আঁকা হতো। পট্ট বা কাপড় শব্দ থেকে পট শব্দের উৎপত্তি। জড়ানো পট ও চৌকা পট—এ দুই ধরনের আঁকা হতো। আর এর শিল্পীরা পটুয়া নামে পরিচিত। জড়ানো পট বেশ বড় ও লম্বা আকারের হয়ে থাকে। একটা পটে পর পর লম্বাভাবে সাজানো থাকে অনেকগুলো টুকরো ছবি। এ ছবিগুলো কোনো লোককাহিনী বা ধর্মীয় কাহিনীর চিত্ররূপ। বুদ্ধের জীবনী, জাতকের গল্প, কৃষ্ণলীলা, রামায়ণ, বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের কাহিনী, মহররমের কাহিনী, সোনাই-মাধব এরকম বহু বিষয়ের উপর পট আঁকা হতো। পরবর্তীকালে লৌকিক পীর গাজীর জীবনের গল্প, কালুগাজী-চম্পাবতীর গল্প নিয়েও পট আঁকা হয়েছে। এগুলো গাজীর পট নামে খ্যাত।
এই পটগুলোর দু প্রান্তে দুটি কাঠি লাগিয়ে তার সাথে জড়িয়ে রাখা হতো। কাপড়ের ওপর কাগজ লাগিয়ে তার ওপর চিত্র আঁকা হতো। তাছাড়া কাপড়ের ওপর আঠালো রং দিয়েও চিত্র আঁকা হতো। গ্রামে কিছু লোক এই পট নিয়ে ঘুরে ঘুরে পটের গল্প সুন্দর সুর করে বর্ণনা করেন। ছেলে-বুড়ো ও মেয়েরা সবাই ভিড় করে এসব পটের গল্প-কাহিনী শোনেন এবং খুব আনন্দ পান।
চৌক পট ছোট আকারের কাগজের ওপর আঁকা
চিত্র। সাধারণত ১ ফুট লম্বা ও ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। চওড়া হয়। এগুলোর মধ্যে কালীঘাটের পট ছিল বিখ্যাত। কালীঘাটের পটের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য ও শিল্পমান গাজীর পট ছিল অসাধারণ। এগুলোতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের জীবন-যাপনের ভালো-মন্দ দিক, সামাজিক আচার-অনাচার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদির চিত্রায়ন করা হতো। মৃত ব্যক্তির স্বর্গপ্রাপ্তির জন্য চক্ষুদান পট নামে একরকম পট আঁকতেন পটুয়ারা। মৃত ব্যক্তির চক্ষুবিহীন ছবি এঁকে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাতে চোখ এঁকে দেয়া হতো। যাতে করে সে স্বর্গের পথ দেখতে পায়। পাঠ : ৩
নকশিকাঁথা নকশিকাঁথা বাংলাদেশের লোকশিল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নিদর্শন। শীতকালে গায়ে দেয়ার জন্য কাপড় কয়েক পরত একসঙ্গে সাজিয়ে কাঁথা সেলাই করা হয়। এর মধ্যে কিছু কাঁথা তৈরি করা হয় নানা রঙের সুতায়, নানারকম নকশা করে। অনেক নকশা দিয়ে যে কাঁথা সেলাই হয় সেটাই হলো নকশিকাঁথা। গাঁয়ের মেয়েরা কাজের অবসরে দিনের পর দিন খেটে সুঁই-সুতায় রং-বেরঙের ছবি ও নকশা
নকশিকাঁথাফুটিয়ে তোলে। এসব ছবিতে থাকে অনেক গল্প অনেক কাহিনী। গাঁয়ের বধূ তার নিজের জীবনের সুখ-দুঃখের কথা সুঁই-সুতার ছবির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলে। এক-একটি কাঁথা বানাতে এক বছর, কখনো কখনো দুই বছর সময় পেরিয়ে যায়। এক-একটি কাথার শিল্প নৈপুণ্য দেখে বিস্মিত হতে হয়। কাঁথাতে যেসব নকশা থাকে তা হলো- ফুল, পাতা, গাছ-পালা, পদ্ম, চাঁদ, তারা, পাখি, মাছ, নানারকম জীবজন্তু এমনকি ঘর-বাড়ি ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু কাঁথাতে রেখা, বৃত্ত, গোলাকার ঘর, তিনকোনা ঘর এসব আদল বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা হয়। একই আদল বা নকশার বারবার ব্যবহারকে 'মোটিফ' বলে। ব্যবহারিক দিক থেকে নকশিকাঁথাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন সুজনিপেড়ে, লেপকাঁথা, চাদর কাঁথা, জায়নামাজ, আসন কাঁথা, পালকির কাঁথা, রুমাল কাঁথা ইত্যাদি। বাংলাদেশে নকশিকাঁথা সেলাইয়ের দুটি মূলধারা বা রীতি আছে। তার একটি হলো যশোর রীতি, অন্যটি
রাজশাহী রীতি।
তাছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর প্রভৃতি অঞ্চলেও নকশিকাঁথার উল্লেখযোগ্য ধারা আছে। যশোর অঞ্চলের নকশিকাঁথা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানে অবস্থিত। এ অঞ্চলের কাঁথার ফোঁড় অত্যন্ত সূক্ষ্ম, রং রুচিসম্মত। গ্রামীণ মেলায় এই কাঁথা কোনোদিন বিক্রি হয় না। নিজেদের উদ্দেশ্যে এই কাঁথা তৈরি হয়। তবে অপরের ফরমাসে পারিশ্রমিকের বিনিময়েও নকশিকাঁথা তৈরি করা হয়। আজকাল শহরের কারুশিল্পের দোকানে নকশিকাঁথা বেচাকেনা হতে দেখা যায়। এমনকি বিদেশের বাজারেও আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের বিক্রয় হয়ে থাকে।
পোড়ামাটির ফলকচিত্র বা টেরাকোটা পোড়ামাটির ফলক বাংলাদেশের আদি ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প এবং খুবই বিখ্যাত। মধ্যযুগে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনাতে, বিশেষ করে মন্দির, মসজিদ ইত্যাদির দেয়ালে এ ফলকচিত্র ব্যবহার করা হতো। পোড়ামাটির ফলকচিত্র বা Terracotta হচ্ছে মাটির পাটাতনের বা ফলকের সমান জমিনের উপর ছবি বা নকশা উঁচু উঁচু হয়ে থাকে এমন রিলিফ ওয়ার্ক। এটা বানানোর জন্য প্রথমে কাঁচা মাটি দিয়ে ফলকগুলো তৈরি করে তারপর পুড়িয়ে নেয়া হয়। তাই এগুলোকে বলে পোড়ামাটির ফলক। বগুড়ার মহাস্থানগড়ে তথা প্রাচীন পুণ্ড্র
(source)[https://images.app.goo.gl/9BquRdcUnndR24gz9]
নগরীর প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম ফলকচিত্র পাওয়া গেছে। মহাস্থানগড়ের এবং দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের ফলকচিত্রের বিষয়বস্তু নর-নারী ও দেব-দেবী। অন্যদিকে পাহাড়পুর ও কুমিল্লার ময়নামতির ফলকগুলোতে তৎকালীন সমাজ ও নিসর্গের ছবি পাওয়া যায়। বাঘা মসজিদের বা টাঙ্গাইলের আদিনা মসজিদের ফলকচিত্রের
Also, keep in touch with Blurtconnect-ng family on Telegram and Whatsapp