Aeroplane Ear"

in science •  3 years ago 

কানে তালা লাগার অনুভূতি:---

আমাদের মধ্যে যাঁরা উড়োজাহাজ চড়েছেন তাঁরা হয়তো অনুভব করেছেন এরোপ্লেন যখন রানওয়ে ছেড়ে আকাশে ওঠে বা আকাশ ছেড়ে রানওয়েতে নামে তখন মাঝে মাঝে আমাদের সাধারণের ভাষায় যাকে বলে কানে তালালাগা বা কানচাপা লাগা তাই হয় ! অনেক সময় বিশ-বাইশ তলা লিফটে ওঠা নামা করলেও এক অভিজ্ঞতা হয় ! ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলি, আমি যখন সারকারখানাতে কাজ করার সময় লিফটে চড়ে 70-80 মিটার উঁচু প্রিলিং টাওয়ারের উপর ওঠা নামা করতাম তখন এই অনুভূতিটা বেশ ভালোই অনুভব করতাম !

অনেক সময় আবার পাহাড়ে চড়লে বা ঠান্ডা লাগলে বা কোনো কারণে রক্তে দ্রবিভুত গ্যাসের পরিমান কমবেশী হলে ঐ একই রকম কানে তালা লাগা অনুভুতি হয় ! যাইহোক এটা কোনো রোগ নয় শরীরের ভিতরে বা বাইরের পরিবেশে পরিবর্তনের একটা শারিরীক প্রতিক্রিয়া বা উপসর্গ মাত্র ! ডাক্তারি পরিভাষাতে একে বলে --"ব্যারোট্রমা"

air.jpg

কানের গঠন --প্রকৃতি এক অসাধারণ প্রযুক্তিবিদ :---

আমাদের কানের বিশেষ গঠন পরীক্ষা করলে দেখবো প্রকৃতি কি অসাধারণ ও নিখুঁত প্রযুক্তিবিদ ! আমাদের কানের তিনটি অংশ এক্স্ট্রারনাল ইয়ার বা বহিকর্ণ, মিডল ইয়ার বা মধ্যকর্ণ, এবং ইনটারন্যাল ইয়ার বা অন্তকর্ণ !

বাইরের কান ও মধ্যকর্মের মাঝে আছে শব্দ তরঙ্গ অনুভবকারী একটি পাতলা স্থিতিস্থাপক পর্দা যাকে আমরা "কর্ণপটহ" বা "ইয়ারড্রাম" বলি! বহিকর্ণের সাথে বাইরের বায়ুমন্ডলের প্রত্যক্ষ যোগ ! আর মধ্যকর্ণটি তার পিছনে মাথার ভিতরের দিকে থাকে আর তারও পিছনে থাকে অন্তকর্ণ যেখানে থেকে "ককলিয়া" হয়ে শব্দ তরঙ্গের অনুভুতি স্নায়ুকোষের মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিশেষ অঞ্চলে পৌঁছায় ! আমরা শব্দ বা গান বা নয়েজ শুনতে পাই ! এই মধ্যকর্ণ অঞ্চলে থাকে খান তিনেক ছোটো ছোট সুক্ষ হাড়ের অদ্ভুত সমন্বয় ! যাদের নাম "ম্যালিয়াস" "ইনকাস" আর "স্টেপিস" ! এই স্টেপিস হল আমাদের শরীরের ক্ষুদ্রতম হাড় !

শব্দ রপ্তানির প্রযুক্তি:---

পর্দা ,স্টেপিস , ইনকাস এবং ম্যালিয়াস এদের মাধ্যমে বাইরের শব্দতরঙ্গ দ্বারা উৎপন্ন কানের পর্দার কম্পন বর্ধিত বা এমপ্লিফায়েড হয়ে "ককলিয়ার" গায়ে চাপতরঙ্গ সৃষ্টি করে সেটাই স্নায়ুকোষের মাধ্যমে মগজে পৌঁছায়! মগজ সেই কম্পন বিশ্লেষণ করে আমাদের মনে বা মগজে শব্দের সুখানুভূতি বা যন্ত্রনার অনুভূতি তৈরী করে !

যেন গ্রামাফোনের স্টাইলাস:---

যারা পুরোনো মানুষ তাঁরা দেখে থাকবেন গ্রামাফোন রেকর্ড প্লেয়ারের উপর নিয়মিত মৃদু ঢেউয়ের ছন্দে দোলায়মান "স্টাইলাস" নামক যন্ত্রাংশটি ! সেটির মাথার ধাতব পিনটি ঘুরন্ত রেকর্ডের পিঠের সুক্ষ উঁচু নীচু ট্রাক বা খাদের মধ্যদিয়ে ধীরে ধীরে চলার সময় যে কম্পন উৎপন্ন করে তাকে ঐ কানের পর্দার মতো একটা খুব পাতলা ধাতব পর্দা ও সংলগ্ন ফাঁকা টিউব বা নলের মাধ্যমে পরিবর্ধিত করে আমাদের কানে গান শোনানো হতো ! সেই যন্ত্রের চেয়ে অনেক অনেকগুন সুক্ষ ও সংবেদনশীল আমাদের কর্ণযন্ত্রের কর্মকুশলতা !

ব্যালেন্স চাই সর্বত্র:--

যাই হোক এখন আমাদের কানের মধ্যকর্ণ ও বহিকর্ণের মধ্য যাতে বায়ুচাপের ব্যালেন্স বা সমন্বয় থাকে তার জন্য প্রকৃতি একটা কৌশল নিলেন ! সেটা হল "ইউস্টেশিয়ান টিউব " ! এই নলাকৃতি প্রত্যাঙ্গের একদিক মধ্যকর্ণের দিকে খোলা আর একটা দিক বেরিয়ে এসে আমাদের মুখগহ্বরের মধ্যে উন্মুক্ত হয়েছে ! আমাদের মুখের ভিতরেও স্বভাবিক বায়ুচাপ আর কানের পর্দার বাইরের দিকেও স্বাভাবিক বায়ুচাপ পর্দাটিকে সাধারণ অবস্থায় স্থির রাখে ! যখন বাইরের শব্দের কম্পনচাপ এসে পর্দাকে কাঁপাতে তাকে তখন আমরা ঐ যে "প্রাকৃতিক স্টাইলাসের" কথা বললাম তার মাধ্যমে সেই শব্দ শুনি ! বলাবাহুল্য আমাদের এই শ্রবন ইন্দ্রিয়টি যথেষ্ট সুক্ষ ও দারুণ সংবেদনশীল !

এরোপ্লেন ইয়ার-সেটা কি ?:---

আমরা জানি সমুদ্রতলে বায়ুচাপের মান 14.7psi বা ১৪.৭ পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চ ! এটা প্রায় 1kg/square cm ! এই বায়ুচাপ উচ্চতার সাথে কমে ! 35000 ফুট উচ্চতায় এই চাপ 3-3.5 psi পর্যন্ত কমে যায় ! ঐ উচ্চতায় বায়ুচাপ এবং বাতাসের অক্সিজেনের মাত্রা এতই কম যে কয়েক মিনিটেই আমাদের মৃত্যু অনিবার্য ! তবে ঐ উচ্চতায় প্লেনের ভিতরে কেবিনে যন্ত্রপাতির সাহায্যে বাতাসের চাপ বাড়িয়ে ও ঘনত্ব ঠিক রেখে প্রায় সমুদ্রতলের কাছাকাছির মতো স্বভাবিক রাখা হয় 12.5psiএর মতো ! ! যখন আমরা প্লেনে চড়ে ওপরে উঠি তখন আমাদের কানের ভিতরে দিকে স্বাভাবিক বায়ুচাপ ও কানের বাইরের প্লেনের কেবিনের অপেক্ষাকৃত কম বায়ুচাপ কানের পর্দার স্বাভাবিক কম্পনে বাধা সৃষ্টি করে ! সেই অনুভূতিটাই আমাদের কানে তালা লাগার মতো মনে হয় ! এটার নামই হল "এরোপ্লেন ইয়ার" বা ডাক্তারির পরিভাষাতে "ব্যারোট্রমা"!
অনেক সময় বাইরের কানে জল ঢুকলে বা ঠান্ডা লেগে মধ্যকর্ণের "ইউস্টেশিয়ান নল" ব্লক হয়ে গেলে আমাদের ঐ একই রকম অনুভূতি হয়ে থাকে !

প্রতিকার আছে :---

যদিও এটা একটা অনুভূতি মাত্র চিন্তার কোনো বিষয় নয় তবুও এই অস্বস্তিকর অনুভূতি কাটানো যায় ! ইচ্ছা করে পরপর কয়েকবার হাঁই তোলা , বা চুয়িংগাম চিবানো বা নাক চেপে শ্বাস বন্ধ করে একটু চাপ দেওয়া এসব করলে ব্যাপারটা ঠিক হয়ে যায় ! প্লেনে ওড়ার ক্ষেত্রে প্লেনটা উপরে উঠলে তার অটোমেটিক সিস্টেমের সাহায্যে প্লেনের ভিতরে চেম্বারে বায়ুচাপ স্বাভাবিকের কাছাকাছি হয়ে গেলে কানের তালা আবার খুলে যায় !

        ---সমীর ব্যানার্জী
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!