দিন দুয়েক আগে আমরা এক নদীর ধারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে প্রচন্ড রকমের জ্যাম ছিলো। হঠাৎ করেই পাশ থেকে একটা ট্রাক এসে দাঁড়ালো এবং কতগুলি বাইকও ঢুকে পরলো।ট্রাকটা আগে গেলো পাশ থেকে বাইকও গেলো। যাওয়ার সময় কানে আসলো পাশের বাইকারদের একজন হাসতে হাসতে কাউকে বলতেছে যে , একটা ঘষা দিয়ে গেলাম।
অবাক হয়ে দেখলাম যে আসলেই আমাদের গাড়িকে ঘষা বললেও ভুল হবে রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে গেলো দিয়ে গেলো। রাস্তা দিয়ে চলার সময় অহরহই ধাক্কা লাগে কিংবা ঘষা লাগে কিন্তু সেগুলি কোনোটাই এররকম ঠান্ডা মাথায় না। বেপরোয়া ভাবে বাইক ও সিএনজিগুলো সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দেয় কিন্তু এগুলি এরকম ভাবে না।
ওই সময় এই বিষয়টা নিয়ে ভাবি নাই কিন্তু বাসায় এসে মনে হলো এমন করার কারণ কি ?
তখন আরো একটা জিনিস মনে হলো যে ,আমাদের গ্রামের বাড়িটা অনেক পুরোনো দিনের বাড়ি। আমাদের বাড়ির গেটে ও জানালার উপর পুরোনো সময়ের রঙিন ও বিভিন্য ধরণের নকশা করা কাঁচ ছিলো।
প্রায়ই দেখতাম ঢিল ছুড়ে কেউ ভেঙে দিয়ে যেত। এভাবে ভাঙতে ভাঙতে এখন বাইরের সেসব কাঁচ বলতে গেলে সবই শেষ। গতকালকের এই বাইকারের সাথে সেই কাঁচ ভাঙা এক বা একাধিক ব্যাক্তির সাথে মিল খুঁজে পেলাম।
house-506259_1280.jpg
pixabay
পরে আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা করে মনে হলো যে , মানুষ বিভিন্যভাবে আনন্দ পায়। সেটা স্বাভাবিকও হতে পারে কিংবা অস্বাভাবিকও হতে পারে। কেউ জিনিসপত্র ভাঙচুর করে আনন্দ পায় ,আবার কেউ বা শিশু নির্যাতন করে , কেউ কেউ ব্যাথা দিয়ে আনন্দ পায় আবার কেউ ব্যাথা পেয়ে আনন্দ পায় কেউ বা অকারণে পশু কিংবা মানুষ হত্যা করেও আনন্দ পায়।
তখন হঠাৎ করেই একটা শব্দ মাথায় আসলো ,আর সেটা হলো 'সোশিওপ্যাথ' । আসলে বেশ কয়েকবছর আগে এই রোগে ভুগছে এমন একজনকে নিয়ে লেখা পড়েছিলাম।বইয়ের নামটা ভুলে গেছি। যে অকারণে মানুষকে কষ্ট দিয়ে বা ক্ষতি করে আনন্দ পায়। সত্যি বলতে আমরা শুধু শারীরিক না মানসিকভাবেও কেউ -ই শতভাগ সুস্থ না। কিছু না কিছু সমস্যা আছেই। তবে সেটা সহনীয় মাত্রায় হওয়ার কারণেই চোখে পরে না।
make-up-4639167_1280.jpg
pixabay
সাইকোপ্যাথ ও সোশিওপ্যাথ এ আক্রান্ত মানুষগুলি মোটামোটি একই রকম। দুজনই আনন্দ পাওয়ার জন্য যেকোনো অপরাধমূলক কাজ করতে পারে। তবে সাইকোপ্যাথ ও সোশিওপ্যাথের মাঝে পার্থক্য হলো ,সাইকোরা পূর্ব-পরিকল্পিত ভাবে ধরা পরার সব রাস্তা বন্ধ করে অপরাধ করে আর সোশিওপ্যাথরা কোনো কিছু চিন্তা না করে হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আনন্দ পাওয়ার পথ বেছে নেয়।
আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ,অপরাধ করার পরে কোনোদিনই এদের মাঝে কোনো রকমের অনুশোচনা কাজ করে না। মানুষগুলি আমাদের আশেপাশেই রয়েছে। বাহ্যিক ভাবে আলাদা করে চেনার কোনো উপায়ই নেই।