আপনার শরীরে যে মাইটোকন্ড্রিয়াগুলো আছে সেগুলো ব্যাক্টেরিয়াজাতীয় অনুজীব। আপনার কোষের বিভাজনের সাথে মাইটোকন্ড্রিয়ার বিভাজনের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার কোষটিকে মাইট্রোকন্ড্রিয়া তাদের জীবন-যাপন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। এতে করে শরীরের কোষ এবং মাইটোকন্ড্রিয়া উভয়েই কিছু সুবিধা লাভ করে। একদিকে মাইটোকন্ড্রিয়া কোষ থেকে পুষ্টি নিচ্ছে আর বিনিময়ে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে দিচ্ছে; এধরনের ব্যবস্থাকে সিমবায়োসিস বলা হয়, যাতে দুটি জীব পরস্পরের উপর নির্ভর করে একে অপরের জীবন ধারনে সাহায্য করে। মাইট্রোকন্ড্রিয়া যেহেতু এর আশ্রয়ক কোষের সাথে সম্পর্ক যুক্ত নয়, তাই এরা নিজেরা নিজেদের মতো করে বিভাজিত হয়ে বংশবৃদ্ধি করে।
যেহেতু এদের আশ্রয়ক কোষটিও সময়ে সময়ে বিভাজিত হয় তাই একটি কোষে মাত্রাতিরিক্ত মাইটোকন্ড্রিয়া জমে যায় না। স্বাধীন বিভাজনের কারণে মাইট্রোকন্ড্রিয়ার রয়েছে নিজস্ব ডিএনএ। এর ডিএনএনটির গঠন অন্য অনেক ব্যাক্টেরিয়ার ডিএনএর গঠনের মতোই। আর এর ডিএনএ ধারনকারী ক্রোমোসোম অন্য কোষের মতো জোড়ায় অবস্থান করে না অর্থাৎ পিতা-ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে আসে না। বরং আসে শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে। শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলনে যখন জাইগোট তৈরি হয় তখনই শুক্রানুর মাইটোকন্ড্রিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং ডিম্বানুর গুলোই কেবল টিকে থাকে। সেগুলোই পরবর্তীতে বিভাজনের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। এই কারণে এতে জিনের মিশ্রনও ঘটার সুযোগ পায় না, শুধুমাত্র মিউটেশনজনিত পরিবর্তন দেখা যায়, তাই বংশগতি পর্যবেক্ষণের জন্য মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ আদর্শ। তবে দীর্ঘ পরিক্রমায় মিউটেশনের ফলে মাইটোন্ড্রিয়াগুলো এখন আর স্বাধীন জীব হিসেবে বসবাসের উপযুক্ত নেই এবং আপনার কোষেরই অংশ হয়ে গেছে।
অন্য সব বিষয় বাদ দিলেও কেবলমাত্র মাইটোকন্ড্রিয়া দান করার জন্যই আপনার মায়ের প্রতি আপনার কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ।