বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চ পান্ডব

in r2cornell •  3 years ago 

FB_IMG_1641602729613~2.jpg

খুব ছোটোবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি একটা টান ছিলো! বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি। আগেই বলে নিচ্ছি আমি কোনো স্ট্যাট বা তথ্যবহুল পোস্ট লিখতে বসিনি। যা লিখছি নিজের মেমোরি থেকে। কমবেশি ভুলচুক থাকতে পারে।
যাইহোক যা বলছিলাম। সেকালে খেলা দেখতাম কিন্তু বাংলাদেশ জিততোনা। মাঝে মধ্যে আশরাফুল সেঞ্চুরি করে ফেলতো হাবিবুল বাশার হাফসেঞ্চুরি মারতো বেলিম মাঠ কামড়ে থেকে পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলতে সাহায্য করতো কোনোকোনো দিন। সেগুলাই তখনের জন্য বড় পাওয়া ছিলো। তখন মনে আশা একটাই ছিলো, একটা ভালো ফাইটিং স্কোর! একশর নিচে যেনো অল আউট না হয় বাংলাদেশ। সে সময় আমরা জিম্বাবুয়ের সাথে প্রচুর ফাইট করে হেরে যেতাম। তবুও তৃপ্তি খুঁজতাম আশরাফুলের রানে রফিকের বলে। কালভদ্রে জিতে গেলে তো ঈদের চেয়েও বড় আনন্দ লেগে যেতো। আশরাফুল ফ্লুকে যেদিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতে গেলাম সেদিন পুরোদেশে মিছিল হয়েছিলো! রঙ খেলা হয়েছিলো! পারায় পারায় মিষ্টি বিতরণ হয়েছিলো! বাংলাদেশের একটা জয় মানেই রাজপথে আনন্দের মিছিল ছিলো!
সাতের বিশ্বকাপে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে শুকনা ছেলেটার ডাউন দ্যা উইকেটে এসে ছক্কা মারা দেখে, মাশরাফির ধরে দিবানি বলা শুনে মনে বিশ্বাস আসতে থাকলো বাংলাদেশের ক্রিকেটে এইবার কিছু একটা হবে। হলোও তাই! লর্ডের মাঠে তামিমের সেঞ্চুরি হলো! ফাইট করে হেরে যাওয়া জিম্বাবুয়েকে নিয়মিত হারানো শুরু হলো। ঘরের মাঠে পরের মাঠে সব খানে। তখন আর জিম্বাবুয়ের সাথে জিতলে মিছিল হয়না। আমাদের সম্মানজনক হার থেকে আশা বেড়ে জয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। সাকিব বিশ্বের এক নাম্বার অলরাউন্ডার হলো। তার নিচের নাম গুলো কি ভয়াবহ।ডেনিয়েল ভেট্টোরি, জ্যাক ক্যালিস। এই সুপারস্টারদের উপরে আমাদের প্লেয়ারের নাম থাকবে কখনো স্বপ্নেও আনতাম না। অথচ কয়েক বছরের ব্যবধানে সব ভোলবাজির মতো পালটে গেলো। তখন চ্যানেল ছিলো টেন স্পোর্টস। সেখানে আইসিসির র‍্যাংকিং দেখাতো। একদিন দেখলাম আমাদের মাশরাফি বোলিং র‍্যাংকিং এ ১০ এর ভেতর চলে এসেছে! কি তাজ্জব ব্যাপার! মাঝে মধ্যে রাজ্জাকের নাম ও দেখেছি। সাকিব তো থাকতোই! এগুলোর মাঝে বাংলাদেশ নিয়মিত জিততে শুরু করলো! একে একে সব দলকে হারালো! আমরা আনন্দ মিছিল রঙ খেলা জারি রাখলাম। তখন আর আমাদের একটা জয়ে পোষাচ্ছিলোনা। সিরিজ জয় চাই আমাদের। নিউজিল্যান্ড কে এনে একদম বাংলাওয়াশ করে দিলাম। ছাতি আরো চওড়া হলো আমাদের। আরো আরো সিরিজ জয় লাগবে আমাদের। একটা ম্যাচ জয় থেকে আমরা সিরিজ জেতা শুরু করলাম। সাকিব তামিম মাশরাফি মুশফিক রিয়াদ একসাথে যেদিন নামতো আমরা ভাবতাম আজ কিছু হবেই হবে। কোনোদিন জিততাম কোনোদিন হারতাম। তবে কোনো কমপ্লেইন ছিলোনা।
ততোদিনে ফেসবুক খুলেছি। মানুষ বাংলায় টাইপ করেনা তেমন। বাংলাদেশ হারলে সমালোচনা হয়না!বড় বড় পোস্ট হয়না। বাংলাদেশ জিতলে সবাই খুশি খুশি পোস্ট দেয়। উৎপল শুভ্রের প্রথম আলোয় লেখার কলামের ছবি পোস্ট দেয়! কি আনন্দ লাগে।
কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই নিজেদের এশিয়া কাপের ফাইনালে আবিষ্কার করলাম ২০১২ সালে। ফাইনালে গিয়ে টের পেলাম একটা কাপ জেতার মহত্ব কি! সেদিন জিততে জিততেও হেরে গেলাম। সাকিব কাঁদলো! আমরা কাঁদলাম! ভাত না খেয়ে ঘুমালাম। কলেজ গিয়ে একেকজনের আফসোসের শেষ নেই। আমরা একটা কাপ জিততে পারতাম। অধরা অবাস্তব একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। একটা কাপ জেতার স্বপ্ন! সময় আগাতে থাকলো! এর ওর বিপক্ষে সিরিজ জেতা, অল রাউন্ডারের তালিকায় ১ নাম্বার স্থানটাকে সাকিবের বাপের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা এখন আর আমাদের গায়ে লাগেনা! অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তান ইন্ডিয়ার বিপক্ষে জিতেও আর মিছিল হয়না, গায়ে লাগেনা! প্লেয়াররাও পুরো মাঠ দৌড়ায়না পতাকা নিয়ে। সম্মান জনক হার থেকে ম্যাচ জেতা এ আর এমন কিতে এসে ঠেকেছে ততোদিনে। এরই মধ্যে এশিয়া কাপের ফাইনাল, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল, চ্যাম্পিয়নস লীগের সেমিফাইনাল খেলে ফেলেছি আমরা। কিন্তু অধরা কাপ আর ধরা হয়না। কিন্তু যে ফাইনাল গুলো খেলেছি সেগুলোর কথা ১০ বছর আগে যদি আমাকে কেউ বলতো যে দশ বছর পর বাংলাদেশ এই জায়গায় যাবে! চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দর্শক হয়ে দেখা দলটা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমি খেলবে। বিশ্বকাপে ভারতের কূটচালে কোয়ার্টার ফাইনাল হারতে হবে তাহলে আমি বলতাল "হালায় গাঞ্জা খাইসে।" অথচ সাকিব তামিম মাশরাফি রিয়াদ মুশফিক ব্যাপারগুলোকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
বর্তমানে এসে অবাস্তবকে বাস্তব করার পরেও আমাদের হচ্ছেনা! আমাদের আরো আরো চাই! একসাথে সব চাই।সোনার ডিম পারা হাসের পেট কেটে হলেও সব চাই আমাদের। আমাদের এখন কাপ চাই! চাই মানে চাইই। সাকিব হটাও তামিম হটাও মুশি হটাও বাংলাদেশ ক্রিকেট বাঁচাও রব উঠেছে। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কিছু জয় ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি বলেও কথা উঠেছে। অথচ একটা দেশের কাপ জেতার চেয়েও যে জিততে শেখা কঠিন আমরা সেটা ভুলে গেছি। কাপ জিততে হলে আগে আপনাকে খেলায় আসতে হবে। যেটা আকরাম নান্নু করেছে। মাঝে মধ্যে জিততে শিখিয়েছে আশরাফুল বাসার রফিকরা। সাকিব তামিমরা পাঁচ জন মিলে সেটাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে নিয়মিত ম্যাচ জিতিয়েছে, সিরিজ জিতিয়েছে, কাপ জেতানোর দাঁড় প্রান্তে নিয়ে গেছে ভাগ্যদোষে হয়তো হয়ে উঠেনি। ক্রিকেটবোর্ডটা হয়তো আরেকটু প্রফেশনাল হলে প্রাক্টিসের সুযোগ সুবিধা মিললে অনেক আগেই কাপ জিতে যেতো ওরা। নান্নু আকরাম সুজনরা যে লেভেলের প্রাক্টিস জিম ফ্যাসিলিটি পেয়েছে তার থেকে ভালো ফ্যাসিলিটি পেয়েছে তামিম সাকিবরা। সে কারণে সুজনের ১২৬ গতির বল থেকে মাশরাফির ১৪০+ গতির বল পেয়েছি আমরা। আবার তামিম মাশরাফিরা যে লেভেলের ফ্যাসিলিটিতে বড় হয়েছে আজকের তাসকিন মুস্তারা তার চেয়ে ভালো ফ্যাসিলিটি পেয়েছে। শরিফুল জয় আকবরেরা তো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে অলরেডি একবার। এই যে ওদের বিশ্ব জয়, বিশ্বকাপ জেতা একদিনে হয়নি। একটা প্রসেসের ভেতরেই হয়েছে। ওরা সাকিব তামিমের খেলা দেখে বড় হয়েছে। ওদের আশা তাই সাকিব তামিমদের চেয়েও বেশি ছিলো। হয়তো ওরা একদিন আমাদের অধরা কাপ দিবে। আবার নাও দিতে পারে। প্রসেসটা যতো নির্ভুল হবে ততো তাড়াতাড়ি আমরা অধরা কাপ পাবো। কিন্তু কাপের আশায় মগ্ন হয়ে গোল্ড ফিশের মতো সাকিব তামিমদের অবদান ভুলে গেলে হবেনা। মুশি রিয়াদের অবদান ভুলে গেলে হবেনা।ঘাড় ত্যাড়া ম্যাশের অবদান ভুলে গেলে হবেনা। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছে। একটা প্রসেসের ভেতর এনেছে। সাহস দিয়েছে, পথ দেখিয়েছে কিভাবে খেলতে হয়, এগিয়ে যেতে হয়। সে পথ ধরে হেটে তরুণেরা আরো ভালো কিছু করবে। তার পরের জেনারেশন আরো ভালো কিছু করবে যদি বোর্ডের প্রসেস ঠিক থাকে তাহলে। কিন্তু দল হয়ে খেলতে শেখানো, দলকে জিততে শেখানো মানুষ গুলোকে চাইলেই বলে দিতে পারেন না বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাদের অবদান নেই। বা তারা সিন্ডিকেট করে বসে আছে। আপনি যে আজ কাপ জেতার স্বপ্ন দেখছেন সেটার নাম শুনলেও ভয় পেতেন যদিনা এই ৫ জন তারকার আবির্ভাব বাংলার ক্রিকেটে না হতো। মানুষ হয়ে জন্মেছেন মানুষের মতো মস্তিষ্ক ধারণ করুন। কৃতজ্ঞ হয়ে শিখুন। মানুষের অবদান স্বীকার করতে শিখুন। তা না হলে খুব বেশি চাইলে সোনার ডিম পারা হাসের মালিকের মতোই অবস্থা হবে আমাদের।
আগে শুনতাম ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া বলতো বাংলাদেশের সাপোর্টাররা খুবই প্যাশনেট। কিন্তু ধৈর্য্য কম, উগ্র। তখন গালাগাল দিতাম।বলতাম বলে কি!কিন্তু যখন দেখি এখনের জেনারেশন যারা খেলা দেখা শুরু করেছে হাতুরুসিংহের কোচিং এর পর তারা ম্যাশ সাকিব রিয়াদকে গালাগাল দেয়! আবেগ বিক্রেতা উপাধি দেয় তখন বুঝি ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া খুব একটা ভুল বলেনি। সাথে আরেকটা টাইটেল তারা যোগ করেনি যেটা হলো অকৃতজ্ঞ।
আজ থেকে ২ বছর পরেও যদি বাংলাদেশ কাপ জেতে বা গত ১০ বছরেও না জেতে তাহলেও বাংলার ক্রিকেটে এই ৫ জনের অবদান অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। তারা আমাদের সুপার হিরো। তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটেকে অনেক দূর যাবার বড় কিছু জেতানোর মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়েছে। এইবার পরের জেনারেশন আর ক্রিকেটবোর্ড সেটাকে কোথায় নিয়ে যায় বা কিভাবে ব্যবহার করে সেটাই দেখার বিষয়। তবে দয়া করে একটা জেনারেশনের সুপারহিরোদের নেক্সট জেনারেশন এসে গালমন্দ করবেন না। তারা এই গালমন্দ ট্রলটা প্রাপ্য না। তারা একটা বড় ধন্যবাদ প্রাপ্য! আমাদের সেটা দিতে জানতে হবে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!
Sort Order:  
  ·  3 years ago  ·  


** Your post has been upvoted (2.14 %) **

Thank you 🙂 @tomoyan
https://blurtblock.herokuapp.com/blurt/upvote