আজব এক জাতি আমরা

in blurt •  2 years ago 

এই যে সেতু নিয়া এতো কিছু চলে, বাঙ্গালীর কাজ বুঝিনা। এইটা একটা মূল্যবান সেতু, রাস্তা খালি থাকলে আর গাড়ীর গতি ৬০ কিমি হলে ৬ থেকে সাড়ে ৬ মিনিটে পার হওয়া যায়। এই ৬ মিনিট কি ঠান্ডা মাথায় পার হওয়া এতোই কঠিন?

robin.jpg

বাঙ্গালী সহজ জিনিষরে কঠিন বানায় ছাড়ে। প্রথম দিন দেখেন হাভাতের মতো তার ডিঙ্গায়, মাটি খুইড়া সেতুতে উঠতে হবে। যখন উঠলো, মানুষে গিজগিজ করছে, কারো কোভিড নিয়া চিন্তা নাই। আইন রক্ষা বাহিনী একবার ছাড় দেয়, একবার বেরিকেড দেয়। এইটা লাঠিচার্জের জায়গা না।

দরকার হইলে পরদিন অফিশিয়ালি না খুইলা জনগনকে হাঁটার আর সেলফি তোলার সুযোগ দিতো। ৬ আর ৬ মোট ১২ কিলোমিটার যদি ৫ কিলোমিটার গতিতে হাটে, তাইলে আড়াই ঘন্টা হাঁটুক, সমস্যা কি? চার লাইন করে হাটতে দিয়ে ১০০ টাকা টিকেট রাখলেই হইতো।
এই নাটবল্টুর ঘটনা, ভাই সেতুতে ফ্রিকশন হবেই, নাট বল্টু ঝালাই করার জিনিস না। প্রতিমন্ত্রী বলছেন এগুলো শো-পিস, না জাইনা বলছেন। এগুলার দরকার আছে, তবে সেটা টাইট করা যায় না, গেলে ফ্রিকশনের সময় ভাইঙ্গা যাবে। আপনারা যারা গাড়ীতে ঢাকা শহরে চলেন, পাশ দিয়া বাস গেলে টের পান না গাড়ী কিছুটা দুইলা উঠছে? এইটাই ফ্রিকশন।

আচ্ছা ছয় মিনিটের রাস্তা, ধরলাম দেখতে দেখতে যাবেন, সেটা ৯ মিনিট। এই নয় মিনিট কি প্রস্রাব সংযত করা যায় না? মইরা যাইতেন যে প্যান্ট নস্ট হইয়া গেলো? এখন কি বলবেন, পাবলিক টয়লেট বানায় দিতে? হয় টাঙ্কি খালি কইরা যান না হয় যাইয়া করেন।

নামাজের আজান দিলেই কি হুড়মুড় কইরা কি কেউ জামাতে দাড়ায়? মাগরিবের আজানের পরও কিছু সময় হাতে থাকে, নামাজটা ঐপারে গিয়া পরেন, অথবা আগে পইরা শেষ হইলে যান। নামাজ পরতে বইসা গেছেন, আবার ক্যাপশানও দেখি আলহামদুলিল্লাহ, দিনের সেরা ছবি। নামাজ সেতুতেই পরতে হবে এইটাতে অন্য মানুষের গাড়ী চালাইতে সমস্যা হইতে পারে, আপনার নিজের জীবনও ঝুকিতে পরতে পারে। এরপর বলবেন একটা মসজিদ দরকার।

কারো খিদা লাগলে বলবেন কয়টা রেস্টুরেন্ট দরকার, একটা ফখরুদ্দিনের কাচ্চি, একটা কেএফসি দরকার, আমার বাচ্চা ফাস্টফুড ছাড়া খায় না। আবার কেউ বলবেন একটা ক্লাব হইলে ভালো হয় সাথে একটা বার আর জিম যেনো থাকে। সরকারী অফিসার বলবেন একটা সার্কিট হাউস দরকার। আমাদের চাওয়ার কোন শেষ নাই।

আমি তথ্যগুলি খেয়াল করি। প্রথম মেজাজ খারাপ হইলো, এক এমপি বললেন ঢাকার সাথে ২৭% জনগনের সংযোগ এক অভুতপূর্ব ইতিহাস সৃস্টিকারী। এরপর একজন বলেন আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখছি পদ্মাসেতু দেখলাম। আরেকজন মুক্তিযুদ্ধ দেখেন নাই কিন্তু পদ্মাসেত উদ্বোধন দেখছেন। আমার উত্তর হইলো, ২১ জেলার জনসংখ্যা ৩ কোটি। এটা ১৭%, অংক করেন এটা ২৭% না। এরপরের জবাব, এমনভাবে বলেন সংযুক্ত করছে, মনে হয় তিনবিঘা করিডোর দিয়া দহগ্রাম অঙ্গারপোতা যুক্ত করছে। আগে কি দক্ষিন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ঢাকায় আসতেই পারতো না? বরিশালের লাক্জারী লন্চগুলা দেখছেন? বরিশাল যাইনাই, গেলে সেই লন্চে যাইতাম।

জাফরউল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা করলেন পদ্মাসেতুকে, এইটা আপনার সকাল বিকাল রোগ, আপনিও সকালে এককথা বিকালে আরেক কথা বলেন। মেহের আফরোজ শাওন মুক্তিযুদ্ধ দেখেন নাই, ঠিকাছে, সেইসময়ের মাল আর অস্ত্র নিয়া সংসার কাটাইছেন, মুক্তিযুদ্ধ না দেইখা সেই গল্প শুনলেও অনেক কিছু জানা হয়। আরো অনেকে উচ্ছাসের চোটে এমন সব বর্ননা দেন যার ভিত্তি পাইনা। আমি বলছিলাম অংক কইরা বলবো জিডিপিতে কি আসবে। আপনারা যেইসব সংখ্যা দেন তার কোন ভিত্তি বা উৎস দেন না। আমি নিজে কইলাম ভিত্তি ছাড়া হিসাব আমি করতে পারি। আপনি পারলে ভালো না পারলে বইলেন এতো শতাংশ ধারনা করা হয় বা লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়।

এইদিকে এক চ্যানেল উইঠা পইরা লাগছে কোথায় কি রিসোর্ট বানানো যায়, কতো আয় হবে, দুনিয়ার মানুষ হুমড়ি খাইয়া পরবে। আমি এখনো বলি, রিসোর্ট কিছু চলবে, কিন্তু যমুনায় যেমন দূর থিকা ঐযে সেতু দেখায়, তেমন হইলে রিসোর্ট বেশী দিন চলবে না। বরং দক্ষিন পশ্চিমান্চলকে শিল্পে উন্নত করার সুযোগ আছে। শিক্ষায় ও তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত করার সুযোগ আছে। সেইটারে কাজে লাগায় পোর্টসেবা নেন। বারবার সেতু পার হওয়া লাগবে না।

আচ্ছা পদ্মাসেতুর মূল নকশা কার করা জানেন? ধরেন টেন্ডার করছেন, একজন কাজ করলো। যিনি কাজটা করলো, সেই চাইনীজ ক্যাপ্টেন কন্সট্রাকশনের নাম আপনারা কেউ মুখে আনেন না। টেন্ডার ইভ্যালুয়েশনকারী পরিষদের নাম বলেন। যিনি ডিজাইন করছেন তার নাম বলা শেখেন, যিনি পরিবর্তিত পাইলিং ডিজাইন করেন তার নাম বলেন, বারবার জামিলুর রেজা, বসুনিয়া, আইনুন নিশাত বইলা মূল নকশার প্রনেতারে গায়েব কইরা দিয়েন না।

সেতুটারে যে কাজে তৈরী সেই কাজ করেন। আর সেতু নিয়া রানিং কমেন্ট্রি বাদ দিয়া বাড়তি কোভিড আক্রান্তের খবর দেন, দেশের বন্যার খবর দেন।

  • কাজী এম মুর্শেদ
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!