প্যারাসিটামল কিভাবে কাজ করে?

in medicine •  3 years ago 

প্যারাসিটামল হল প্যারা-অ্যাসিটোঅ্যামিনো-ফেনলের সংক্ষিপ্ত রূপ। শুরুর দিকে ফেনল হতে প্যারানাইট্রোফেনল প্রস্তুতি, অতঃপর তা থেকে প্যারাসিটামল, এ বিক্রিয়া পথ অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হলেও জনপ্রিয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি হোসেস্ট চেলনিজ কোম্পানি বিকল্প পথ (কম ধাপবিশিষ্ট) আবিষ্কার করে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ফেনল ব্যবহৃত হয়।
জ্বর, মাথাব্যাথা বা শরীরের অন্যত্র আঘাতজনিত কারণে ব্যাথা পেলে প্রোস্টাগ্লানডিন নামক লিপিড হরমোন নিঃসৃত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রোস্টাগ্লানডিন হরমোনের বিশেষত্ব, এটা কোনো নির্দিষ্ট গ্রন্থি হতে নিঃসৃত হয় না। তা মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে গিয়ে বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে জ্বর সৃষ্টি করে। আবার শরীরের কোনো কোষ অ্যান্টিজেন(ক্ষতিকর প্রোটিন বা অ্যালার্জেন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি) দ্বারা আক্রান্ত হলে, ম্যাক্রোফাজ কর্তৃক পাইরোজেন নামক পলিপেপটাইড তৈরি হয়। যা রক্তে ছড়িয়ে পড়ে ও প্রোস্টাগ্লানডিন সংশ্লেষণকে উদ্দীপিত করে। প্রোস্টাগ্লানডিন যে কারণেই সৃষ্টি হোক না কেন, তা রক্তে ছড়িয়ে পড়ে শেষমেশ অগ্রমস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে পৌঁছালে সেখানের কোষগুলোর ঝিল্লিতে রিসেপ্টর থাকে, তা দ্বারা প্রোস্টাগ্লানডিন গৃহীত হয়। বাদবাকি হরমোন যেরকম সমন্বয়ের কাজ করে, এও তাই করল। সংকেত কাঙ্ক্ষিত কোষে পৌঁছে দিল। হাইপোথ্যালামাস বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ করে (এটাও প্রোস্টাগ্লানডিন তৈরির মতোই জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া)। তাই দেহতাপ বেড়ে যায়, যাকে আমরা জ্বর বলি। জ্বর মূলত দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা স্তরের সর্বশেষ ধাপ। জ্বর আমাদের প্রতিরক্ষা তন্ত্রের কোষসমূহের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ফ্যাগোসাইটিক
কোষসমূহ জীবাণু ভক্ষণ আরো ভালোভাবে করতে পারে, সহজাত মারণ কোষ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকারক টিউমার কোষ অপেক্ষাকৃত কার্যকরভাবে ধ্বংস করে, B-cell এর অ্যান্টিবডি ক্ষরণ বাড়ে, T-cell তুলনামূলক দ্রুত জীবাণু ধ্বংস করতে পারে ইত্যাদি।
কিন্তু অত্যধিক জ্বর সমস্যার কারণ, এককালে জ্বরে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতো মনে আছে আশা করি। মূলত এ ধরনের জ্বরের মোকাবেলা করার জন্যই প্যারাসিটামল। প্যারাসিটামল পেটে গিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র কর্তৃক রক্তে পুষ্টি উপাদান স্থানান্তরের সময় দ্রবীভূত হয়ে যাওয়া প্যারাসিটামল রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। প্যারাসিটামল অণু ব্যাথা, ক্ষত বা অন্য কোনো ত্রুটি আছে সে স্থানে ও হাইপোথ্যালামাসে ক্রিয়াশীল হয়। প্রোস্টাগ্লানডিনের সাথে বিক্রিয়া করে তা নিষ্ক্রিয় করে ও জ্বর, ব্যাথা দূর হয়।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!