কাবুল

in r2cornell •  3 years ago 

চাঁদনি থেকে নয়সিকে দিয়ে একটা শার্ট কিনে নিয়েছিলুম। তখনকার দিনে বিচক্ষণ বাঙালির জন্য ইয়োরোপিয়ান থার্ড নামক একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ভারতের সর্বত্র আনাগোনা করত। হাওড়া স্টেশনে সেই থার্ডে উঠতে যেতেই এক ফিরিঙ্গি হেঁকে বলল, “এটা ইয়োরোপিয়ানদের জন্য।"

আমি গাঁক গাঁক করে বললুম, “ইয়োরোপিয়ান তো কেউ নেই। চল, তোমাতে আমাতে ফাঁকা গাড়িটা কাজে লাগাই। এক তুলনাত্মক ভাষাতত্ত্বের বইয়ে পড়েছিলুম, “বাংলা শব্দের অন্ত্যদেশে অনুস্বার যোগ করিলে সংস্কৃত হয়; ইংরেজি শব্দের প্রাগদেশে জোর দিয়া কথা বলিলে সায়েবি ইংরেজি হয়।” অর্থাৎ পয়লা সিলেবলে অ্যাকসেন্ট দেওয়া খারাপ রান্নায় লঙ্কা ঠেসে দেওয়ার মতো সব পাপ ঢাকা পড়ে যায়। সোজা বাংলায় এরই নাম গাঁক গাঁক করে ইংরেজি বলা। ফিরিঙ্গি তালতলার নেটিভ, কাজেই আমার ইংরেজি শুনে ভারি খুশি হয়ে জিনিসপত্র গোছাতে সাহায্য করল।

কিন্তু এদিকে আমার ভ্রমণের উৎসাহ ক্রমেই চুপসে আসছিল। এতদিন পাসপোর্ট জামাকাপড় যোগাড় করতে ব্যস্ত ছিলুম, অন্য কিছু ভাববার ফুরসত পাইনি। গাড়ি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম যে ভাবনা আমার মনে উদয় হলো সেটা অত্যন্ত কাপুরুষজনোচিত মনে হলো আমি একা।

ফিরিঙ্গিটি লোক ভালো। আমাকে গুম হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলল, “এত মনমরা হলে কেন? গোয়িং ফার?” দেখলুম, বিলিতি কায়দা জানে। “হোয়ার আর ইউ গোয়িং?” বলল না।

তা সে যাই হোক, সায়েবের সঙ্গে আলাপচারিতা আরম্ভ হলো। তাতে লাভও হলো। সন্ধ্যা হতে না হতেই সে প্রকাণ্ড এক চুবড়ি খুলে বলল, তার ‘ফিয়াসে’ নাকি উৎকৃষ্ট ডিনার তৈরি করে সঙ্গে দিয়েছে এবং তাতে নাকি একটা পুরাদস্তুর পল্টন পোষা যায়। আমি আপত্তি জানিয়ে বললুম যে আমিও কিছু কিছু সঙ্গে এনেছি, তবে সে নিতান্ত নেটিভ বস্তু, হয়ত বড্ড বেশি ঝাল। খানিকক্ষণ তর্কাতর্কির পর স্থির হলো, সব কিছু মিলিয়ে দিয়ে ব্রাদারলি ডিভিশন করে আলাকার্ত ভোজন, যার যা খুশি খাবে।

সায়ের যেমন যেমন তার সব খাবার বের করতে লাগল, আমার চোখ দুটো সঙ্গে সঙ্গে জমে যেতে লাগল। সেই কাবাব, সেই ঢাকাই পরোটা, মুরগি মুসল্লম, আলু-গোস্ত। আমিও তাই নিয়ে এসেছি জাকারিয়া স্ট্রিট থেকে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!