পাখির মত ডানা মেলে ঘুরে বেড়ানো মানুষের আদিমতম এক ইচ্ছা। তাইতো মানুষ চেষ্টা করেছে পাখিকে খাঁচায় বন্দী করতে আর নিজে উড়োজাহাজে চড়ে পাড়ি দিয়েছে সাত সমুদ্র তেরো নদী। কিন্তু ক্ষুদ্র এক অনুজীব করোনা ভাইরাস আজ মানুষকে বন্দি করে রেখেছে। যেন মানুষকে আজ চিড়িয়াখানায় বন্দি পশুপাখিদের জীবনের কষ্ট বোঝার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
করোনাভাইরাস আমাদের অনেক নতুন শব্দের সাথে পরিচিত করে দিয়েছে। কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন প্রভৃতি চিকিৎসাশাস্ত্রের শব্দগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কোনো ধারনাই ছিল না। এমনকি অনেকে এসব শব্দ জানতেনও না। অথচ আজকের বিশ্বে কী অবলীলায় একটি ছয় বছরের শিশুও আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন এর মত কঠিন শব্দগুলো এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে পরিচিত। সেই সাথে বিশেষভাবে আলোচিত লকডাউন পদ্ধতি।
লকডাউন মূলত দেয়া হয়ে থাকে কোন একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে যাতায়াত বন্ধ করার জন্য। হতে পারে সেটি রাজনৈতিক কোনো কারণ অথবা যুদ্ধ বা অন্য কোনো বিশৃংখলার কারণে। অথচ বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাস অতিরিক্ত সংক্রামক হওয়ার কারণে প্রতিটি দেশ নিজেদের লকডাউনে আবদ্ধ করে রেখেছে, যাতে করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
তবে শুধু আন্তর্জাতিক লকডাউনই নয়, বিভিন্ন দেশই অভ্যন্তরীণ লকডাউন ও কার্যকর করে রেখেছে। যেমন আমাদের দেশ গত কয়েক দফায় লকডাউন দিয়ে রেখেছে। মানুষ অসংখ্য সমস্যার সসম্মুখীন হচ্ছে লকডাউন এর কারণে। এমনকি এই বন্দী জীবন যেন অসহ্য হয়ে উঠেছে সকলের জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আজ বন্ধ হয়ে আছে দেড় বছর হতে চললো। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যেন ফুল ছাড়া বাগানের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। যেন কতদিন সেখানে হাসির পসরা বসে না। ছাত্রদের করা দেয়াল চিত্ররাও আজ যেন মূর্ছাগত।
সবসময় কোলাহল পূর্ণ জায়গা গুলো যেন অসীম নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে। কোনো কোলাহল নেই, নেই কোন প্রতিবাদ মিছিল কিংবা নিত্যদিনের মতো দেরিতে ক্লাস করতে যাওয়া ছেলেটার খাতা হাতে নিয়ে দৌড়ানোর দৃশ্য।
যে দু-একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের টানে ছুটে যাচ্ছে তাদের একাকী সময় কাটাতে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল গুলো ছাত্রহীনতায় যেন ভূতুরে রূপ ধারণ করেছে। চারপাশে ভয়ংকর এক নিস্তব্ধতা গ্রাস করে রাখছে সর্বদা।
যে রাস্তাগুলোতে পথচারী, সাইকেল আর রিক্সার ভীড় লেগে থাকতো সেগুলো এখন সুনশান ঘুমন্ত হয়ে আছে। তবে যত কষ্টকরই হোক, সকলেই সরকার ঘোষিত লকডাউন মেনে চলছে। নিরাপদ থাকার এবং রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেননা সকলের একমাত্র চাওয়া এখন সুস্থ-সুন্দর এক পৃথিবী। যেখানে শিশুদের সাথে সাথে আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলের মুখেই থাকবে প্রশান্তিকর এক চিলতে হাসি।
জীবন থমকে গেছে। একদিন আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে ইনশাআল্লাহ।
ইনশাআল্লাহ ভাই
সেই দিনের অপেক্ষায় ❤️