'ধরা যাক একজন ব্যক্তি ফেইসবুকে দশজন লোককে ফলো করে। যে দশজনকে তিনি ফলো করেন, সেই দশজন যে একইসময়ে এবং একই বিষয়ে লিখবে— তা কিন্তু বলা যায় না। এমনটা সম্ভবত কদাচিৎও ঘটে না। কারণ ব্যক্তি বিশেষের আগ্রহ অবশ্যই আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। দেখা যায় ওই দশজনের কেউ কুরআন-হাদিসের কথা লিখে, কেউ লিখে রাজনীতি-সমাজনীতি নিয়ে। কারো লেখাজোকা হয় খেলাধুলা কেন্দ্রিক। কেউ চর্চা করে দর্শন আর কেউ হয়তো-বা আগ্রহ পায় বিজ্ঞানে অথবা সাহিত্যে।
ওই লোক যখন ফেইসবুক স্ক্রল করে, তখন তার নিউজফিডে এই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের, ভিন্ন ভিন্ন ভাবনার লেখাজোকা এসে হাজির হয়। কুরআন-হাদিসের লেখাটা পড়ার পরে তার সামনে আসে দর্শনের আলাপ। দর্শনের আলাপ শেষ হলে আসে রাজনীতির মারপ্যাঁচ। রাজনীতি পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর সামনে এসে হাজির হয় বিজ্ঞানের তত্ত্বকথা। বিজ্ঞান বিদেয় নিলে আসে সাহিত্য আর সাহিত্যের পাঠ চুকা মাত্রই সেখানে খেলাধুলো ঢুকে পড়ে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে এতোগুলো বিষয় যখন সামনে চলে আসে, তখন কোন আলোচনার সারবস্তুই যে আসলে মাথায় ঢুকবে না— সেটাই স্বাভাবিক। একসাথে এতোগুলো বিষয় পড়তে গিয়ে কোন বিষয়ই ভালোভাবে পড়া হয় না। পড়লেও তা হয় নেহাতই চোখ বুলানো।
এটা তো দশজন ব্যক্তিকে ফলো করলে যা অবস্থা হবে তার হিশেব, বস্তুত সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা শয়ে শয়ে মানুষকে ফলো করি। আমাদের নিউজফিড নানান তথ্য, নানান বিষয় আর হরেক রকমের আলোচনায় যে ভর্তি থাকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতোসব মানুষের এতো এতো লেখাজোকা, এতো এতো আলোচনা পড়তে গিয়ে আমরা নিজেদের অজান্তেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি এবং কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে তখন মস্তিষ্কে আলাদা জায়গা দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
সকালবেলা যে ভালো ব্লগটা পড়া হয় বা যে ভিডিও দেখে কোন একটা কিছু শিখবার তাড়না কাজ করে মনে, টানা নিউজফিড স্ক্রল করার পর সেই ভালো ব্লগটার বিষয়বস্তুই মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যায় অথবা নষ্ট হয়ে যায় ভিডিও দেখে পাওয়া স্পৃহাটুকুও।
মাত্রাতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার দিনশেষে আমাদের যা দু’হাত ভরে দেয় তা হলো— একরাশ ক্লান্তি। মাইলের পর মাইল হাঁটলে আমরা যেভাবে শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, মাইলের পর মাইল নিউজফিড স্ক্রল করার পর আমাদের মস্তিষ্কও সেরকম ক্লান্ত হয়ে পড়ে আর এই ক্লান্তি ধীরে ধীরে রূপ নেয় একটা মানসিক সমস্যায়।'