আমি ব্যক্তিগত ভাবে ছোটবেলা থেকেই ছোট ছোট গল্প, উপন্যাস, কবিতা, এসব পড়তে ভীষণ ভালবাসতাম।এমন কি আমি এখন সংসার জগতে পা দিয়ে সময় না পাওয়ার অভাবে।প্রায় সময় ফোনে রান্না, করার মাঝেও অনেক গল্প শুনতে থাকি।
আজ পড়ে ছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছোট গল্প "শাস্তি" পড়তে আমি ভীষণ ভালোবাসি, এই গল্প পড়ার মাঝে যেন আমি গল্পের ভিতর ডুবে গিয়েছিলাম।উক্ত গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন সময় নারীদের কে সমাজে যে কত টা অবহেলা করা হতো তা সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছে।আর তাই ভাবলাম আপনাদের সাথেও শেয়ার করি, আশা করছি আপনাদেরও ভালো লাগবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায় সব ছোট গল্পেই হৃদয় অরণ্যের গল্প।তবে, এর মধ্যেও "শাস্তি" গল্পটি একটা অসাধারণ গল্প। একটি কৃষক পারিবারের কলহকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই "শাস্তি" গল্পটি। এই গল্পের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির পরিবারিক জীবনের এক নিখুঁত শিল্প ভাষ্য রচনা করেছেন।
এই গল্পের প্রধান চরিত্র হচ্ছে একটা কৃষক পরিবার।এই পরিবারে দুই ভাই এবং দুই স্ত্রী রয়েছে এবং তাদের সাথে কিছু ছোট ছেলে মেয়ে রয়েছে।এ নিয়ে তাদের সংসার বড় ভাই হলো দুখিরাম,ও বড় বউ হলো রাধা,এবং ছোট ভাই ছিদাম রুই ও ছোট বউ চন্দরা, এই গল্পের নায়িকা হলো 'চন্দরা' ও নায়ক ছিদাম রুই। ভালো মনের একটা মানুষ,তিনি সব সময় হাসি খুশি থাকতেন এবং নিজেকে গুছিয়ে রাখতেন, গুছিয়ে শাড়ি পড়তেন এবং পাড়ার বৌদি দের সাথে গল্প করতে ও তিনি ভীষণ ভালোবাসতেন।
অন্যদিকে রাধা ছিলো বিপরীত তিনি খুব একটা কারো সাথে মিশতে পারতেন না। এবং প্রায় সময় রাগান্বিত থাকতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ওই পরিবার টা ছিলো ওই গ্রামের একটা আলোচিত পরিবার। সবসময় দুই জা এর সাথে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো।প্রথম দিকে দুই ভাই, দুই বউকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও এখন তারা চুপ থাকে,এবং তাদের দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তারা এত বেশি ঝগড়া করতে যে তাদের বাড়িতে কোন কিছু নিয়ে চেঁচামেচি হলেই পাড়ার লোক বলতো ওই তো শুরু হয়েছে দুই জায়ের ঝগড়া।
পরিবার টা ছিল নিম্নবিত্ত পরিবার নুন আনতে পান্তা ফুরায়, দুই ভাই সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনির পরেও সময় মত খাবার এবং ন্যায্য মজুরি পায় না তারা।অনেক দিন তাদের মাগনা খেটে দিতে হয়েছে। আজও এরকম একটা দিন ছিলো সারাদিন কাজ করার পরে তাদের মজুরি না পাওয়ার পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছো দুই ভাই।
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বড় ভাই দুখিরাম বড় বউ রাধার কাছে ভাত খেতে চায়।জবাবে রাধা খুবই রাগান্বিত হলো ও আগুনের মতো জ্বলে উঠে বলে,সে ভাত কোথায় পাবো, তুই কি ঘরে চাল দিয়ে গিয়াছিলি?আমি কি নিজে রোজগার করে আনবো?আর এই কথাটি তে ক্লান্ত ক্ষুধার্ত দুখিরামের মনে বিষম আঘাত লাগে। সে সহ্য করতে না পেরে অমনি দা নিয়ে রাগের মাথায় বউয়ের মাথায় কোপ মারে। সাথে সাথে তার বউয়ের মৃত্যু হয়।
ঠিক এমন সময় তাদের এক প্রতিবেশী রামলোচন খুড়ো, তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘটনা টি দেখে কে খুন করেছে জানতে চাইলে। ছোট ভাই ছিদাম বড় ভাই কে বাঁচানোর জন্য চন্দার নাম বলে দেয়। এ কথা সুনে তো চন্দার অগ্নিকুণ্ড হয়ে ওঠে। এমনকি চন্দরা কে বাঁচানোর চেষ্টা পর্যন্ত করে না তার স্বামী ছিদাম। এটা দেখে রামলোচন বাবু তাকে পরামর্শ দেন পুলিশ বা অন্যদের কাছে যেন ছিদাম তার ভাইয়ের দোষ দেন তাহলে তার বউ ফাঁসির হাত থেকে বেঁচে যাবে।
তখন ছিদাম বলে- "বউ গেলে বউ পাইবো, কিন্তুু আমার ভাই ফাঁসি হয়ে গেলে আর তো ভাই পাবো না।"
এই জায়গাটা তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব সুন্দর কিছু কথা লিখেছে, আমরা যখন এরকম দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলি, তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরকম টা হয় যে নিজের ঘাড়ের দোষ,অনেক গুলো মিথ্যা কে এক জায়গায় করে অন্যের ঘাড়ে সে দোষ টা চাপিয়ে দেই।তবে,সত্য তো সত্যই সত্য কি কখনো লুকানো সম্ভব!না। কার দোষ কে নেয়, ঠিক এই কারণেই এই গল্পের নাম "শাস্তি" দেওয়া হয়েছে ।
ছিদামের এই মানসিক তা বলি হলো চন্দরা।চন্দরার স্বামীর প্রস্তাব গ্রহণ করে খুনের দায় কাঁধে নিলো।কেননা সংসার ও এরকম কাপুরুষ স্বামীর প্রতি তীব্র ঘৃণা,অভিমানে ফাঁসির দঁড়িকে এই বরণ করলো। একদম শেষ সময়ে স্বামী তার সাথে দেখা করতে চাইলে বলে, উকিলকে চন্দরা বলে কে "মরণ!" এই একটি মাত্র শব্দের দ্বারা চন্দরা তার ক্ষোভ, ঘৃণা, অভিমান প্রকাশ করে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তুলে ধরেছে তখন কার সমাজে নারী কতটা তুচ্ছ ছিলো,নারীকে কখনো সম্মান বা ভালো চোখে দেখা হতো না।নারীর যে মর্যাদা তা থেকে সব সময় বঞ্চিত থাকতো এবং বিনা দোষে,বিনা কারণে শাস্তি প্রদান করা হতো,ও নারীকে আঘাত করা হতো।
গল্পটি করছিলাম আজ বসে বসে, তাই আপনাদের সাথেও শেয়ার করলাম, তো সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবে।