাথে সাথে দুই সারির মাঝখান নালা তৈরি করে দিতে হবে।
পোকা মাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনা
বাঁধাকপির রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের মধ্যে সবথেকে ক্ষতিকর পোকা হল মাথা খেকো লেদা পোকা। নাবী জাতের সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করলে পুষ্পমঞ্জরীকে জাব পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে ক্ষতি করে থাকে।
বাঁধাকপির রোগের মধ্যে পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ঢলে পড়া বা ড্যাম্পিং অফ, মাথা পচা বা গ্রে মোল্ড, ক্লাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন