কুয়াশা ভরা শীতের সকাল

in r2cornell •  last year 

গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরা টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কলরবে আন্দোলিত শীতে অতীত আমার গ্রামীণ জীবনযাত্রা। আলস্যের চাদর ও কুয়াশার ধূম্রজাল চিরে পূর্ব আকাশে সূর্য নিজেকে জানান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত, আলতো সূর্যরশ্মিতে ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দুগুলো মুক্তোদানার মতো ঝলমল করত। স্নিগ্ধময় গ্রামবাংলার শীতের সকাল! গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে কার না ভালো লাগত? পুবের জানালা ভেদ করে সূর্যের আলোর ছোঁয়ায় ভোরবেলা ঘুম ভাঙত, কিন্তু কনকনে শীতের কারণে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা! হঠাত্ হিমেল বাতাসে ভেসে আসা মিষ্টি গন্ধ আমাকে মুগ্ধ করে রাখত। কৌতূহল নিয়ে বাইরে এসে দেখতাম উনুনে খেজুর রস জ্বাল দিচ্ছে মা-চাচিরা, শীতের নানা পিঠাপুলি তৈরি ও গল্প চলছে।

অন্যদিকে শিশিরভেজা মেঠোপথে একদল শিশু খালি পায়ে হেঁটে বেড়াত। আমিও তাদের সঙ্গী হতাম, কিছুটা পথ এগোতেই চোখ দুটি জুড়িয়ে যেত দৃষ্টিনন্দন সরিষাখেত দেখে। যেন হলুদের চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কী অপরূপ প্রকৃতি! যান্ত্রিক কোলাহল ও অবাধে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কোম্পানির রাজত্ব-লীলায় এসব দৃশ্য আজ শুধুই কল্পনা!

ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত ছিলাম আমি। তাই শীতের প্রভাব আমাকে খুব একটা বিচলিত করতে পারেনি। আমার বেড়ে ওঠা গ্রামে। ইট-কাঠ-পাথরের দেয়াল আর অহরহ গাড়ির অবিরাম ছুটোছুটি ছিল না, শীতের প্রভাবটা গ্রামেই খুব বেশি অনুভব করতাম। জীবিকার জন্য এই আধুনিক প্রতিযোগিতার যুগে জীবনগাড়িকে সচল রাখতেই এখন শহরে যান্ত্রিক পরিবেশে ছুটে চলা। কিন্তু এখানে তুলনামূলক কম শীতকে উপেক্ষা করে গ্রামের হাড়কাঁপানো শীত অনেক বেশি উপভোগ্য, যা প্রতিনিয়ত মনে পড়ে, ইচ্ছে করে আবার ফিরে যাই সেই ছোট্টবেলায়!

শীত এলেই মনে পড়ে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। গ্রামের সেই শীতের সকাল আজো হূদয়কে আশাহত করে, আমি জানি আর কখনো ফিরে পাব না হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো। তবুও ফিরে যেতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির খুব কাছে, ইচ্ছে করে উপভোগ করি মুক্ত আকাশে হারিয়ে যাওয়া শীতের সকাল।

image.png

শীতে যশোরের ডাঙ্গাবয়রা গ্রাম || Winter Village a…:

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!