ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আনটারকটিকা সব ভাই গলা জড়াজড়ি করে বসে ছিল

in knowledge •  3 years ago 

প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে মানে সেই ডাইনোসরদের রাজত্ব কালে এখনকার ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আনটারকটিকা ইত্যাদি সব ভাই ভাই বলে গলা জড়াজড়ি করে বসে ছিল!
লিখেছেন -দীপন ভট্টাচার্য্য

১৫৯৬ সালে কার্টোগ্রাফার আব্রাহাম অর্টিলিয়াস( cartographer Abraham Ortelius) আচমকাই এক অদ্ভুত জিনিস আবিস্কার করে ফেললেন। শোনা যায় তিনি পৃথিবীর মহাদেশগুলোর আউটলাইন বরাবর কেটে একটা অন্য জায়গায় পেস্ট করছিলেন। কাটা মাপগুলো পড়ে আছে, একে অন্যের সঙ্গে লাগা, আর অবাক কাণ্ড দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব দিক বা কোস্ট লাইন আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম দিকের সমুদ্রতট বরাবর একদম খাঁজে খাঁজে মিলে যাচ্ছে। যেন বাচ্চাদের zigsaw খেলার নকশা। ব্যাস!! এই শুরু। তিনি চেষ্টা করলেন অন্য মহাদেশগুলোকেও মেলাতে আর আশ্চর্যজনক ভাবে এগুলো অনেকটাই মিলে গেল।

তাঁর চিন্তাভাবনা দিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করলেন যে এগুলো এককালে এক ছিল আর পরে ভুমিকম্প আর বন্যাতে আলাদা হয়ে গেছে। তিনি ভাবতেও পারেন নি যে এক অসাধারন থিওরির সুত্রপাত তিনি করে দিলেন যদিও এটা ছিল সেই সময়ের পক্ষে অনেক এগিয়ে থাকা ভাবনা। কেটে গেল কয়েক শতাব্দী কিন্তু ভাবনাটা আর এগোল না। ১৯১২ সালে এসে আলফ্রেড ওয়েগনার( Alfred Wegner) বিষয়টাকে একটা মতবাদ হিসেবে নিয়ে আসেন। তাকেই এই টেকটনিক তত্ত্বের ( Tectonic Theory) জনক বলা যায়।

প্রায় ৪৫৫ কোটি বছর আগে একটা আগুনের গোলার মত পৃথিবীতে সব কিছু ছিল হয় গ্যাস নয়ত তরল। ধীরে ধীরে পৃথিবী ঠাণ্ডা হতে লাগলো আর তার ওপরে দুধের সরের মত ভূপৃষ্ঠ তৈরি হল। প্রথমে একটাই মহাদেশ ছিল তারপর আরও অনেক মহাদেশ এসেছে। পৃথিবী কিন্তু এখনও পুরোপুরি ঠাণ্ডা হয় নি। মাটির নিচে থাকা এই গলন্ত ম্যাগমা বেরিয়ে মাঝেমধ্যেই। আগ্নেয়াগিরির লাভাও তাই। হাঁ যা বলছিলাম, এই গলন্ত ম্যাগমার ওপর ভূপৃষ্ঠ এখনো ভাসছে অনেকগুলো প্লেট এর মত। ঠোকাঠুকি লাগে, তখন দুলে ওঠে পৃথিবী।আগুন বেরিয়ে আসে আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে, নতুন ডাঙ্গা জাগে, কিছু ডুবে যায়, পাহাড়-পর্বত গজিয়ে ওঠে, সমুদ্র বুজে যায়। মোটকথা কাজ এখনো চলছে।
ভূপৃষ্ঠ ভাসছেন আর ভাঙ্গছেন। যুগে যুগে বদলাতে থাকল পৃথিবীর মানচিত্র। এককালে ছিল গন্ডোয়ানা ল্যান্ড ( Gondwana Land )বলে এক আজব মহাদেশ। প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে মানে সেই ডাইনোসরদের রাজত্ব কালে। তখন এখনকার ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আনটারকটিকা ইত্যাদি সব ভাই ভাই বলে গলা জড়াজড়ি করে বসে ছিল। এর নামকরন ও আমাদের কাছে খুব গুরত্বপূর্ণ। মধ্য ভারতের গন্ড( Gond) আদিবাসীদের নামে রাখা হয় এই মহাদেশের নাম।

FB_IMG_1642995291113~2.jpg

এবার আসি পাথুরে প্রমান এ। সেই সময়ের পাথরে আটকা পরে আছে তখনকার জীব বৈচিত্র্য ফসিল হয়ে। আজ আমার সংগ্রহ থেকে দেখাবো সেই ৩০ কোটি বছর আগেকার গন্ডোয়ানা মহাদেশের দুটো গাছের পাতার ফসিল। একটা পাথরের পৃষ্ঠে বন্দী হয়ে আছে দুটো আলাদা আলাদা গাছের পাতা।গ্লোসোপ্টেরিস ও গঙ্গামোপ্টেরিস( Glossopteris, Gangamopteris ) আমি ফসিলটার ছবি দিয়েছি আর দুটো পাতা আলাদা করে বোঝার জন্যে আউট লাইন দিয়ে আরেকটা ছবি দিয়েছি। যেটার মধ্য শিরা আছে সেটা গ্লোসোপ্টেরিস। আজ আলাদা হয়ে যাওয়া আগের সেই গন্ডোয়ানা মহাদেশের অংশ যেমন দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আনটারকটিকা তেও পাওয়া যায় এই বিলুপ্ত গাছেদের ফসিল।

লিখেছেন -দীপন ভট্টাচার্য্য

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!