ছবির উৎস: Unsplash
বেশ, পরবর্তী নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত কোন যৌথ প্রযোজনায় ছবি হতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তে পৌছাতে দেশের রূপালী পর্দার টিনের মানুষগুলোর পর্দার বাইরে রাজপথেই বেশি থাকতে দেখা গেছে। এই অনশন এবং হামকি-ধামকি কালিন সময় তারা যে তামাশার আবির্ভাব করেছে তা নিতান্তই হাস্যকর।
প্রাচীনকালে মানুষের রঙ্গতামাশার খোঁড়াক ছিল ভাঁড় পরিবেশিত কৌতুক অভিনয়। এক ভাঁড় আর এক ভাঁড়কে অপমানজনক আচরণ ও বার্তা পৌঁছে দর্শকের হাসির জোগান দিত। বর্তমানে দেশে যা হচ্ছে তা সেই ভাঁড় বা সং এর ন্যায় কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে একটা নির্লজ্জ হাসির পরিবেশ তৈরি করছে আধুনিক (আমি বিশ্বাস করি না) অভিনেতা-অভিনেত্রি তথা তাদের সমর্থিত সংগঠনগুলো।
যাকগে এইটুকু ভেবেছিলাম জুলাইয়ের ১০ তারিখে যখন এই আলোচনা ছিল তুঙ্গে। তারপর অনেক সময় পার হয়েছে, অনেক কিছু হয়েছে। এমনকি যাকে কেন্দ্র করে এত কিছু হয়েছে সে আর একবার বাস্তবেও নিজেকে কিং খান হিসাবে প্রমানিত করে নিন্দুকের মুখে চুন-কালি লেপটে দিয়েছে। স্বয়ং মন্ত্রি সাহেবকে নিয়ে নিজের মুক্তি পাওয়া বিতর্কিত সিনেমা দিখেতে গিয়েও শান্তি দেননি নিন্দুকেরে, আবার মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হাত থেকে শ্রেষ্ঠ চলচিত্র অভিনেতা হিসেবেও পদক নিয়ে ছেড়েছে। নে বাবা ফের লাগতে আসলে দেখিশ, "মারবে এখানে লাশ পরবে বুঝে নিশ কোথায়"।
একজন ভোক্তা হিসাবে আমি সামর্থ্যবান হলে ভাল জিনিসটাই গ্রহন করতে চাইব। সেখেত্রে দেশি চলচিত্র শিল্পের উন্নয়ন না হলে অবশ্যই ভারতীও তথা বিদেশী চলচিত্র বাজার দখল করে নিবে, এটাই স্বাভাবিক। এখন এই বাজারকে ঠেকাতে যদি বেকার তথা সৃজনশীল কাজে অপারগ ব্যক্তিরা এক দেশিও সংস্কৃতির দোহাই বা জাতিও ঐতিহ্য কে পুঁজি করে বারবার মানুষকে তাদের বস্তাপচা কাজ গ্রহনে উৎসাহিত করতে চায় তাহলে সেটা হবে অদূরদর্শী ভাবনা। তাই বলে যে দেশে ভাল কাজ হচ্ছে না তা কিন্তু না, তবে ভাল কাজের সংখ্যা বা পরিমান কম। যা কিনা চাহিদার সাথে জোগানের বিস্তর ফারাক রেখে চলেছে। ফ্রী-মার্কেট মানে মুক্ত বাজার এর যুগে এই অবস্থান খুবিই নাজুক।
কেন চলচিত্র শিল্পের এই বেহাল দশা, আসুন তার কিছু কারন নিরূপণ করা যাক।
১। অদক্ষ্য কলাকুশলইঃ চলচিত্রের চাকা বা চালিকা হচ্ছে কলাকুশলী। সেমতে একজন দক্ষ্য অভিনেতা বা অভিনেত্রীই পারে সিনেমাকে প্রানবন্ত করতে। বড় বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোন চরিত্রকেই ছোট করে দেখা হয় না। সেজন্য প্রত্যেক চরিত্রর জন্য কলাকুশলীদের অডিশন পাশ করে তবেই আসতে হয় বড় পর্দায়। অপরদিকে দেশিও সিনেমায় কুশলী হিসাবে নবাগত "হিরো আলমের" বড় পর্দায় আনুষ্ঠানিক পদার্পণ হতে যাচ্ছে "মার ছক্কা" পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচিত্রের মাধ্যমে। ফেসবুকের কল্যাণে এই ব্যক্তির সম্পর্কে কমবেশি সবাই অকিবহাল। এমন কোন অথর্ব ট্রল নেই যা কিনা উনাকে নিয়ে তৈরি হয় নাই। তিনি যখন একজন চলচিত্রের শিল্পী তখন স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে ঐ সিনেমার দিকে ঝুকবেন না।
২। প্রযুক্তি বা কারিগরি দক্ষতাঃ কারিগরি দক্ষতার অনেক ঘাটতি রয়েছে। যেখানে ডিজিটাল সিনেমা নির্মাণের জন্য একাডেমিক শিক্ষা নিয়ে টেকনিশিয়ানরা কাজ করছেন বিদেশী সিনেমাগুলোতে সেখানে দেশি ইন্ডাস্ট্রিতে মান্ধাত্তার আমলের প্রযুক্তি ব্যাবহার করে অদক্ষ জনবল নিয়োগ হচ্ছে। যার দরুন বাংলা সিনেমাতে এখনো আলিফ-লায়লার মত করে আগুনের দৃশ্য দেখান হয়।
৩। ভাল গল্প এবং স্ক্রিপ্টঃ ভাল গল্পের পরিমান নেহায়ত হাতে গোনা। সাধারনত কম বাজেটের সিনেমা ভাল গল্প কেন্দ্রিক হয়। যেগুলো গল্পের কারনেই হয়ে ওঠে বেবস্যা সফল। বাণিজ্যিক চলচিত্র বা বড় বাজেটের সিনেমায় ঠিক উল্টো, মটামুটি একি ধারার গল্প বারে বারে বিভিন্ন ভাবে দর্শকদের গেলানোর চেষ্টা। অথচ বাংলাদেশে ভাল লেখকের অভাব নাই, অভাবটা শুধু ভাল পারিশ্রমিক দেবার ইচ্ছা না হয় হেয়ালিপনা। বাণিজ্যিক সিনেমার রচয়িতাকে সাধারন দর্শক খুব কমই চেনেন বা অথবা জিবনে নাম শুনেছেন।
আর স্ক্রিপ্টও তৈরি হয় নিন্মমানের। সব থেকে বড় উদাহরণ "সুন্দরবনে শুধু বাঘ থাকে না সিংহও থাকে"। এরকম নির্বোধ কথোপকথন অনেক রয়েছে।
৪। পোশাক বা কস্টিউমঃ এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন সিনেমা নির্মাণে। পোশাকে এবং মেকআপে যদি চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা না যায় তাহলে তো প্রথম দর্শনেই চরিত্রের মাহত্ত্য নষ্ট হয়ে যায়। খুব একশন বা দুঃখের মুহূর্তে যদি নায়কের ঠোটে লিপিস্টিক দিয়ে লাল দেখা যায় সেখানে দর্শকের অনুভুতি কি হবে তাতে আমার সন্দেহ রয়েছে। যারা পর্দার পিছনে কুশলীদের গুছিয়ে দেন তাদের সৃষ্টিশীলতা থাকতে হয় প্রচণ্ড। যদি নাও থাকে তাহলে থাকতে হয় পেশাদারি আচরন, যা কিনা অধিকাংশ সিনেমায় অনুপস্থিত।
৫। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানঃ এই সম্পর্কে ধারনা কম তবুও যতটুকু আচ করতে পারি তাহল সিনেমার কাহিনী, কুশলীসহ অন্যান্য সিনেমা তৈরির ব্যাপারে উদাসীনতা অধিকাংশ প্রযোজকদের। পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রযোজনার অভাব। শুধু নির্মাতার কথায় অর্থ লগ্নি করে লাভের আশায় থাকা প্রযোজকের সংখ্যাটা নেহায়ত কম নয়। কিন্তু অন্য বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকালে দেখা যাবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুল পুর সিনেমার প্রজেক্ট হাতে নেয় তারপর তারা নির্ধারণ করে কে হবেন নির্মাতা এবং কি হবে গল্প।
এখন হয়ত ভাবনা হতে পারে এসকল বিষয়ে কম বেশি সবাই অবহিত তবুও পরিবর্তনের ধারা এত শ্লথ কেন। আমার মতে দেশে আসলে কোন কিছুরই অভাব নেই বোঝাতে চাচ্ছি উপরিউল্লিখিত বিষয় সমূহ পরিবর্তন করে ভাল মানের সিনেমা তৈরি করা সম্ভব। শুধুমাত্র অপেশাদারি, অদক্ষ জনবলকে সরে দক্ষদের জায়গা করে দিতে হবে অথবা নিজেদের দক্ষ হিসাবে প্রমানিত করতে হবে। সমস্যাটা এখানেই। কারন তারা দক্ষ হবার চেষ্টা করবে না এবং দক্ষ ব্যক্তিকে কাজে নিবে না কিন্তু তারা টিকে থাকার জন্য চটকারিতা করে যাবে।
পরিশেষে আহব্বান করতে চাই, শোকের মাসকে পুঁজি করে আপনাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকুন। আর কর্তৃপক্ষের এখন সময় এসেছে এসকল চটকদারদের থেকে নিজেদের ভাবমূর্তি অখুন্ন্য রাখার কৌশল অবলম্বন করার। নচেত চটকদাররা দেশ এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দারাবে।
This was posted using Serey.io cross platform posting.