ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছিলেন????

in motivation •  3 years ago 

images (238).jpeg
Photo Source

প্রশ্নঃ (১)
ওর সাথে ফিজিকাল রিলেশন হয়ে গেছে? খুব খারাপ লাগছে? এখন কী করণীয়?

উত্তরঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ জিনায় লিপ্ত থাকে, ততক্ষণ সে মুমিন থাকে না।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নংঃ ৫৭)।

তাই যখন কেউ জিনায় লিপ্ত থাকে, সে আসলে মুমিনই ছিল না।
তাকে আন্তরিকভাবে তওবা করতে হবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে গুনাহ থেকে তওবা করে সে এমন হয়ে যায়, যেন সে গুনাহটি করেইনি।”
(ইবনে মাজাহ, হাদিস নংঃ ৪২৫০)

তওবার শর্ত তিনটিঃ
১। সেই গুনাহ পুরোপুরি ছেড়ে দেয়া।
২। গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
৩। আবার গুনাহে লিপ্ত না হবার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।

তওবা যেন কবুল হয় সে জন্য বেশি বেশি গোপনে দান করা উচিত, গোপনে ইবাদত করা উচিত।
এগুলো আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ মিটিয়ে দেয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে প্রাণকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না।
আর যারা ব্যভিচার করে না।
আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে।
কিয়ামাত দিবসে তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়।
তবে-
তারা নয় যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে, আর সৎ কাজ করবে।
আল্লাহ এদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তিত করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।
যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎ কাজ করে সে সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়।”
[সূরা ফুরকান ৬৮-৭১]

প্রশ্নঃ (২)
আমার কি এখন ওকেই বিয়ে করতে হবে? বিয়ে করলে কি আমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে?

উত্তরঃ
যার সাথে জিনায় লিপ্ত হয়েছে তাকেই বিয়ে করতে হবে এমন যেমন কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই, একইসাথে তাকে বিয়ে করলে যে গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, এমন দলীলও নেই।
গুনাহ মাফের জন্য আন্তরিক তওবাই যথেষ্ট।

প্রশ্নঃ (৩)
আমি জিনা করে ভুল করেছি।
এখন বিয়ে করে ওকে পেতে চাই।
করণীয় কী?

উত্তরঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যে নিজে ব্যভিচারী সে তো কেবল ব্যভিচারিণী আর মুশরিক নারীকেই বিয়ে করে।
আর যে ব্যভিচারিণী সে ব্যভিচারী অথবা মুশরিককে ছাড়া বিয়ে করবে না।
আর মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে।”
[সূরা নূর ০৩]

প্রথমে আয়াতটা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগতে পারে।
কথাটার মানে কী?
ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী আর মুশরিকক নারীকেই বিয়ে করে?
শায়খ সাদী (রহঃ) তার তাফসীরে সুন্দর করে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
যে জানা সত্ত্বেও কোন তওবা না করা ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করতে চায় তবে তার ব্যাপারে কেবল দুটি কথাই খাটে-

১। হয় সে নিজে ব্যভিচারী তাই আরেকজন ব্যভিচারিণী বিয়ে করতে তার সমস্যা হচ্ছে না। রুচিতে বাধছে না।
২। কিংবা সে হয়তো ব্যভিচারী না।
কিন্তু সে আসলে হালাল-হারামের তোয়াক্কা করে না।
আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) যে বিধান দিয়েছেন তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই।
যার অর্থ, সে অবশ্যই একজন মুশরিক। [তাফসীরে সাদি, ১/৫৬১]

এটা কোনো ব্যভিচারী পুরুষের ব্যাপারে যেমন খাটে, ব্যভিচারিণী নারীর ব্যাপারেও খাটে।
তাই যদি নিজে তওবা করার সাথে সাথে যদি অপরজনও তওবা না করে, তবে বিয়ে বৈধ হবে না।
তবে দুইজন অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে চাইলে বিয়ে করতে পারে।
সেক্ষেত্রে লক্ষ্য করতে হবে, উক্ত জিনাকারী নারী গর্ভবতী কিনা!
মাসিকের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
গর্ভবতী হলে সন্তান জন্মদান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আর গর্ভবতী না হলে বিয়ে করা যাবে।

প্রশ্নঃ (৪)
আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম।
বিয়ের পর অতীতে করা ব্যভিচারের জন্য অনুতপ্ত। এখন কী করণীয়?

উত্তরঃ
আলেমগণ বলেন, যদি কোনো ব্যভিচারিণী ব্যভিচার করেনি এমন পুরুষকে বিয়ে করে আর বিয়ের পর নিজের ভুল বুঝতে পারে, তবে উত্তম হচ্ছে তাদের আবার বিয়ের ব্যবস্থা করানো।
তবে নতুনভাবে বিয়ে পড়ানো হলে, স্বামী ব্যভিচারের কথা জেনে ডিভোর্স দিতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে গোপন রাখা যাবে। আশা করা যায়, আল্লাহ এ বিয়েকে বৈধতা দিবেন এবং তাকে মাফ করে দেবেন।

প্রশ্নঃ (৫)
জিনায় লিপ্ত হয়ে গর্ভবতী হয়ে গিয়েছি। এখন যদি এবোর্শন করাই, সেটা কি হালাল হবে?

উত্তরঃ
না, হবে না।
বরং, দুটো গুনাহ তার ওপর বর্তাবে। প্রথমটা ব্যভিচারের।
দ্বিতীয়টা, ভ্রুণ হত্যার।
যদিও কোনো কোনো আলেম, ভ্রুণের বয়স ৪০ দিন পার না হলে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এবোর্শনের অনুমতি দিয়েছেন।
তবে সেটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
অবৈধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে না।
কিছু কিছু ব্যাপার বৈধ ক্ষেত্রে হালাল হতে পারে, কিন্তু অবৈধ ক্ষেত্রে সেটা হারাম হয়ে যায়।
যেমনঃ মুসাফির চাইলে পরে রোযা কাযা করে নিতে পারে।
কিন্তু সেই মুসাফির যদি মদ কিংবা অন্য কোনো হারাম কিছু করার জন্য মুসাফির হয়, তবে তার সিয়াম কাযা করার অনুমতি নেই।
তাই তাকে উক্ত সন্তান জন্ম দিতে হবে। আর সে সন্তানের কোনো পিতার পরিচয় থাকবে না।
তার দায়িত্ব থাকবে সরকার প্রধানের। যেসব দেশে ইসলামী সরকার প্রধান নেই, সেসব দেশের ক্ষেত্রে কী করণীয় তা সেসব দেশের আলেমদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।

প্রশ্নঃ (৬)
আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম কিংবা অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
এটা কি বিয়ের পর সঙ্গীকে জানাতেই হবে?

উত্তরঃ
না, জানানোর প্রয়োজন নেই।
উত্তম হচ্ছে আল্লাহ যে গুনাহ গোপন রেখেছেন, সে গুনাহ গোপনই রাখার।
কিন্তু যদি আপনার হবু স্বামী আগে থেকেই এই কন্ডিশন দিয়ে রাখেন যে, তিনি কোনো ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক না, সেক্ষেত্রে আপনার তাকে বিয়ে করা উচিত হবে না।
কারণ, এক সময় তিনি ঠিকই জেনে যাবেন।
আপনার উচিত হবে এমন কাউকে বিয়ে করা যিনি আপনার অতীতের চেয়ে বর্তমানকে বেশি গুরুত্ব দিবেন।
মাঝে মাঝে আঁধার অতীতের মানুষেরাই সোনালী ভবিষ্যতের সূচনা করে।

প্রশ্নঃ (৭)
আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম। ছেলেটা ভালো ছিল না।
তাই বাসার চাপে আরেক জায়গায় বিয়ে করেছি।
আমার বিয়ে কি বৈধ?

উত্তরঃ
যদি আন্তরিকভাবে তওবা করে বিয়ে করে থাকেন, তবে বিয়ে বৈধ।
আর যদি তওবা না করেন, তবে যার সাথে জিনায় লিপ্ত ছিলেন, তাকে বিয়ে করাও বৈধ না।

প্রশ্নঃ (৮)
বিয়ের পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি।
সে ব্যভিচারের দরুণ গর্ভবতী।
এখন অনুতপ্ত। কী করণীয়?

উত্তরঃ
বিয়ের পর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া খুবই গর্হিত কাজ।
আমাদের দেশে এ জঘন্য গুনাহের কাজকে আদর করে ‘পরকীয়া’ বলা হয়।
ইসলামে বিয়ের আগে জিনা করলে তার শাস্তি বেত্রাঘাত।
কিন্তু বিয়ের পরে জিনা করার একটাই শাস্তি।
পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড।
কিয়ামতে আল্লাহ এ ধরনের লোকদের ভয়াবহ শাস্তি দিবেন।
তবে উক্ত নারী ভুল বুঝতে পারলে তওবা করবে।
সেক্ষেত্রে, তার স্বামীকে জানানোর প্রয়োজন নেই।
উক্ত সন্তান তার স্বামীর পরিচয় বহন করবে।

প্রশ্নঃ (৯)
বিবাহিত মেয়ের সাথে ব্যভিচার করেছি। তারপর তাকে ডিভোর্স করিয়ে বিয়ে করেছি।
এখন আমরা অনুতপ্ত।
আমাদের বিয়ে কী বৈধ? কী করণীয়?

উত্তরঃ
এরা তিনটা খারাপ কাজ করেছে। ব্যভিচার করেছে।
বিবাহিত অবস্থায় ব্যভিচার করেছে। আরেকজনের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করেছে।
রাসূল (সাঃ) তার হাদিসের মাধ্যমে জানিয়েছেন, যে আরেকজনের স্ত্রীর মাথা বিগড়ে দেয়, সে রাসূলের (সাঃ) দলভুক্ত না।
এটা এতোই গর্হিত কাজ যে, মালেকী মাজহাবের কিছু আলেম বলেছেন, আজীবনের জন্য এদের বিয়ে অবৈধ।
তবে অধিকাংশ আলেমদের মত হচ্ছে, এরা যদি এরপরেও আন্তরিকভাবে তওবা করে তবে আল্লাহ পরম দয়াময়।

প্রাসঙ্গিক বিষয়ঃ

উত্তরগুলো কখনো ছেলে আবার কখনো মেয়েকে উদ্দেশ্য করে দেয়া হয়েছে।
তবে ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই একই বিধান।
উপরের উত্তরগুলোর কারণে, কারো যেন এমন না মনে হয়, ব্যভিচার খুব সহজ একটি গুনাহ।
অন্যান্য গুনাহের মত তওবা করে নিলেই হবে, এখন জিনা করতে থাকি।
এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে চললে, তওবা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
আর তওবা করলেও দেখা যাবে সে তওবা আন্তরিক হবে না।
এমন হতে পারে, শুধু এ গুনাহের কারণে মৃত্যুর সময় ঈমানহারা হয়ে মরতে হচ্ছে।
আর আখিরাতের আযাব তো বহুগুণ বেশি।

“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন, যারা ভুল করে খারাপ কাজ করে আর সাথে সাথেই তওবা করে।
এদেরকেই আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
আর এমন লোকদের ক্ষমা নেই, যারা খারাপ কাজ করতেই থাকে, আর যখন মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, ‘আমি এখন তওবা করলাম।’
আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়।
আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি।”
[সূরা নিসা ৭-১৮]

হে আল্লাহ!
আমাদের সকলকে হেফাজত করুন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!