মুখে ব্রণ উঠা বা একনের সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ব্রণ বা একনে হলো ত্বকের এমন একটি অবস্থা, যা সাধারণত মুখ, গলা, বুক ও পিঠে দেখা যায় এবং ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে হয়। ব্রণের মূল কারণ হলো ত্বকের সেবাম বা তৈলাক্ত পদার্থ, যা অতিরিক্তভাবে নিঃসৃত হলে এবং মৃত কোষের সাথে মিশে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। এই সেবাম তৈলাক্ত পদার্থটি আমাদের ত্বকের তেল গ্রন্থি থেকে বের হয়, যা ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখে।
ব্রণ হওয়ার কিছু প্রধান কারণ নিচে আলোচনা করা হলো:
১. হরমোনের পরিবর্তন
হরমোনের পরিবর্তন ব্রণের অন্যতম কারণ। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের বয়সকালীন হরমোন পরিবর্তনের ফলে শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে। এই হরমোন ত্বকের তৈলগ্রন্থির সক্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ত্বকে অতিরিক্ত সেবাম নিঃসৃত হয় যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণ সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থা, ঋতুস্রাবের সময় বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যবহারেও এই হরমোনের পরিবর্তন হতে পারে এবং ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. জিনগত কারণ
জেনেটিক্স বা বংশগত কারণও ব্রণ হওয়ার একটি বড় কারণ। যদি পরিবারের মধ্যে অন্য কেউ এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে আপনার মধ্যেও ব্রণ ওঠার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কারণ জিনগত কারণে ত্বকের তৈলগ্রন্থিগুলো বেশি সক্রিয় থাকতে পারে, যা ব্রণ ত্বরান্বিত করে।
৩. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ব্রণকে প্রভাবিত করে। চাপ ও উদ্বেগ হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং এটি ত্বকে সেবাম নিঃসরণ বাড়াতে সহায়ক হয়, যা ব্রণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এছাড়া, দীর্ঘস্থায়ী চাপের কারণে ত্বকের কোষগুলোতে অস্থিরতা দেখা যায় যা ব্রণ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. খাদ্যাভ্যাস
অনেক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে খাবারের মাধ্যমে ব্রণের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ গ্লাইসেমিক খাবার যেমন চিনি, ফাস্টফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং দুগ্ধজাত পণ্য ব্রণ বৃদ্ধি করতে পারে। এই ধরনের খাবার ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় এবং সেবামের উৎপাদনকে উত্তেজিত করে, যার ফলে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয় এবং ব্রণ হয়।
৫. ত্বক পরিষ্কারের অভাব
ত্বক ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে মৃত কোষ ও ময়লা জমা হয়ে যায়, যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণ সৃষ্টি করে। যেসব ব্যক্তি নিয়মিতভাবে ত্বক পরিষ্কার করেন না তাদের ব্রণের সমস্যা বেশি দেখা যায়।
৬. মেকআপ ও প্রসাধনী
অনেক প্রসাধনী এবং মেকআপের মধ্যে রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা ত্বকে সংবেদনশীলতা তৈরি করতে পারে এবং ব্রণ সৃষ্টি করে। কমেডোজেনিক পণ্যগুলো ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে, ফলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
৭. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, লিথিয়াম ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধগুলোও ব্রণ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। এগুলো ত্বকে হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে ব্রণ দেখা দিতে পারে।
মুখে ব্রণ সমস্যার সমাধানে ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখা, এবং মানসিক চাপ কমানো জরুরি।