মানবদেহে মোট ২০৬টি হাড় রয়েছে। তবে, জন্মের সময় এই সংখ্যা থাকে প্রায় ২৭০টি, কারণ নবজাতকদের হাড়গুলো আলাদা আলাদা থাকে এবং শরীরের বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণতার সাথে সাথে কিছু হাড় একত্রে মিশে যায়। এই হাড়গুলো মূলত বিভিন্ন অংশে বিভক্ত যেমন মস্তিষ্ক, ঘাড়, বুক, হাত, কোমর এবং পা।
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে মাথার খুলিতে ২৯টি হাড় থাকে। এর মধ্যে ৮টি হাড় মস্তিষ্কের গঠন করে এবং বাকি হাড়গুলো মুখমণ্ডলের এবং অন্যান্য অংশে থাকে। মস্তিষ্কের হাড়গুলো বিশেষভাবে শক্তিশালী হয় এবং এগুলোর সাথে এক ধরনের সংযোগকারী টিস্যু থাকে যা তাদের একসাথে আটকে রাখে।
বুকের অংশে মোট ২৫টি হাড় থাকে, যার মধ্যে ১২ জোড়া পাঁজরের হাড় থাকে এবং একটি স্তনের হাড় থাকে। পাঁজরের হাড়গুলো বুকের খাঁচা তৈরি করে, যা হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসকে রক্ষা করে। এছাড়াও পাঁজরের হাড় শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে।
হাতের অংশে মোট ৬৪টি হাড় থাকে, যার মধ্যে কাঁধের হাড়, কনুইয়ের হাড় এবং হাতের তালু ও আঙুলের হাড় রয়েছে। কাঁধের হাড়গুলো হাতকে শরীরের সাথে সংযুক্ত রাখে এবং হাতকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। হাতের তালুতে এবং আঙুলে ছোট ছোট হাড় থাকে, যা বিভিন্ন সূক্ষ্ম কাজ করতে সহায়ক হয়।
কোমরের অংশে ২৬টি হাড় থাকে, যার মধ্যে কশেরুকা এবং মেরুদণ্ডের হাড় রয়েছে। এই হাড়গুলো আমাদের শরীরের ভার বহন করে এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। মেরুদণ্ডে মোট ৩৩টি কশেরুকা থাকে, কিন্তু বড় হলে কিছু কশেরুকা একত্রে মিশে গিয়ে ২৬টি হাড়ে পরিণত হয়।
পায়ের অংশে মোট ৬২টি হাড় থাকে, যার মধ্যে ঊরুর হাড়, হাঁটুর হাড়, পায়ের তালু এবং আঙুলের হাড় রয়েছে। ঊরুর হাড় মানবদেহের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হাড়, যা আমাদের শরীরের ভার বহন করে এবং চলাফেরার সময় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। হাঁটুর হাড় (পেটেলা) হাঁটুকে সুরক্ষা দেয় এবং পায়ের নড়াচড়ায় সাহায্য করে।
মানবদেহের হাড়গুলো প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেট এবং কোলাজেন দিয়ে গঠিত, যা হাড়কে শক্তিশালী ও নমনীয় করে তোলে। হাড়ের মধ্যে রক্ত তৈরির জন্য বিশেষ এক ধরনের মজ্জা থাকে, যা আমাদের শরীরে রক্ত কোষ উৎপাদন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, হাড় আমাদের শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং আমাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক গঠন প্রদান করে।
সুতরাং, মানবদেহে মোট ২০৬টি হাড় রয়েছে, যা একত্রে কাজ করে আমাদের শরীরের কাঠামোকে ধরে রাখে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুরক্ষা দেয়, চলাফেরা ও শারীরিক কার্যক্রমে সাহায্য করে এবং রক্ত কোষ তৈরি করে আমাদের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়।