সূর্যাস্ত হলো পৃথিবীর আবর্তনের ফলে দিগন্তের নীচে সূর্যের দৈনিক অন্তর্ধান। এটি এমন মুহূর্ত যখন সূর্যের উপরের অংশ দিগন্তের নীচে অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রতিটি সূর্যাস্ত নতুন ভোরের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে। প্রতিটি সূর্যাস্তও একটি সূর্যোদয়। আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি এটি তার উপর নির্ভর করে।
গোধূলি লগ্নে সূর্যের মনে বুঝি ঘটা করে অভিমান জড়ো হয়। তাই তো পশ্চিমাকাশে অল্প অল্প করে ডুবে যেতে থাকে। গোধূলির আবিরে রাঙা অস্তয়মান লাল সূর্য। দিনের শেষে থেমে আসে চারপাশের কর্মকোলাহল। প্রকৃতিতে নেমে আসে অন্যরকম এক প্রশান্তি। পশু- পাখি নীড়ে ফিরে যেতে থাকে।
সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর শুরু হয় শ্রান্ত মানুষের ঘরে ফেরার পালা। চরাচরে সর্বত্রই বিরাজ করে এক নৈসর্গিক নীরবতা। সূর্যের রক্তিম আলোর ছটায় প্রকৃতি যেন অন্যরকম রঙে নিজেকে সাজায়। সূর্যাস্ত আমাদের মনের উপর বেশ প্রভাব ফেলে - মানসিক চাপ কমায়। ইহা অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। ইহা মনে ধর্মীয় অনুভূতি ও ভাবাগের সৃষ্টি করে যা সৃজনশীল, নিরাময় ও শক্তি পুনঃ জাগরণে বা সৃষ্টিতে কাজ করে। ইহা মনে পরিসমাপ্তির ভাব আনে। ইহার আকর্ষণীয় রং আমাদের অভিভূত করে। পৃথিবী যতদিন থাকবে, সূর্যাস্তও থাকবে। ইহা মোহনীয় ও মায়াময়। ইহা আমাদের চেতন ও অবচেতন মনের মধ্যে যেন সেতু। প্রত্যেক সূর্যাস্ত আমাদের কাছে এক সুন্দর ও নুতন দিনের ডালা নিয়ে আসে। সূর্যাস্তের প্রশান্ত ভাব আমাদেরকে স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে গভীরভাবে উপলব্ধি করায়।
সূর্য অস্ত গেলে তবেই তো আমরা জোনাকী পোকার ঝিকমিক দেখতে পাই। এই সূর্য অস্ত গিয়ে গোটা দুনিয়াকে অন্ধকার করে দেয় বলেই তো আমরা আলোর কদর বুঝি। আমরা একটি সূর্যাস্তকে একটি নতুন ভোরে পরিবর্তন করতে পারি। সূর্য্যাস্ত দেখায় যে অতীত যতই সুন্দর হোক না কেন তা ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই বর্তমানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সূর্যাস্তের রঙিন আলোয় জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে আবার রাঙিয়ে তুলতে হবে নিজেকে । সূৰ্য্যাস্ত প্রমাণ দেয় যে যাই ঘটুক না কেন, প্রতিদিন সুন্দরভাবে শেষ হতে পারে। সূর্য্যাস্ত উপভোগ করতে কেবল একটি সুন্দর হৃদয় প্রয়োজন। সূর্যাস্ত আমাদের স্বপ্ন গুলিকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে।