জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ

in science •  3 years ago 

একটি উজ্জ্বল বস্তু আমাদের চোখের সামনে থাকলে প্রতি নিয়ত কোটি কোটি আলোর কণিকা তথা ফোটন এর বিভিন্ন অংশ হতে আমাদের চোখে এসে পড়ে। ফলে সেই বস্তুটিকে তার অবয়বসহ আমরা দেখতে পাই। বস্তু যতই দূরে সরে যেতে থাকে ততই বস্তুটি আমাদের চোখে ক্ষুদ্র হয়ে ধরা দেয় কারণ তার বীক্ষণ কোণ ছোট হতে থাকে। সেই সাথে সেই বস্তু থেকে আগত ফোটনের সংখ্যাও আমাদের চোখে পড়ে কম। কারণ ফোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট এবং তা সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশ হালকা হয়ে। ক্রমশ বস্তু আরো দূরে সরে গেলে বীক্ষণ কোণ কমে গিয়ে ফোটনের সংখ্যা আরো কমতে থাকে, ফলে বস্তুটি ক্রমশঃ আমাদের চোখে একটি বিন্দুতে পরিণত হয়। রাতের আকাশের তারাগুলো আমাদের চোখে বিন্দুর মতো লাগে কারণ এরা অনেক আলোকবর্ষ দুরে রয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি বিন্দুও নয়, কারণ তখনো তারার বিভিন্ন অংশ হতে সেকেন্ডে কয়েক লাখ ফোটন আমাদের চোখে এসে পড়ে। তাই তারার আকৃতি বা অন্ততঃ বড় গ্রহগুলোর আকৃতিও আমরা বুঝতে পারি।

jwst.jpg

কিন্তু এই বিন্দুব্রত বস্তুটি দূরে যেতে যেতে এতোই দূরে চলে যেতে পারে যখন সেকেন্ডে আর কয়েকলাখ ফোটনও আমাদের চোখে আসবে না, কমতে কমতে হাতে গোনা কয়েকটি করে ফোটনে পরিণত হবে। সেই অবস্থায় আমরা বস্তুটিকে আর দেখতে পাব না। বস্তুটি আরো দূরে চলে গেলে এমনকি সেকেন্ডে একটি করে ফোটনও আর আমাদের চোখে পড়বে না, বরং হঠাৎ হঠাৎ একটি করে ফোটন চোখে পড়বে। এই অবস্থায় বস্তুর কোন অংশ হতে ফোটনটি আসছে তার আর কোনো তাৎপর্য থাকবে না এবং আলোর উৎসটি প্রকৃতপক্ষেই একটি বিন্দু উৎসে পরিণত হবে। কিছু কিছু প্রানী আছে এই একক ফোটনও সনাক্ত করতে পারে!

এই অনুজ্জ্বল বস্তুটি থেকে আমরা অনেক বেশী ফোটন সংগ্রহ করতে এবং দেখতে পেতাম যদি আমাদের চোখটিকে অনেক বড় করে নিতে পারতাম! এই কাজটি আমরা পরোক্ষভাবে করতে পারি একটি টেলিস্কোপের মাধ্যমে। টেলিস্কোপে একটি বড় লেন্স বা প্রতিফলক থাকে যার মাধ্যমে আমরা অনেক বেশি ফোটন ধরে সেগুলোকে কেন্দ্রীভূত করে আমাদের চোখে ফেলতে পারি। এর ফলে অনেক দূরের অনুজ্জ্বল বস্তুকেও আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। কিন্তু একটু বড় হয়ে গেলে আর প্র্যাকটিক্যালি লেন্স ব্যবহার করা যায় না তাই আমরা প্রতিফলক তথা আয়না ব্যবহার করি। এই কারণেই মহাকাশ গবেষণার সব টেলিস্কোপেই বিশাল থালার মত আয়না দেখতে পাওয়া যায় এবং সেটা ডিশ এন্টেনার মত প্যারাবলিক হয় যেন সরাসরি ফোটনগুলোকে কেন্দ্রীভূত করে শক্তিশালী বিম্ব তৈরি করা যায়।

আরেকটি কাজ করা যেতে পারে এক্সপোজারের (উন্মুক্ততা বলা যায়?) মাধ্যমে। দীর্ঘ সময় ধরে যদি আমরা একটি উৎস থেকে ফোটন সংগ্রহ করি তাহলে সম্মিলিতভাবে সেগুলো বেশ উজ্জল একটি বিম্ব তৈরি করতে পারে। ক্যামেরার মাধ্যমে এভাবে অনুজ্জ্বল বস্তুর উজ্জ্বল ছবি তোলা হয়। তবে এইক্ষেত্রে ক্যামেরা সামান্য নড়ে গেলেই আর ফোটনগুলোর আপেক্ষিক অবস্থান ঠিক থাকবে না বা ছবি ঘোলা হয়ে যাবে।

কিন্তু যদি আলোর উৎস হয় ১৪ বিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরের তাহলে শুধু বড় আয়না ব্যবহার করে বা এক্সপোজার বাড়িয়েও যথেষ্ট উজ্জ্বল ছবি পাওয়া যাবে না। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে এই দুইয়ের সমন্বয় করা হয়েছে। এতে যথেষ্ট বড় আয়না (২৫ বর্গমিটার, ছবির ষড়ভূজাকৃতির প্যানেলগুলো) ব্যবহার করা হয়েছে যতটা বড় হলে ভাঁজ করে একটি রকেটে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তারপরও গবেষকগণ আশা করছেন এই আয়নার মাধ্যমে সেকেন্ডে কেবল একটি বিগব্যাংএর সময়কালীন ফোটন তাঁরা ধরতে পারবেন। কাজেই উল্লেখযোগ্য পরিমান তথ্য পেতে হলে একে দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থিরভাবে একই দিকে এক্সপোজ করে রাখতে হবে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!