আমাদের উঠোনের একদম মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি বেল গাছ। বেল গাছটি অনেক পুরাতন। যখন আমার জন্মই হয়নি তখন আমার দাদি গাছটি লাগায়। প্রায় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর হয়ে গেছে গাছটি লাগানো। প্রত্যেক বছর প্রায় দুই- তিন মন বেল দেয় গাছটি। আমরা বেল খেয়ে, আমাদের আত্মীয়- স্বজনদের দিয়ে আমাদের গাছের বেল ফুরায় না। তাই নষ্ট করার থেকে আমরা আজ তিন বছরে তিন বার বেল বিক্রি করেছি। এই বছরও অনেক বেল ধরেছে তবে বিক্রি এবার করবো কিনা তা নিশ্চিত নয়।
আমার দাদি গল্প করে দাদার জমি তখনও ভাগ হয়নি, অনেক ধরনের গাছ ছিল সেই ভাগ না করা জমিতে। অনেক ধরনের গাছ থাকলেও বেলের গাছ ছিলনা তাই বেল কিনে খেতে হতো। আমার দাদির সেটা বড়ই অপছন্দের ছিল। দাদি কেনা জিনিস খেতে পছন্দ করেন না। তাই একটা বেলের চারার ব্যবস্থা করে লাগিয়ে দেন। দাদি কাজের অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও গাছের যত্ন করতে ভুলে যেতেন না। প্রতিদিন সকাল বিকেল নিয়ম করে পানি দেওয়া থেকে শুরু করে আমার দাদি একাই সব কিছু করতেন। তিনি নিজে আমাকে বলেন গরুর গোবর অর্থাৎ জৈব সার তিনি অনেকবার নিজের হাতে দিয়েছেন গাছের গোড়ায়।
আমার দাদি যে সময়ে বেল গাছটি লাগায় নিঃসন্দেহে সে সময় সব মানুষেরই কাজের কোনো শেষ ছিলনা কিন্তু তারপরেও আমার দাদির সব কিছুর ওপর নজর ছিল। সে ছেলে- মেয়েদের যতটুকু পেরেছে পড়াশোনা শিখিয়েছে হাতের কাজ শিখিয়েছে। এত এত কাজের মধ্যেও ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি সব গাছ-গাছালির যত্ন নিয়েছেন। গাছ গুলো বড় হয়েছে এখন অফুরন্ত ফল- ফলাদি দিচ্ছে তার নাতি- নাতনি সহ সেই ফল - ফলাদি খাচ্ছে। এটি তার কাছে অনেক আনন্দের। প্রকৃতপক্ষে তিনি তো এই আনন্দ টুকুই চেয়েছিলেন।
দাদার জমি এখন ভাগ হয়েছে বেল গাছটি আমার আব্বুর ভাগে পড়েছে। তাও আবার উঠানের একদম মাঝখানে। রাতে যখন বাইরে বের হয় তখন গাছের দিকে তাকালে তেমন একটা ভয় লাগেনা কারন আমরা গাছের সাথে বাস করতে করতে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে গাছটি কিছুদিনের মধ্যেই কাটা পরবে কারণ আব্বু বলেছে বাড়ির মধ্যে ভালো করে রোদ লাগেনা গাছটির জন্য তাই কেটে ওখানে একটা রুম করে দিবে।
তবে বলতেই হয় গাছটির পাকা বেল অনেক সুস্বাদু। একবার খেলে বারবার খেতে মন চায় বিশেষত সরবত খেতে তো আরও মজা। বেল গাছটির পাকা বেলের একটি বিশেষ গুন হলো এই গাছের বেল দিশে সরবত তৈরি করলে বেশি চিনি লাগেনা এতই সুমিষ্ট এই গাছের বেল। তাই সরবতটি হয় স্বাস্থ সম্মত। তবে কি গাছের জাত তা আমি জানিনা।।